Home জাতীয় বাউফলে সন্ত্রাসী ‘কাবিলা বাহিনী’র উত্থানে জনমনে আতঙ্ক!

বাউফলে সন্ত্রাসী ‘কাবিলা বাহিনী’র উত্থানে জনমনে আতঙ্ক!

50

বিশেষ প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর বাউফলের নওমালায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ‘কাবিলা বাহিনী’র উত্থানে জনমনে আতঙ্ক তাড়া করে ফিরছে। এদের বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অশান্ত জনপদে পরিণত ইউনিয়নের ভাঙ্গাব্রিজ, নগরের হাট, নয়াহাটসহ বিভিন্নস্থান। আধিপত্য বিস্তারে কিলিং মিশনেও অপরাধ জগত দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে এই সংঘবদ্ধ ‘কাবিলা বাহিনী’। এরআগে ওসির সঙ্গে নওমালা ইউনিয়নের সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের কয়েক সদস্য সেলফি তোলে রাজনৈতিক, সামাজিক,সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় তোলে। বাউফলে আসামীদের সঙ্গে ওসির সেলফি শিরোনামে গণমাধ্যমে বিষয়টি ফলাউ করে প্রকাশিতও হয়েছিল।
কে এই সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের অন্যতম সদস্য কাবিলা? নওমালা ইউনিয়নের নিজবটকাজল গ্রামের মৃত: রুস্তম মৃধার পুত্র কাবিলা। এই কাবিলা নওমালা ইউনিয়নে বেশ কয়েক বছর ধরে মাদক বাণিজ্য, চাঁদাবাজী, ছিনতাই, দখল সন্ত্রাস, ভাড়ায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দেদারছে চালিয়ে আসছে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। কাবিলা সহ বেশ কয়েক জন সন্ত্রাসী মিলে নওমালা ইউনিয়নের ভাঙ্গাবিজ্র, নগরের হাট সহ আশপাশ এলাকার অপরাধ জগত চষে বেড়াতে এক সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তোলে। একসময়ে টমটম চালাতো কাবিলা। চক্রের সদস্যরা অন্যায় অপকর্মে ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে। চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে অন্তহীন অভিযোগ থাকলেও বার বার অপকর্ম করে পাড় পেয়ে যাচ্ছে। এতে এলাকায় চরম অসন্তোস বিরাজ করছে।
প্রশ্ন উঠেছে, নওমালায় অপরাধ জগত চষে বেড়াতে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র কাবিলা বাহিনীর উত্থানের নেপথ্যে কে? নেপথ্যে কলকাঠি নেড়ে এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর উত্থান ঘটিয়ে এলাকার পরিবেশ বিনষ্টে উঠেপড়ে লেগেছেন, তিনিই কী আবার এদের রক্ষাকবজ? এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, এলাকায় এক বিচারকের (জজ) ভাই নওমালা ইউপি চেয়ারম্যান পদ দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। অত:পর এহেন অপরাধী চক্রের উত্থানে নিজের শক্তিমত্তা জাহির করে যেকোনভাবেই হোক আগামীতে চেয়ারম্যান পদটি ভাগিয়ে নেয়ার টার্গেটের পথে হেটেঁ চলছেন তিনি। বিচারকের ভাই বলে কথা! এ কারণে ‘কাবিলা বাহিনী’র শেল্টারদাতার ভয়ে অজানা আতঙ্কে সাধারন মানুষ সহসাই মুখ খুলতে পারছেন না। কেউ এদের অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই কৌশলীপন্থায় হামলা চালানো হয়। পাশাপাশি প্রতিবাদীদের বিভিন্ন ধরণের মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। কে সেই বিচারকের ভাই? যিনি বিচারক ভাইয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে দীর্ঘসময়ব্যাপী অর্থনৈতিকভাবে ফাঁয়দা লুটে আসছেন। এবং এলাকায় হামলা-মামলায় জড়ানোসহ নানান কায়দায় হয়রানিতে এক ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে মত্ত। আর বিচারকই বা কে? এসব নিয়ে পরবর্তীতে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে।
অনুসন্ধানী সূত্রগুলোর ভাষ্য, কাবিলা বাহিনী প্রায়ই এলাকায় অস্ত্রসহ মহড়া দিচ্ছেন। এতে এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষ আতঙ্কিত থাকেন। কাবিলা চক্রটি এলাকায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হিসেবে জনমনে আখ্যায়িত। এদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ব্লাকমেইল, চাঁদাবাজি, মাদক বাণিজ্যতে অতিষ্ঠ এলাকার শান্তিপ্রয় নারী-পুরুষ। সচেতন মহলের প্রশ্ন কাবিলা বাহিনী নওমালা ইউনিয়নে নানা অপরাধের জন্ম দিয়েও কিভাবে বহাল তবিয়তে থাকেন? এ বিষয়ে অভিজ্ঞমহলের ভাষ্য-এলাকার সুষ্ঠু, সুন্দর, আদর্শভিত্তিক কল্যানময় মানবিক সমাজ গড়ার অন্তরায়ই হচ্ছে স্ব স্ব এলাকার অপরাধী চক্র। এজন্য এসব অপরাধী চক্রের দ্রুত লাগাম টেনে ধরাটা বাঞ্চনীয়। এদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। পাশাপাশি এহেন অপরাধী চক্রের শেল্টারদাতাদেরকে অনুসন্ধানপূর্বক চিহিৃত করে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক। একই দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী,অত্যাচারের শিকার পরিবারগুলো।
নওমালা ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাদা হাওলাদার বলেন, নওমালা ইউনিয়নের মানুষ শান্তিপ্রয়, তারা শান্তিতে নিবিঘ্নে বসবাস করতে চায়। এখানে কোনো অপরাধীর বিচরনক্ষেত্র হিসেবে দেখতে চায় না এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষ। তিনি বলেন, ইউনিয়নের শান্তপ্রিয় জনগণের ওপর একের পর এক বর্বরোচিত কায়দায় সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে লুটপাটের ত্রাসের রাম রাজত্ব কায়েমের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে এলাকায় গড়ে ওঠা এক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী। জনগণ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন এক ব্যক্তির শেল্টারে গড়ে তোলা হয়েছে এই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী। এরা এলাকায় ভাড়ায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক বাণিজ্য, লুটপাট, দখল সন্ত্রাস, খুনসহ নানান ধরণের অপরাধের জন্ম দিচ্ছে। এরফলে এলাকার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণও হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন নওমালা ইউপির জনপ্রিয় চেয়ারম্যান তরূণ উদীয়মান সমাজ সেবক শাহজাদা হাওলাদার।
ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাদা হাওলাদার বলেন, এলাকার পরিবেশ নষ্টের দিকে ধাবিত করতে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের মূলৎপাটন করতে সকল শ্রেনী পেশার মানুষকে এগিয়ে আসা উচিৎ। একইসঙ্গে চেয়ারম্যান শাহাজাদা হাওলাদার নওমালায় এইসকল সন্ত্রাসী ও এদের শেল্টারদাতাদের দৌরাত্ম্য বন্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আশু দৃষ্টি কামনা করেন। তিনি বলেন, বিশেষ করে নওমালা ইউনিয়নে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের লাগাম টেনে ধরে আইনের আওতায় আনার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্য জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু দৃষ্টি কামনা করছি।
প্রসঙ্গত : সাম্প্রতিক সময়ে বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) গড়ে ওঠা কাবিল বাহিনী কর্তৃক এক আটোচালককে হত্যাচেষ্টায় নির্যাতনের স্টীম রোলার চালানো হয়। আহতের পরিবার সূত্রের ভাষ্য, নওমালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. শাহজাদা হাওলাদারের সমর্থক হওয়ার অপরাধে স্থানীয় এক সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র কর্তৃক অটোচালক মো. কালু মৃধাকে (৩০) নির্যাতন করে হত্যাচেষ্টা চালায়। স্থানীয়রা অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। আহত অটোচালক কালু মৃধা নওমালা ইউনিয়নের বটকাজল গ্রামের মোঃ সোবাহান মৃধার ছেলে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কালু মৃধা বলেন, “আমি শাহজাদা চেয়ারম্যানকে ভালবাসি এবং তাক ভোট দেই এটাই আমার অপরাধ। আর এ অপরাধের কারনে স্থানীয় সন্ত্রাসী কাবিলার নেতৃত্বে কাউন্টার কবির ও বেল্লাল মুন্সিসহ ৭ থেকে ৮ জন লোক আমাকে বেধম মারধর করে মোবাইল ফোন, কিছু টাকা ও অটোগাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার নওমালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (একাংশ মেয়র গ্রুপ) শাহজাদা হাওয়াদারকে সমর্থন করেন কালু মৃধা। শাহজাদা হাওলাদারের সভা-সমাবেশেও যান তিনি। এ কারণে দীর্ঘ দিন ধরে তার ওপরে ক্ষিপ্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (একাংশ এমপি আসম ফিরোজ গ্রুপ) ও নওমালা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কামাল বিশ্বাসের অনুসারী ক্যাডার বাহিনী। বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে নওমালা ইউনিয়নের ভাঙা ব্রিজ এলাকায় অটোগাড়ি ঠিক করাতে যান কালু মৃধা। কামাল বিশ্বাস ডাকে এ কথা বলে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিতি কাবিলা, কাউন্টার কবির, বেল্লাল মুন্সি তাকে ভাঙা ব্রিজ থেকে ১০০ গজ পূর্ব দিকে নিয়ে মারধর করে। এ সময় তারা (কালু মৃধার) সাথে থাকা মোবাইল ফোন ও অটোগাড়ি ঠিক করার জন্য রাখা টাকা ছিনিয়ে নেয়।
নওমালা ইউপির জনপ্রিয় চেয়ারম্যান তরূণ উদীয়মান সমাজ সেবক শাহজাদা হাওলাদার বলেন, সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র একের পর এক অপরাধের জন্ম দিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করে চলছে। এরইধারাবাহিকতায় সন্ত্রাসী চক্র বৃহস্পতিবারও আমার এক কর্মী অটোচালক কালু মৃধাকে হত্যাচেষ্টায় নির্যাতন চালিয়েছে। অটোচালক কালু মৃধাকে হত্যাচেষ্টায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবী জানান চেয়ারম্যান শাহজাদা হাওলাদার।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (একাংশ) ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কামাল বিশ্বাস বলেন, আমি খবর নিয়ে জেনেছি অটোগাড়ি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওরে অন্য অটো চালকরা মারধর করেছে। কালু ভালো ছেলে, আমার গ্রামের ছেলে। আমার লোকজন কেন মারবে ওরে! অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।