Home জাতীয় বিজয়নগরে নৌ দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে মাঠে তদন্ত কমিটি

বিজয়নগরে নৌ দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে মাঠে তদন্ত কমিটি

28

ব্রাহ্মণবাড়িযা প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে লইসকা বিলে দুই বাল্কহেডের সঙ্গে ইঞ্জিনচালিত যাত্রীবাহী নৌকার সংঘর্ষে ২৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ করছে।
এদিকে পাঁচ দিনের মাথায় দুর্ঘটনা কবলিত নৌকার মাঝি ও বেঁচে যাওয়া যাত্রীসহ এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত ৩০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে কমিটির সদস্যরা। তবে প্রাথমিক তদন্তে দুর্ঘটনাকবলিত নৌকার মাঝিকেই দুষছেন বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা। তদন্ত কমিটির কাছে এ সংক্রান্ত বিষয়ে একাধিক যাত্রী সাক্ষ্য দিয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রুহুল আমিনের (প্রদান) নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির অপর সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন রেজা ও ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম। নৌ দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী জামাল মিয়া সেই দিন সাংবাদিকদের জানান, তার বাড়ি হবিগঞ্জে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়ায় বসবাস করেন। ঘটনার দিন বিজয়নগর উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামে ব্যবসায়ীক কাজে গিয়েছিলেন। প্রয়োজনীয় কাজ শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চম্পকনগর ঘাট থেকে তিনি নৌকায় উঠেন।
তিনি জানান, তিনি নৌকার উপরের অংশে ছিলেন। দূর থেকে দুটি বড় আঁকারের নৌকা (বাল্কহেড) আসতে দেখে নৌকার মাঝিকে ডান পাশ দিয়ে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু মাঝি সেটি আমলে না নিয়ে তাদেরকে চুপ থাকার পরামর্শ দিয়ে বাম পাশ দিয়ে যায়। এসময় প্রথমে একটি বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। পরে এর পেছনে থাকা অপর একটি বড় নৌকা (বাল্বহেড) এসে বালুবাহী নৌকার সঙ্গে ধাক্কা দেয়। তখন যাত্রীবাহী নৌকাটিতে যাত্রী ধারণের ঠাঁই ছিল না। ট্রলারের মাঝির ভুলের কারণেই এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
নৌ দুর্ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত কমিটির সদস্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোজাম্মেল রেজা জানান, “বিজয়নগরে নৌ-দুর্ঘটনার আজ পঞ্চম দিন। এখন পর্যন্ত বেঁচে যাওয়া যাত্রীসহ ৩০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছি। সব সাক্ষীর দেওয়া তথ্য-উপাত্ত মিলিয়ে নৌ দুর্ঘটনা প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করা হবে। দুর্ঘটনার একাধিক কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।”
নৌ দুর্ঘটনা সম্পর্কে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রুহুল আমিন বলেন, “নৌ দুর্ঘটনার একাধিক বিষয়ের ওপর তদন্ত করছি। বেঁচে যাওয়া যাত্রী ছাড়াও বিজয়নগরের চম্পকনগর ঘাট থেকে ছেড়ে আসা ঘাটের একাধিক সাক্ষীর সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। এর মধ্যে একজন মুড়িওয়ালা (নাম প্রকাশ করেনি তদন্তের স্বার্থে) আমাদেরকে জানিয়েছন যাত্রীবাহী নৌকাটি ৪টা ৩০ মিনিটে চম্পকনগর ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও নৌকাটি ৪টা ৫০ মিনিটে চম্পকনগর ঘাট ছেড়ে যায়। নৌকাটির কোনো ফিটনেস ছিল না। লাইফ সাপোর্ট ছিল না। নৌকাটির চালকের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না। অভিজ্ঞতার ঘাটতি ছিল। এসব কারণকে সামনে রেখেই তদন্ত করা হচ্ছে। নৌ দুর্ঘটনার একাধিক কারণ পাওয়া গেছে। এই মুহূর্তে সঠিকভাবে কেবলমাত্র একটি কারণ চিহ্নিত করে দুর্ঘটনার জন্য কাউকে দায়ী করা যাচ্ছে না। একাধিক কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। সব বিষয়ে তদন্ত করে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নৌ দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করে কারণ উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এদিকে দুর্ঘটনার পর থেকে নৌকার মাঝি হিসেবে পরিচিত ‘সোনা মাঝি’ পলাতক রয়েছেন। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের ছতুরপুর গ্রামে। মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোজাম্মেল রেজা জানান, নৌকাডুবির ঘটনায় ২৮ আগস্ট দুই বাল্কহেডের মালিক, চালক ও তার সহযোগীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেন নৌ দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজন নিহত পরিবারের সদস্য বিজয়নগর চম্পকনগর ইউনিয়নের গেরাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো. সেলিম মিয়া। মামলায় এমভি ‘ইয়া রাসূল আল্লাহ’ বাল্কহেডের তিন চালক ও সহযোগী জমির মিয়া, মো. রাসেল, খোকন মিয়া এবং মালিক মো. সোলায়মানকে আসামি করেন।
এছাড়া অপর বাল্কহেড এমভি রউফ শাহী নৌযানের মালিক মোস্তফা মিয়া এবং চম্পকনগর নৌকাঘাট পরিচালনাকারী দুই সদস্য সোলাইমান মিয়া ও মিস্টু মিয়াকেও আসামি করা হয়েছে। তবে ডুবে যাওয়া ট্রলারের মাঝি সোনা মিয়া ও তার দুই সহযোগীকে এই মামলায় আসামি করা হয়নি।’

উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট শুক্রবার ট্রলারটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগরে চম্পকনগর বাজার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে ফেরার পথে সন্ধ্যা ৬টার দিকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে যাওয়ার পথে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীবাহী ট্রলারটি ডুবে যায়। ৫০জনের মত যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও প্রাণ হারান ২৩ জন। আহত অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন অন্তত ১৫ জন।