Home প্রচ্ছদ বিএনপির ঘুম ভেঙ্গেছে : দ্য ডিপ্লোমেট প্রতিবেদন

বিএনপির ঘুম ভেঙ্গেছে : দ্য ডিপ্লোমেট প্রতিবেদন

35

ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে বিরোধী দল, এই শিরোনামে বিএনপির চলমান কর্মসূচী নিয়ে লিখেছে দ্য ডিপ্লোমেট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শফি মোহাম্মদ মোস্তফা এই প্রতিবেদনে বলেছেন, অর্থনৈতিক সংকটকে সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে পেয়েছে বিএনপি। প্রতিবেদনের শুরুতেই তিনি বলেছেন, মনে হচ্ছে বিএনপির তন্দ্রা কেটেছে। এরপর বলেছেন ৮ অক্টোবর বিএনপির জনসভা থেকে আমানউল্লাহ আমানের ঘোষণার কথা।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান সেদিনের জনসভায় বলেছিলেন, ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে দেশ চলবে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে।
উল্লেখ্য, বিএনপির চলমান বিভাগীয় গণসমাবেশ শেষে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণসমাবেশ করবে বিএনপি।
আমানের ওই ঘোষণার পর পরই নড়েচড়ে বসেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা। এমন ঘোষণার কার্যকারণও খুঁজছেন তারা। যদিও বিএনপি নেতারা বলেছেন, এটা একান্তই আমানের ব্যক্তিগত মন্তব্য।
বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় চলতে চলতেই মাঠে গড়িয়েছে বিএনপির গণসমাবেশ কর্মসূচী। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা ও রংপুরে বিভাগীয় গণসমাবেশ হয়েছে। আজ সমাবেশ হচ্ছে বরিশালে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিএনপির প্রতি দমনপীড়ন চালিয়েছে। রাজপথে কর্মসূচী করতে দেয়নি। কিন্তু গত কয়েক মাসে বিএনপি যেনো নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করেছে।
সারাদেশে একের পর এক জনসভা করছে, যেখানে বিশাল জমায়েত হয়েছে। রাজপথে বাধার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শুরু করেছে দলটি। আর এই প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত ৫ নেতাকর্মীর প্রাণ গেছে, তারপরও এগোচ্ছে দলটি।
কিন্তু বিএনপি এতোটা দেরিতে কেনো সক্রিয় হলো, প্রশ্ন করা হয়েছে ডিপ্লোমেটের এই প্রতিবেদনে। আর উত্তরটাও রয়েছে, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক মন্দা সরকারের বিরুদ্ধে বড়ো ইস্যু হিসেবে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের বিপর্যয়ও বিএনপিকে মাঠে নামার সুযোগ করে দিয়েছে। এর পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক বৈরিতা বিএনপির পক্ষে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আঞ্চলিক এবং বৈশি^ক ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইছে বাংলাদেশ কোয়াড-এ যোগ দিক, যে জোটে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপান। আবার কোয়াডে যোগ দিলে দুদেশের সম্পর্ক খারাপ হবে বলে বাংলাদেশকে হুঁশিয়ার করেছে চীন।
দেশটি চাইছে তাদের নবগঠিত গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) এবং গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভে (জিএসইই) বাংলাদেশ যোগ দিক। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এই চাপাচাপির মধ্যেই মার্কিন সরকার বাংলাদেশের র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এনেছে।

পাশাপাশি ২০২১ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর কান্ট্রি রিপোর্টে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশে ২০১৮ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। এদিকে ২০২৩ সালের নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, সে জন্য সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও জার্মানির রাষ্ট্রদূত।
সব মিলিয়ে বিশ্বরাজনীতি আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর একটি অবাধ নির্বাচনের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। বিএনপি এই সমীকরণ থেকে লাভবান হতে পারে বলে প্রতিবেদনে মত প্রকাশ করা হয়েছে।
বিএনপির বর্তমান হালহকিকত প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপি ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে শুরু করেছে।
কিন্তু বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত হতে পারেনি এখনো। কারণ বেগম খালেদা জিয়া কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারছেন না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান লন্ডন থেকে দল পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকের উদ্ধৃতি দিয়ে ডিপ্লোমেট বলছে, সরকারের অপশাসন বিএনপিকে জনপ্রিয় করে তুলছে। আর তারেক রহমান দলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
দেশের অর্থনৈতিক সংকট এবং ভূ-রাজনীতি বিএনপিকে সুযোগ করে দিয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করার। সরকার অবশ্যই চেষ্টা করবে বিএনপির নবজাগরণকে ঠেকাতে।
সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলার অজুহাত দেখিয়ে সরকার বিএনপিকে শক্ত হাতে দমন করবে কি না, প্রশ্ন করা হয়েছে প্রতিবেদনে। উপসংহারে বলা হয়েছে, বিএনপি যেনো কোনো অবস্থাতেই এই আন্দোলন থেকে সরে না আসে।
আমাদের সময়.কম