Home মতামত বিদ্যমান শোষণমূলক ব্যবস্থার মধ্যে প্রলেতারিয়েতের সত্যিকার অবস্থাটা কী?

বিদ্যমান শোষণমূলক ব্যবস্থার মধ্যে প্রলেতারিয়েতের সত্যিকার অবস্থাটা কী?

45

সৈয়দ আমিরুজ্জামান:

সভ্য দুনিয়ার দেশে দেশে সর্বত্র বুর্জোয়া বিজ্ঞানের (সরকারী এবং উদারনৈতিক উভয় প্রকার) পক্ষ থেকে কার্ল মার্কসের মতবাদের প্রতি চূড়ান্ত শত্রুতা ও আক্রোশ দেখা যায়; মার্কসবাদকে তারা দেখে একধরনের ‘ক্ষতিকর গোষ্ঠী’ হিসেবে। অবশ্যই অন্য মনোভাব আশা করা বৃথা, কেননা শ্রেণিসংগ্রামের ওপর গড়ে ওঠা সমাজে ‘নিরপেক্ষ’ সমাজবিজ্ঞানের অস্তিত্ব অসম্ভব। সবরকমের সরকারী ও উদারনৈতিক বিজ্ঞানই কোনো না কোনোভাবে মজুরি-দাসত্বের সমর্থন করে থাকে, আর সে মজুরি-দাসত্বের বিরুদ্ধে ক্ষমাহীন সংগ্রাম ঘোষণা করেছে মার্কসবাদ। পুঁজির মুনাফা কমিয়ে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো উচিত নয় কি- এই প্রশ্নে মিল মালিকদের কাছ থেকে নিরপেক্ষতা আশা করা, আর মজুরি-দাসত্বের সমাজে বিজ্ঞানের কাছ থেকে নিরপেক্ষতা আশা করা সমান বাতুলতা।
… … কার্ল মার্কসের সমগ্র প্রতিভাটাই এইখানে যে মানবসমাজের অগ্রণী ভাবনায় যেসব জিজ্ঞাসা আগেই দেখা দিয়েছিল তিনি তারই জবাব দিয়েছেন। তাঁর মতবাদের উদ্ভব হয়েছে দর্শন, অর্থশাস্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের মহাচার্যেরা যে শিক্ষা দান করেছিলেন, তারই প্রত্যক্ষ ও অব্যবহিত অনুবর্তন হিসেবে।
কার্ল মার্কসের মতবাদ সর্বশক্তিমান, কারণ তা সত্য। এ মতবাদ সুসম্পূর্ণ ও সুসমঞ্জস, এর কাছ থেকে লোকে একটা সামগ্রিক বিশ্বদৃষ্টি লাভ করে যা কোনোরকম কুসংস্কার, প্রতিক্রিয়া অথবা বুর্জোয়া জোয়ালের কোনো রূপ সমর্থনের সঙ্গে আপোস করে না। উনিশ শতকের জার্মান দর্শন, ইংরেজী অর্থশাস্ত্র এবং ফরাসী সমাজতন্ত্র রূপে মানবজাতির যা শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি তার ন্যায়সঙ্গত উত্তরাধিকারী হল মার্কসবাদ।
মার্কসবাদের এই তিনটি উৎস এবং সেই সঙ্গে তার তিনটি অঙ্গ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক।
১. মার্কসবাদের দর্শন হল বস্তুবাদ। ইউরোপের সমগ্র আধুনিক ইতিহাস ধরে এবং বিশেষ করে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে, ফ্রান্সে যখন সবরকমের মধ্যযুগীয় জঞ্জালের বিরুদ্ধে, প্রতিষ্ঠান ও ধ্যানধারণায় নিহিত ভূমিদাস প্রথার বিরুদ্ধে বদ্ধপরিকর সংগ্রাম জ্বলে উঠেছিল, তখন থেকে বস্তুবাদই দেখা দিয়েছে একমাত্র সঙ্গতিপরায়ন দর্শন হিসেবে, যা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সমস্ত শিক্ষায় বিশ্বস্ত এবং কুসংস্কার, ভণ্ডামি প্রভৃতির শত্রু। গণতন্ত্রের শত্রুরা তাই বস্তুবাদকে ‘খণ্ডন করার’ জন্য, তাকে ধূলিসাৎ ও ধিক্কৃত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে এবং সমর্থন করেছে নানা ধরনের দার্শনিক ভাববাদ।
কার্ল মার্কস ও ফ্রেডারিখ এঙ্গেলস অতি দৃঢ়তার সঙ্গে দার্শনিক বস্তুবাদকে সমর্থন করেছেন এবং এই ভিত্তি থেকে যেকোনো বিচ্যুতিই যে কী দারুণ ভুল তা বারবার ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন। তাঁদের মতামত সবচেয়ে পরিষ্কার করে এবং বিশদে ব্যক্ত হয়েছে এঙ্গেলসের ‘ল্যুডভিগ ফয়েরবাখ’ এবং ‘অ্যান্টি-ড্যুরিং’ রচনায়। ‘কমিউনিস্ট ইশতেহার’-এর মতো এ বই দু’খানিও প্রত্যেকটি সচেতন শ্রমিকের নিত্যপাঠ্য।
অষ্টাদশ শতাব্দীর বস্তুবাদেই কিন্তু মার্কস থেমে যাননি, দর্শনকে তিনি অগ্রসর করে গেছেন। এ দর্শনকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন জার্মান দর্শনের সম্পদ দিয়ে, বিশেষ করে হেগেলীয় তন্ত্র দিয়ে, যা আবার পৌঁছিয়েছে ফয়েরবাখের বস্তুবাদে। এই সব সম্পদের মধ্যে প্রধান হল দ্বান্দ্বিকতা অর্থাৎ বিকাশের পূর্ণতম, গভীরতম, একদেশদর্শিতাবর্জিত তত্ত্ব, যে মনুষ্যজ্ঞানে আমরা পাই নিরন্তর বিকাশমান পদার্থের প্রতিফলন তার আপেক্ষিকতার তত্ত্ব। জরাজীর্ণ ও পুরনো ভাববাদের ‘নব নব’ প্রত্যাবর্তনের সমস্ত বুর্জোয়া দার্শনিক শিক্ষা সত্ত্বেও- রেডিয়ম, ইলেকট্রন, মৌলিক পদার্থের রূপান্তর, প্রকৃতিবিজ্ঞানের আধুনিকতম আবিষ্কার- মার্কসের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের চমৎকার প্রমাণ।
দার্শনিক বস্তবাদকে গভীরতর ও পরিবিকশিত করে মার্কস তাকে সম্পূর্ণতা দান করেন, প্রকৃতি বিষয়ক জ্ঞানকে প্রসারিত করেন মানবসমাজের জ্ঞানে। বৈজ্ঞানিক চিন্তার সর্বশ্রেষ্ঠ মহাকীর্তি হল মার্কসের ঐতিহাসিক বস্তুবাদ। ইতিহাস ও রাজনীতি বিষয়ক মতামতে যে বিশৃঙ্খলা ও খামখেয়ালের রাজত্ব এযাবৎ চলে আসছিল তার বদলে দেখা দিল এক আশ্চর্য রকমের সর্বাঙ্গীণ ও সুসমঞ্জস বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, যা দেখাল কী করে উৎপাদন-শক্তিসমূহের বিকাশের ফলে আমাদের সমাজজীবনে একটি ব্যবস্থা থেকে উদ্ভব হয় উচ্চতর ব্যবস্থার- দৃষ্টান্তস্বরূপ, কী করে সামন্ততন্ত্র থেকে বিকশিত হয় পুঁজিবাদ।
মানুষের জ্ঞান যেমন মানুষের অস্তিত্ব-নিরপেক্ষ প্রাকৃতিক জগতের অর্থাৎ বিকাশমান পদার্থের প্রতিফলন, তেমনি সমাজের অর্থনেতিক ব্যবস্থার প্রতিফলনই হল মানুষের সামাজিক জ্ঞান (অর্থাৎ দার্শনিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ইত্যাদি বিভিন্ন মতামত ও তত্ত্ব)। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলি হল অর্থনৈতিক বনিয়াদের উপরিকাঠামো। দৃষ্টান্তস্বরূপ দেখা যাবে যে, আধুনিক ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির রাজনৈতিক রূপ যত বিভিন্ন হোক, তার কাজ হল প্রলেতারিয়েতের ওপর বুর্জোয়া প্রভুত্ব সংহত করা।
মার্কসের দর্শন হল সুসম্পূর্ণ দার্শনিক বস্তুবাদ- তা থেকে মানবসমাজ এবং বিশেষ করে শ্রমিকশ্রেণি তার জ্ঞানাঞ্জন-শলাকা লাভ করেছে।
২. অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই হল বনিয়াদ, তার ওপরেই রাজনৈতিক উপরিকাঠামো দণ্ডায়মান- একথা উপলব্ধির পর মার্কস তাঁর সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেন এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অধ্যয়নে। মার্কসের প্রধান রচনা ‘পুঁজি’-তে আধুনিক, অর্থাৎ পুঁজিবাদী সমাজের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পর্যালোচিত হয়েছে। মার্কসের পূর্বেকার চিরায়ত অর্থশাস্ত্রের উদ্ভব হয়েছিল পুঁজিবাদী দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিকশিত দেশে- ইংলন্ডে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করে অ্যাডাম স্মিথ ও ডেভিড রিকার্ডো শ্রমের মূল্য-তত্ত্বের সূত্রপাত করেন। মার্কস তাঁদের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যান। তিনি এ তত্ত্বকে আমূলরূপে সুসিদ্ধ ও সুসঙ্গতরূপে বিকশিত করেন। তিনি দেখান যে, পণ্যের উৎপাদনে সামাজিকভাবে আবশ্যক যে শ্রমসময় ব্যয় হয়েছে, তা দিয়েই তার মূল্য নির্ধারিত হয়।
বুর্জোয়া অর্থনীতিবিদেরা যেখানে দেখছিলেন দ্রব্যের সঙ্গে দ্রব্যের সম্পর্ক (এক পণ্যের সঙ্গে অন্য পণ্যের বিনিময়), মার্কস সেখানে উদ্ঘাটিত করলেন মানুষে মানুষে সম্পর্কে। পণ্যবিনিময়ের মধ্যে যোগাযোগ। মুদ্রার অর্থ হল সে যোগসূত্র ক্রমেই ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, বিভিন্ন উৎপাদকদের গোটা অর্থনৈতিক জীবন অবিচ্ছিন্ন হয়ে সংযুক্ত হচ্ছে একটি অখন্ড সমগ্রতায়। পুঁজির অর্থ এই যোগসূত্রের আরো বিকাশ: মানুষের শ্রমশক্তি পরিণত হচ্ছে পণ্যে। জমি, কলকারখানা ও শ্রমের হাতিয়ারপাতির মালিকের কাছে মজুরি-শ্রমিক তার শ্রমশক্তি বিক্রি করে। শ্রমদিনের এক অংশ সে খাটে তার সপরিবার ভরণপোষণের খরচা তোলার জন্য (মজুরি), বাকি অংশটা সে খাটে বিনামজুরিতে, সৃষ্টি করে পুঁজিপতির জন্য বাড়তি মূল্য, পুঁজিপতি শ্রেণির মুনাফার উৎস ও সম্পদের উৎস।
মার্কসের অর্থনৈতিক তত্ত্বের মূলকথা হল এই বাড়তি মূল্যের তত্ত্বটা। শ্রমিকের মেহনতে গড়া এই পুঁজি শ্রমিকদের পিষ্ট করে, ক্ষুদে মালিকদের ধ্বংস করে এবং সৃষ্টি করে বেকার বাহিনীর। শিল্পের ক্ষেত্রে বৃহদাকার উৎপাদনের জয়যাত্রা অবিলম্বেই চোখে পড়ে, কিন্তু কৃষির ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার দেখা যাবে: বৃহদাকার পুঁজিবাদী কৃষির প্রাধান্য বাড়ছে, যন্ত্রপাতির নিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, কৃষকের অর্থনীতি এসে মুদ্রা পুঁজির ফাঁসে আটকে যাচ্ছে, তারপর নিজের পশ্চাৎপদ টেকনিকের বোঝায় ভেঙ্গে পড়ছে ও ধ্বংস পাচ্ছে। কৃষিতে ক্ষুদ্রাকার উৎপাদনের যে ভাঙ্গন তার রূপগুলো অন্যরকম, কিন্তু ভাঙনটা তর্কাতীত সত্য।
ক্ষুদ্রাকার উৎপাদনকে ধ্বংস করে পুঁজি শ্রম-উৎপাদনশীলতার বৃদ্ধি ঘটায় এবং বড় বড় পুঁজিপতিদের সঙ্ঘগুলির একচেটিয়া প্রতিষ্ঠা সৃষ্টি করে। উৎপাদনটাও উত্তরোত্তর সামাজিক হতে থাকে- লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি মজুর বাঁধা পড়ে একটি প্রণালীবদ্ধ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়- অথচ যৌথ শ্রমের ফল আত্মাসাৎ করে মুষ্টিমেয় পুঁজিপতি। বৃদ্ধি পায় উৎপাদনের নৈরাজ্য, সংকট, বাজারের জন্য ক্ষিপ্ত প্রতিযোগিতা, এবং ব্যাপক জনসাধারণের জীবনধারণের অনিশ্চয়তা।
পুঁজির কাছে শ্রমিকদের পরাধীনতা বাড়িয়ে তুলে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সম্মিলিত শ্রমের মহাশক্তি গড়ে তোলে।
পণ্য অর্থনীতির ভ্রূণাবস্থা থেকে, সরল বিনিময় থেকে শুরু করে তার সর্বোচ্চ রূপ বৃহদাকার উৎপাদন পর্যন্ত মার্কস পুঁজিবাদের বিকাশ পর্যালোচনা করেছেন।
এবং নতুন পুরনো সবরকম পুঁজিবাদী দেশের অভিজ্ঞতায় মার্কসের এ মতবাদের সঠিকতা বছরের পর বছর বেশি বেশি মজুরের কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠছে।
সারা দুনিয়ায় পুঁজিবাদের জয় হয়েছে, কিন্তু এ জয় শুধু পুঁজির ওপর শ্রমের বিজয়লাভের পূর্বাভাস।
৩. ভূমিদাস প্রথার পতনের পর ঈশ্বরের দুনিয়ায় ‘মুক্ত’ পুঁজিবাদী সমাজের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গেই একথা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে, মেহনতী মানুষের ওপর পীড়ন ও শোষণের একটি নতুন ব্যবস্থাই হল এ মুক্তির অর্থ। সে পীড়নের প্রতিফলন ও প্রতিবাদ স্বরূপ নানাবিধ সমাজতান্ত্রিক মতবাদ অবিলম্বে দেখা দিতে শুরু করে। কিন্তু আদিম সমাজতন্ত্র ছিল ইউটোপীয় সমাজতন্ত্র। পুঁজিবাদী সমাজের তা সমালোচনা করেছে, নিন্দা করেছে, অভিশাপ দিয়েছে, স্বপ্ন দেখেছে তার বিলুপ্তির, উন্নততর এক ব্যবস্থার কল্পনায় মেতেছে, আর ধনীদের বোঝাতে চেয়েছে শোষণ নীতিবিগর্হিত কাজ।
কিন্তু সত্যিকারের উপায় দেখাতে ইউটোপীয় সমাজতন্ত্র পারেনি। পুঁজিবাদের আমলে মজুরি-দাসত্বের সারমর্ম কী তা সে বোঝাতে পারেনি, পুঁজিবাদের বিকাশের নিয়মগুলি কী তাও সে আবিষ্কার করতে পারেনি, খুঁজে পায়নি সেই সামাজিক শক্তি বা নতুন সমাজের নির্মাতা হবার ক্ষমতা ধরে।
ইতিমধ্যে সামন্ততন্ত্র, ভূমিদাসত্বের পতনের সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপের সর্বত্র এবং বিশেষ করে ফ্রান্সে যেসব উত্তাল বিপ্লব শুরু হয়ে গিয়েছিল, তা থেকে উত্তরোত্তর পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, শ্রেণীসমূহের সংগ্রামই হল সমস্ত বিকাশের ভিত্তি ও চালিকাশক্তি।
মরিয়া প্রতিবন্ধকতা ছাড়া ভূমিদাস-মালিক শ্রেণির ওপর রাজনৈতিক স্বাধীনতার একটি বিজয়লাভও সম্ভব হয়নি। পুঁজিবাদী সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে মরণপণ সংগ্রাম বিনা কোনো পুঁজিবাদী দেশই ন্যূনাধিক মুক্ত ও গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠেনি।
মার্কসের প্রতিভা এইখানে যে এ থেকে তিনি সেই সিদ্ধান্তে উপনীত হন ও তাকে সুসঙ্গতরূপে বিকশিত করেন, যা পাওয়া যায় বিশ্বইতিহাসের শিক্ষা থেকে। সে সিদ্ধান্ত হর শ্রেণিসংগ্রামের মতবাদ।
যেকোনো নৈতিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক বচন, ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতির পেছনে কোনো না কোনো শ্রেণির স্বার্থ আবিষ্কার করতে না শেখা পর্যন্ত লোকে রাজনীতির ক্ষেত্রে চিরকাল প্রতারণা ও আত্মপ্রতারণার নির্বোধ বলি হয়ে ছিল এবং চিরকাল তাই থাকবে। পুরনো ব্যবস্থার রক্ষকদের কাছে সংস্কার ও উন্নয়নের প্রবক্তারা সর্বদাই বোকা বনবে যদি তারা একথা না বোঝে যে, যত অসভ্য ও জরাজীর্ণ মনে হোক না কেন, প্রত্যেকটি পুরনো প্রতিষ্ঠানই টিকে আছে কোনো না কোনো শাসক শ্রেণির শক্তির জোরে। এবং এই সবশ্রেণির প্রতিরোধ চূর্ণ করার শুধু একটি উপায় আছে: যে শক্তি পুরনোর উচ্ছেদ ও নতুনকে সৃষ্টি করতে পারে- এবং নিজের সামাজিক অবস্থানহেতু যা তাকে করতেই হবে- তেমন সব শক্তিকে আমাদের চারপাশের সমাজের মধ্যে থেকেই আবিষ্কার করে তাকে দীক্ষিত ও সংগ্রামের জন্য সংগঠিত করে তোলে।
যে মানসিক দাসত্বের মধ্যে নিপীড়িত শ্রেণিগুলির সকলে এতদিন বাঁধা পড়ে ছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসার পথ প্রলেতারিয়েত পেয়েছে একমাত্র মার্কসের দার্শনিক বস্তুবাদ থেকে। একমাত্র মার্কসের অর্থনৈতিক তত্ত্বেই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে সাধারণ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে প্রলেতারিয়েতের সত্যিকার অবস্থাটা কী?
-লেখক: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।