Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস বুয়েটে ভবিষ্যৎ ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

বুয়েটে ভবিষ্যৎ ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

33

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভবিষ্যৎ ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের (আইডব্লিউএফএম) আয়োজনে শনিবার ১৩ মে বিকালে বুয়েটের কাউন্সিল ভবনে উক্ত কর্মশালায় বুয়েট আইডব্লিউএফএম সাবেক পরিচালক অধ্যপক ড. আইনুন নিশাতের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন একই ইনস্টিটিউটের অধ্যপক ড. মো. মনসুর রহমান। এছাড়া বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক পরিচালক জনাব মাহফুজুর রহমান, বুয়েটের পানি সম্পদ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মতিন, আইডব্লিউএফএম-এর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজাউর রহমান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন আইডব্লিউএফএম-এর পরিচালক অধাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, যমুনা নদীর ভবিষ্যৎ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখা গেছে যে, নদীটি জীবিকানির্বাহের নানা অপরিহার্য উপকরণ যেমন কৃষি, মৎস্য, ইত্যাদি আমাদেরকে সরবরাহ করে আসছে; পাশাপাশি প্রতিনিয়তই বন্যা এবং নদীভাঙনের মত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে আসছে। তাই, ১৯৬০ এর দশকে ব্রহ্মপুত্রের ডান তীরে “ব্রহ্মপুত্র রাইট এমব্যাঙ্কমেন্ট (বিআরই)” নামে মাটির তৈরি একটি প্রতিরক্ষা কাঠামো তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু, বিভিন্ন সময়ে এই প্রতিরক্ষা বাঁধেও ভাঙন পরিলক্ষিত হয়, যা প্রতিরোধ করার জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত¡াবধানে ভাঙনপ্রবন অংশ গুলোতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়। পরবর্তীতে, ১৯৮৭-৮৮ এর ভয়াবহ বন্যার পর যমুনা নদীর ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যান (এফএপি) এর অধীনে একটি মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়, যেখানে একটি নির্দিষ্ট দুরত্ব পরপর যমুনা নদীকে স্থিতিশীল করে দেওয়া এবং মধ্যবর্তী স্থানগুলোতে নদীভাঙন হতে দেওয়ার চিন্তা করা হয়েছিল। উপরন্তু, মহপরিকল্পনাটি একটি অসমাপ্ত প্রকল্প হিসেবে থেকে যায়। পররর্তীতে “রিভার করিডোর” নামে একটি ধারণার কথা চিন্তা করা হয়, যেখানে নদীর জীববৈচিত্র্য ও জীবনযাপনের উপকরণগূলোর সর্বোত্তম ব্যবহার, পাশাপাশি বন্যা ও নদীভাঙনের ক্ষয়ক্ষতিকে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়। এই “রিভার করিডোর” ধারণার দুটি অংশ যথাঃ ১) নদীর প্রশস্ততা কমিয়ে এনে প্রবাহ বজায় রেখে ব্রেইডেড প্ল্যানফর্ম থেকে মিন্ডারিং প্ল্যানফর্মে পরিবর্তন করা, এবং ২) করিডোর সকুচিত না করে নদীকে স্থায়ীভাবে স্থিতিশীল করে প্রাকৃতিক প্রবাহ বজায় রাখা। এ বিষয়ে কিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে এই ধারণা গুলো বাস্তবায়ন করা হলে তা কিভাবে সময়ের সাথে সাথে এর নিজস্ব জীববৈচিত্র্য ও প্ল্যানফর্মের পরিবর্তন ঘটায় তা নিউমেরিকাল মডেলিং এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে যে, প্রশস্ততা কমিয়ে এনে করিডোর স্থাপন করতে গেলে নদীর তলদেশের গভীরতা অনেক বেড়ে যায় (প্রায় ৪০ মিটারেরও বেশি) এবং নদীর বাইরের দিকে (মিন্ডারিং এর আউটার বেন্ড) প্রবাহের গতিও অনেক বেশি থাকে (প্রায় ৪.৫ মিটার/সেকেন্ডের মত)। এরকম পরিস্থিতিতে নদী ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম নানা নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। চরগুলোকে স্থিতিশীল করতে গেলে দেখা যায় যে, দুটি স্থিতিশীল চরের মধ্যবর্তী অংশে পলি জমা হয়ে বড় চরের সৃষ্টি হয়, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০ কিলোমিটারের মত এবং সৃষ্ট নতুন চরের পাশ দিয়ে যে চ্যানেল তৈরি হয়, তার প্রবাহের গতিও প্রায় ৩.৫ মিটার/সেকেন্ডের মত হয়। এক্ষেত্রে, নদী তার জীববৈচিত্র্যের বৈশিষ্ট্যগুলো হারিয়ে ফেলবে এবং জীবনধারণের অপরিহার্য উপাদান সমুহের লভ্যতা হারিয়ে ফেলবে। অন্যদিকে, নদীর প্রাকৃতিক অবকাঠামো ও বৈশিষ্ট্য অপরিবির্তিত রেখে ব্যবস্থাপনা করতে গেলে দেখা যায় তা গভীরতা এবং প্রবাহের গতিতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না,উপরন্তু গভীরতা ও প্রবাহের গতির তারতম্য ব্যবস্থাপনাযোগ্য পর্যায়ে থাকবে।
এরূপ ফলাফল থেকে সুপারিশ করা যায় যে, নদীর আকার-আকৃতি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলো পরিবর্তন না করা। এতে করে নদীর জীববৈচিত্র্যেও প্রভাব পড়বে না। উপরন্তু, অবস্থানভেদে উদাহরণস্বরূপ, বড় চ্যানেল-ছোট চর, ছোট চ্যানেল-বড় চর ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন জীববৈচিত্র্য স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে অপরিবর্তিত থাকবে। যেহেতু নদীর আকার-আকৃতি ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলো এবং সেই সাথে গড়ে ওঠা জীববৈচিত্র্য ও লভ্য জীবনযাপনের অপরিহার্য উপকরণসমূহ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক, সেহেতু, প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যাবলীকে অপরিবর্তিত রেখে ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা গেলে সর্বোত্তম ফলাফল অর্জন করা যাবে।