Home জাতীয় দুর্যোগ অধিদপ্তরের ভুলে বিপদে ১০ হাজার দিনমজুর

দুর্যোগ অধিদপ্তরের ভুলে বিপদে ১০ হাজার দিনমজুর

27

৮ কোটির জায়গায় ৮২ কোটি টাকা বিতরণ

ডেস্ক রিপোর্ট: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ভুলে ময়মনসিংহের তিনটি উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ হাজার দিনমজুর চরম বিপাকে পড়েছেন। ডেটা এন্ট্রির বিভ্রাটে তাদের মোবাইল অ্যাকাউন্টে প্রাপ্য মজুুরির চেয়ে প্রায় ১০ গুণ টাকা চলে এসেছে। অনেকে সেই টাকা ক্যাশআউটও করে ফেলেছেন। শ্রমিকদের কাছ থেকে বিতরণ হওয়া বাড়তি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করছে স্থানীয় প্রশাসন। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মজুরদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। আর এই সবকিছুই ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ডেটা এন্ট্রির ভুলে।খবর ইত্তেফাক

কেবল ময়মনসিংহে নয়, এ ঘটনা ঘটেছে দেশের ছয়টি জেলার ১০ উপজেলায়। সম্প্রতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় ‘অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি)’-এর দ্বিতীয় পর্যায়ে এই ১০ উপজেলা শ্রম মজুরি গভর্নমেন্ট টু পারসন (জিটুপি) পদ্ধতিতে পরিশোধ করা হয়। এই ১০ উপজেলায় মোট ৯ হাজার ৮৪৬ জন শ্রমিকের বিপরীতে চাহিদা এসেছিল ছিল ৮ কোটি ৫৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। সরকারের দিক থেকে প্রতি ১ হাজারে ৭ টাকা ক্যাশআউট চার্জ যোগ করার পর এই অঙ্ক দাঁড়ায় ৮ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৪৭২ টাকা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ভুলের কারণে শ্রমিকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ৮২ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার ৪২৭ টাকা। যদিও সবার অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।
চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপচািলক মো. মিজানুর রহমানের স্বাক্ষরে ৯ হাজার ৮৪৬ জন শ্রমিকের জন্য ৮২ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার ৪২৭ টাকার কথা উল্লেখ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেটি দৈনিক ইত্তেফাকের হাতে রয়েছে। পরে একই অঙ্ক উল্লেখ করে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধিন সংস্থাগুলোর কাছে টাকা ছাড় করার জন্য চিঠি পায়।

জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘অটো ডিভাইসে ডেসিমল পয়েন্ট (দশমিক) ভুলে উঠে গেছে। সেজন্য অতিরিক্ত টাকা উপকারভোগীদের কাছে চলে গেছে। অতিরিক্ত টাকার ৮৫ শতাংশই মাঠ পর্যায়ে তোলা হয়ে গেছে। ১০ উপজেলায় এ সমস্যা হয়েছে। এই টাকা সমন্বয় করা হবে। ইউএনওরা এই টাকা তুলে আবার জমা দিয়ে দেবেন। সব টাকা ফেরত পাওয়ার পর শিগিগরই সবার অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমানের স্বাক্ষর করা চিঠিতে ৯ হাজার ৮৪৬ জন কর্মীকে শ্রম মজুরি হিসেবে ৮২ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার ৪২৭ টাকা বিতরণের তালিকা চূড়ান্ত করে তা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. কামরুল হাসানের প্রতিস্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হয়। তারও আগে কয়েক ধাপে তৈরি হয় তালিকা। এই তালিকা ও চিঠিই প্রমাণ করে যে, অধিদপ্তর থেকেই ১০ গুণ অর্থ ছাড়ের জন্য বলা হয়েছে।

তবে সূত্র নিশ্চিত করছে, ডেটা এন্ট্রির গড়বড়ের কারণেই সরকারের এত বেশি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের একাধিক উপপরিচালক ও পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, যে এক্সেল ফাইলে যে ডেটা এন্ট্রি দেওয়া হয়, সেখানে দশমিকের পরেও দুই ঘর ছিল। কিন্তু যে এক্সসেল ফাইলসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সরকারের অনুমোদনের জন্য তোলে, সেখানে কোনো দশমিকের ঘর ছিল না। ফলে যে শ্রমিকের ২,৮১৯ দশমিক ৬ টাকা পাওয়ার কথা, তিনি পেয়ে গেছেন ২৮ হাজার ১৯৬ টাকা।

নগদের পাবলিক কমিউনিকেশন্স বিভাগের প্রধান জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের সরকারি বিতরণে কোনো মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানই বিতরণ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট থাকে না। ফলে কাকে কত টাকা দেওয়া হচ্ছে, তা প্রতিষ্ঠানটি আগে জানতে পারে না। বিতরণ সম্পন্ন হলে তারা এসব তথ্য জানতে পারে। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই ভুলের কোনো পর্যায়েই আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। প্রয়োজনে সরকার উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি করে বিষয়টি যাচাই করতে পারে।’ নগদ একই সঙ্গেও বলছে যে, অনেক বেশি টাকা বরাদ্দের ফাইলে মহাপরিচালকের স্বাক্ষর রয়েছে ফলে তিনিই বলতে পারবেন কোথায় কীভাবে টাকার অঙ্ক এতো বেশি হয়েছে।