Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস বিনা বেতনে চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন শিক্ষকরা

বিনা বেতনে চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন শিক্ষকরা

34

ডেস্ক রিপোর্ট: ১১৭টি কলেজে আবেদন করে শেষ পর্যন্ত একটি নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে ‘জ’ আদ্যক্ষরের এক ব্যক্তিকে চাকরি দিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। পরে ওই প্রার্থী সংশ্লিষ্ট নওগাঁর মান্দা উপজেলার মফিউদ্দিন মোল্লা কলেজে যোগদান করতে গেলে বলা হয়, ‘যোগদান করলেও কোন বেতন-ভাতা দেওয়া যাবে না। কারণ কলেজের আয় নেই।’

এই পরিস্থিতিতে চাকরিতে যোগ দিবেন কি না তা নিয়ে দোলাচালে রয়েছেন শিক্ষক হতে যাওয়া এই প্রাথী‌র্। ইতিমধ্যে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি প্রার্থীকে নন-এমপিও পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য কলেজগুলোতে পাঠানো হয়েছে। যারা যোগ দিয়েছেন তাদের বেতন পুরোটাই অনিশ্চয়তায়। এছাড়া আরো আড়াই হাজার শিক্ষককে নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

জানা গেছে, নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়ার পর বেশিরভাগই কোন বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। বেতন-ভাতা না দেওয়ায় অনেকেই চাকরি ছেড়ে চলে আসছেন। স্কুল-কলেজের প্রধানরা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানের আয় নেই। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সামান্যই টিউশন ফি আদায় হয়। আবার অনেকে শিক্ষার্থীরই দেয় না। শিক্ষকদের বেতন দিবো কীভাবে।’ তাহলে প্রশ্ন উঠছে, নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার দায়িত্ব এনটিআরসিএ কেন নিলো?

নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বক্তব্য, নিয়ম অনুযায়ী স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা নেই। এ কারণে বাধ্য হয়ে এনটিআরসিএতে শূন্য পদের তালিকা পাঠাই। এনটিআরসিএ-ই এখন নিয়োগ দেয়।

শিক্ষক হতে চাওয়া জামাল নামের প্রার্থীর বক্তব্য, ২০১৫ সালে বিজ্ঞপ্তির আলোকে ১২তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হই। তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করি একশ’র বেশি কলেজে। এতে আমাকে একটি নন-এমপিও কলেজে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। ওই কলেজটিতে বেতন দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। এভাবে আজিজুল ইসলাম, রহমত আলী, রফিকুল ইসলাম, আমিনুর, সালমান নামের একাধিক প্রার্থী এই প্রতিনিধির কাছে তাদের কষ্টের কথা জানিয়েছেন। জানিয়েছেন, বেতন-ভাতা না পেয়ে কি দুর্বিষহ জীবন চলছে তাদের।

আজিজুল ইসলাম নামের এক শিক্ষক বলছেন, এমপিও, নন-এমপিও এবং সৃষ্ট পদ এক করে ফেলায় এই সমস্যার মূল কারণ। বেতনবিহীন পদে চাকরি দেওয়ার সুপারিশ একটি লজ্জাজনক ঘটনা। অনেক পথ পাড়ি দিয়েই এই অবস্থানে এসে পৌঁছান একজন শিক্ষক। তাঁকে কীভাবে এনটিআরসিএ বিনা বেতনে নিয়োগের সুপারিশ করতে পারেন, প্রশ্ন তার।

আমিরুল নামের এক প্রাথী‌র্ বলেন, আমার বাড়ি রাজবাড়িতে। কিন্তু আমাকে একটি নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ। যেটি আমার বাড়ি থেকে কয়েকশ মাইল দূরে। বেতনের তো অনিশ্চয়তা আছেই।

শিক্ষকরা বলছেন, শূন্য পদের চেয়ে বেশি প্রার্থীকে উত্তীর্ণ করার কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। শান্ত নামে এক শিক্ষক জানান, ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সময় অর্থনীতিতে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদ ছিল ৯টি। অথচ এই পদে ৪৫ জনকে উত্তীর্ণ করেছে এনটিআরসিএ। ফলে বাকি শিক্ষকদের নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। সব দায় নিতে হবে এনটিআরসিএ-কেই।

প্রসঙ্গত, ২০০৫ সাল থেকে বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিবন্ধন পরীক্ষার আয়োজন করছে এনটিআরসিএ। এ পর্যন্ত মোট ১৬টি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা হয়েছে। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা এনটিআরসিএ আয়োজন করলেও নিয়োগ চূড়ান্ত করছিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ। এই নিয়োগ নিয়ে নানা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ২০১৫ সাল থেকে এনটিআরসিএকে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শিক্ষক চাহিদা পাঠানো হয় এনটিআরসিএতে। সেখান থেকে নির্বাচিত বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে নিয়োগ দেওয়ার জন্য পাঠানো হয় প্রতিষ্ঠানে। সে তালিকা থেকেই শিক্ষক নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ এখন শুধু শিক্ষকের নিয়োগপত্র জারি করে।এ পর্যন্ত তিনটি গণবিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে তিন দফায় শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে এনটিআরসিএ।

জানতে চাইলে এনটিআরসিএর সদস্য এ বি এম শওকত ইকবাল শাহীন ইত্তেফাককে বলেন, আমরা উভয় সংকটে আছি। সমস্যাগুলো আমরাও জানি। সরকারের সিদ্ধান্তের কারণেই নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানেও এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তবে আমরা সরকারের কাছে এই সমস্যাটি তুলে ধরবো। যাতে আগামীতে এভাবে নন-এমপিও পদে নিয়োগ দিতে না হয়।

এই কর্মকর্তা আরো বলেন, নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান যদি শিক্ষকের চাহিদা দেয় তাহলে সেখানে এনটিআরসিএ শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ পাঠাবে। আর নীতিমালা অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেই ওই শিক্ষকদের বেতন-ভাতার দায়িত্ব নিতে হবে। যদি প্রতিষ্ঠানের আয় না থাকে তাহলে কীভাবে বেতন-ভাতা দেবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাহলে চাহিদা দেয় কেন? চাহিদা না দিলেই তো হয়।’ -ইত্তেফাক