Home জাতীয় বাঙালির শক্তির নাম বাংলা ভাষা: মোস্তাফা জব্বার

বাঙালির শক্তির নাম বাংলা ভাষা: মোস্তাফা জব্বার

35

স্টাফ রিপোটার: ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বাঙালির শক্তির নাম বাংলা ভাষা। ভাষার জন্য লড়াই করতে গিয়ে আমরা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। রক্তের বিনিময়ে মায়ের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষায় প্রতিষ্ঠা, এ ভাষার মর্যাদা রক্ষা ও বাংলা ভাষা ভিত্তিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নজির বিশ্বে আর নাই। মা, মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষার প্রতি বঙ্গবন্ধুর আপসহীন সংগ্রামের ফসল এই বাংলাদেশ।

মন্ত্রী আজ রাজধানীর মগবাজারে বিটিসিএল আইডিয়াল স্কুল প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং মহান শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আয়োজিত বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন বিষয়ক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডাক ও টেলিযোগযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, বাঙালির রক্তের সাথে, মেধা ও মননের সাথে, মায়ের মুখের সাথে মিশে আছে বাংলা ভাষা। বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র বাংলা ভাষা ভিত্তিক রাষ্ট্র। পৃথিবীর ৩৫ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে । অসমীয়া ভাষাসহ অনেক ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় বাংলা লিপি ব্যবহৃত হওয়ায় বাংলা ভাষার যে পরিধি তার চেয়ে বেশি বাংলা লিপির পরিধি ব্যাপৃত বলে উল্লেখ করেন ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা বর্ণমালার উদ্ভাবক জনাব মোস্তাফা জব্বার। একাত্তরের আগে এ ভূখণ্ড পাকিস্তানী, ইংরেজ, মোগল এবং এরও আগে বাইরের শক্তি শাসন করেছে। তারা প্রত্যেকেই তাদের ভাষা চাপানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, উচ্চতর শিক্ষায় এবং উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা প্রবেশাধিকারের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। পৃথিবীতে বাঙালির পরিচয় সুদৃঢ় করছে বাংলা ভাষা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ভাষা আন্দোলনের মধ‌্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন। বাংলা পৃথিবীর মধুরতম এবং বিজ্ঞান সম্মত ভাষা। পৃথিবীর অনেক ভাষা নিজেদের হরফ বাদ দিয়ে বিদেশি হরফ দিয়ে মাতৃভাষা চর্চা করতে গিয়ে নিজস্ব ভাষার আসল রূপ হারিয়েছে, নিজ ভাষাকে বিকৃত করেছে। কিন্তু বাংলা ভাষা আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল । ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার এই উদ্ভাবক বলেন, ডিজিটাল যন্ত্রে বাংলা লেখার সীমাবদ্ধতা নাই। তবে ভাষার ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির সুযোগ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যন্ত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু অপটিমা মুনির টাইপ রাইটার প্রবর্তন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় যন্ত্রে বাংলা লেখার অভিযাত্রা শুরু হয়। তিনি আজকে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে স্মার্ট বাংলাদেশের ভবিষ্যত সৈনিক আখ্যায়িত করে বলেন, উপনিবেশিক আমলের শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তে তাদেরকে ডিজিটাল যুগের উপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত করতেই হবে। উপযুক্ত শিক্ষা পেলে আমাদের নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা অসাধ্য সাধনের সক্ষমতা রাখে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রতিষ্ঠায় এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলাভাষার বিকাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান তুলে ধরেন ডাক ও টেলিযোযোগ মন্ত্রী।

সভাপতির বক্তৃতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ভাষার লড়াইয়ের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, এই লড়াই সুদুর অতীতের। বঙ্গবন্ধু ভাষার এ লড়াই চূড়ান্ত বিজয়ে উপনীত করেছেন। ভাষা আন্দোলনের পথ বেঁয়ে একাত্তরের মহান স্বাধীনতা এসেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই।

অনুষ্ঠানে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: রফিকুল ইসলাম বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের কর্মকর্তাগণ এবং এর অধীনস্থ দপ্তর ও সংস্থাসমূহের প্রধানগণসহ সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার এর নেতৃত্বে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও এর অধীন অধিদপ্তর ও সংস্থা সমূহের পক্ষ থেকে বিটিসিএল আইডিয়াল স্কুল প্রাঙ্গণে নির্মিত শহিদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে এই উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন মন্ত্রী।

পরে মন্ত্রী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং মহান শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর ধানমণ্ডীর সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে প্রথম আলো আয়োজিত বর্ণমেলা পরিদর্শন করেন। মন্ত্রী এসময় মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন এবং এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। তিনি নতুন প্রজন্মকে ভাষাপ্রযুক্তিসহ ডিজিটাল প্রযুক্তির দক্ষতা অর্জন করার আহ্বান জানান।