Home রাজনীতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে বটতলাকে গর্জে উঠতে হবে–ছাত্রলীগের সম্মেলনে ইনু

বৈষম্যের বিরুদ্ধে বটতলাকে গর্জে উঠতে হবে–ছাত্রলীগের সম্মেলনে ইনু

252

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (হা-ন) এর দুইদিনব্যাপী ২৯তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন শুরু হয়েছে। আজ ১৮ ডিসেম্বর শনিবার সকাল ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিক বটতলায় সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসাবে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, কার্যকরী সভাপতি এড. রবিউল আলম এবং প্রখ্যাত শিক্ষবিদ, অনুপ্রাণ বিজ্ঞানী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইউজিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি আহসান হাবীব শামীম, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রাশিদুল হক ননী এবং স্বাগতঃ বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক মাসুদ আহাম্মেদ। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুখলেছুর রহমান মুক্তাদির, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুর রহমান চুন্নু, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর্জা মোঃ আনোয়ারুল হক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শরিফুল কবির স্বপন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ সামছুল ইসলাম সুমন।

প্রধান অতিথির ভাষণে জনাব হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলা কেমন যেন অচেনা হয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন কর্মী হিসাবে বটতলায় আসলে মনে হয় এ যেন ছাত্রআন্দোলন ধ্বংসস্তুপ, পুরার্কীতি। আজকের বটতলা বোবা, নিরব। তেঁতুল হুজুর যখন বলে মেয়েদের ৫ম শ্রেণীর বেশি পড়ার দরকার নাই, বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজগুলো জ্বেনার হাটবাজার, তখন বটতলা গর্জে উঠেনি। রাজনৈতিক মোল্লারা যখন পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ পালনের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয় তখন বটতলা গর্জে উঠে না। হাসানুল হক ইনু বলেন, জাতি বোবা বটতলা, নিরব বটতলা দেখতে চায় না। জাতি চায় অতীতের মতই সকল অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে বটতলা প্রতিবাদী হবে, বটতলা গর্জে উঠবে। জনাব ইনু বলেন, বটতলার অর্জন স্বাধীনতা, স্বাধীন বাংলাদেশ, গণতন্ত্র। স্বাধীন বাংলাদেশের চিরশত্রু পাকিস্তানপন্থী রাজাকারী শক্তির বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে, গণতান্ত্রিক চেতনার সবচেয়ে বড় দুশমন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বটতলাকে গর্জে উঠতে হবে। জনাব ইনু বলেন, বটতলা তখনই নিরব থাকে, বোবা হয়ে যায় যখন ছাত্রসমাজ অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অসুন্দরের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস হারিয়ে ফেলে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ছাত্ররা আজ জনগণের কণ্ঠস্বর, জাতির বিবেক হতে চায় না, শুধু ডিগ্রীর মালিক হতে চায়। ছাত্রসংগঠনগুলো ছাত্রদের অধিকার আদায়, দেশের সংকটে অসহায় নিরুপায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বদলে রাজনৈতিক ক্ষমতার ক্ষুদে অংশীদার ও ভাগীদার হতে ব্যস্ত। ছাত্রসংগঠনগুলো পরিণত হয়েছে নেতা-নেত্রীদের জিন্দাবাদ বাহিনী, লাঠিয়াল বাহিনী, শিশু শ্রমিকে। শুধু ছাত্রসমাজই নয়, শিক্ষক সমাজও আজ বটতলার মত নিরব, বোবা। জনাব ইনু বলেন, বটতলার অর্জন স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের মূল চেতনার উপর আঘাতকারী দেশের শত্রু, গণতন্ত্রের শত্রু পাকিস্তানপন্থী রাজাকারী রাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, লুটপাট, গুন্ডাবাজী আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে বটতলাকে গর্জে উঠা ও ছাত্রসমাজকে প্রতিবাদী হবার আহ্বান জানান। জনাব ইনু নীতি-নৈতিকতা-মূল্যবোধ অবক্ষয় ও সাংস্কৃতিক সাম্প্রয়িকতার বিপরীতে আদর্শবাদের পুনর্জাগরণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতীয় পুনর্জাগরণ, বাঙালিয়ানার পুনর্জাগরণ ঘটাতে ছাত্রসমাজকে আবারও খাপ খোলা তরবারীর মত আগুয়ান হবার আহ্বান জানান।

উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে দুপুর ২ টায় সম্মেলনে যোগদানকারী কয়েক হাজার ছাত্রলীগ কর্মী ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা, সংগঠনের পতাকা হাতে একটি সুসজ্জিত বর্নাঢ্য র‌্যালি বের করে। র‌্যালিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সংলগ্ন এলাকার সড়কসমূহ প্রদক্ষিণ করে।

বিকাল ৫ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশন বসবে। কাউন্সিল অধিবেশনে সংগঠনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা কমিটির পক্ষ থেকে নির্ধারিত সংখ্যক কাউন্সিলরগণ অংশগ্রহণ করবেন। কাউন্সিল অধিবেশন পরদিন ১৯ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত চলবে। কাউন্সিল অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদকের খসড়া রিপোর্ট, ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রের উপর আনীত সংশোধনীসমূহের উপর আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গৃহিত হবে। কাউন্সিলের নির্বাচনী অধিবেশনে আগামী দুই বছরের জন্য সংগঠনের ৪৫ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচিত হবে।