Home জাতীয় বাউফলের নওমালায় ছাত্রলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় থানায় অভিযোগ

বাউফলের নওমালায় ছাত্রলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় থানায় অভিযোগ

157

বরিশাল অফিস : পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নওমালা ইউনিয়নে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে সজীব নামের ছাত্রলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। রোববার (৩১ অক্টোবর) রাতে বাউফল থানায় এ অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কে বা কারা গুলি করেছে, বিষয়টি গণমাধ্যমে ফলাউ করে প্রকাশ হলেও অদৃশ্য কারণে টনক নড়ছে না থানা পুলিশের। অভিযুক্ত সন্ত্রাসীকে এখন পর্যন্ত আইনের আওতায় আনতে পারেনি পুলিশ। যদিও এ বিষয়ে স্থানীয় থানা পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলে অভিযোগ উঠেছে। গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার পিতা নাসির প্যাদা বাদী হয়ে থানায় এই অভিযোগ দেন। বটকাজল গ্রামের আজাহার আকনের পুত্র শাহাবুদ্দিন আকনকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা সজীব প্যাদা নওমালা ইউনিয়ন পরিষদের ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মো: শাহজাদা হাওলাদারের সক্রিয় কর্মী। ইতোমধ্যে গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার ঘাড় থেকে সফল অস্ত্রোপচারে মাধ্যমে গুলি বের করা হয়েছে। বাউফল থানার ওসি আল মামুন গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার অভিযোগের বিষয়ে বলেন, এ বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্তস্বাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগটি রেকর্ড হয়েছে কিনা এ প্রসঙ্গে বলেন, এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়নি, তবে এ বিষয়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষে পুলিশ কাজ করছে। শনিবার রাতে সজীব নামের ছাত্রলীগ কর্মীকে হত্যাচেষ্টায় গুলি এবং সোমবার সকালে চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহজাদা হাওলাদারের বাসভবনে হামলা পরবর্তীতে সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থতি বিরাজ করছে। বর্তমানে এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এরআগে শনিবার (৩০ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে বাউফলের নওমালা ইউনিয়নের আব্দুর রশিদ খান ডিগ্রি কলেজের পূর্ব পাশে গাজী বাড়ির সামনে সজিব এবং শাকিব দোকানে চা পান করছিলেন। ওইসময়ে অতর্কিতভাবে সজীব এবং শাকিবকে লক্ষ্য করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আ’লীগ নেতা কামাল হোসেন বিশ্বাসের অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনী গুলি করে। এতে ছাত্রলীগ নেতা সজীব প্যাদা গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। আহত সজিব বলেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল হোসেন বিশ্বাসের সমর্থক শাহাবুদ্দিন আকনের (৪৬) ছোড়া গুলিতে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত শাকিব হোসেন জানান, শাহাবুদ্দিন আকনের নেতৃত্বে ১০/১৫ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গুলি করে। এতে সজীব গুলিবিদ্ধ হন।
সূত্রগুলো জানায়, আহত অবস্থায় শনিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা সজীবকে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চিকিৎসক অপারেশন করার জন্য ওই রাতেই তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। রোববার (৩১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জি এম নাজিমুল হক অস্ত্রোপচার করে ছাত্রলীগ নেতা সজীবের শরীর থেকে একটি গুলি বের করেন। সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জি এম নাজিমুল হক বলেন, ওই তরুণের (সজীবের) ঘাড়ের বাঁ অংশ থেকে গুলি বের করা হয়েছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী রেজিষ্টার মির্জা মাহাবুব।
চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহজাদা হাওলাদারের সমর্থকরা বলেন, সন্ধ্যা হলেই অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় কামাল বিশ্বাসের অস্ত্রধারী বাহিনী। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এলাকায় মহড়া দিয়ে সাধারণ জনগণের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে চলছে। প্রতিপক্ষ কাউকে কাছে পেলেই খুন-জখমের অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে তারা। এমনকি দিনেও তারা সন্ত্রাসী হামলা চালাতো বেপরোয়া হয়ে মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, সোমবার (১ নভেম্বর) বেলা ১১ টার দিকে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: শাহজাদা হাওলাদারের নগরেরর হাট সংলগ্ন বাসভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এছাড়া চেয়ারম্যানের বাসভবনের সামনে একটি দোকান গুড়িয়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। ঘটনার সময়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহজাদা হাওলাদার নওমালার বাবুর হাট এলাকায় গণসংযোগ করছিলেন। খবর পেয়ে শাহাজাদা হাওলাদারের সমর্থকরা ঘটনাস্থলে এসে কামাল বিশ্বাস সমর্থক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এসময় উভয়পক্ষে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তৎসময়ে ফাঁকা গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। অবশ্য গুলিতে কেউ আহত হয়নি। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। একপর্যায়ে শাহজাদা হাওলাদারের সমর্থকদের জোরোলো প্রতিরোধের মুখে সটকে পড়েন কামাল বিশ্বাস অনুসারীরা। পরে পুলিশের হস্থক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সজীব নামের ছাত্রলীগ কর্মীকে হত্যাচেষ্টায় গুলি এবং চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহজাদা হাওলাদারের বাসভবনে হামলা পরবর্তীতে সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থতি বিরাজ করছে। বর্তমানে এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্যদিকে সোমবার সন্ধ্যারাতে বটকাজল গ্রামের মোঃ আইয়ুব আলী ওঝা ও সাদ্দাম ওঝার বসত ঘর এবং বেল্লাল ওঝার দোকানে কামাল বিশ্বাসের কর্মী জাকির ফকির,আমির ফকির,দুলাল মৃধা ও হারুন মৃধার নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করেছে বলে জানাগেছে। সংবাদ পেয়ে বাউফল থানার এসআই রুহুল আমিন ঘটনা স্থলে গেলে হামলাকারিরা পালিয়ে যায়।
চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহজাদা হাওলাদার বলেন, জনসমর্থন নাই তাই বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করছে কামাল বিশ্বাস ও তার সমর্থকেরা। তারা অবৈধ অস্ত্র ও কালো টাকার মাধ্যমে ভোট ডাকাতি করে বিজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। শনিবার রাতে পুলিশের উপস্থিতিতে আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর গুলি করে আহত করা হয়েছে। আমার কর্মী ছাত্রলীগ নেতা সজীকে হত্যাচেষ্টায় কামাল বিশ্বাসের পালিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা গুলি করেছে। এতে সে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। আজ (সোমবার) আমার বাসভবনে কামাল বিশ্বাসের পালিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। তিনি বলেন, নওমালার মানুষ শান্তিপ্রিয়, তারা কোন ধরণের অরাজকতা, সন্ত্রাসীদের অভায়ারন্য হিসেবে দেখতে চায় না। জনগণের রায়ে এবারও ওই অপশক্তি পরাজিত হবে।
এ বিষয়ে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী আ’লীগ নেতা এ্যাডঃ কামাল হোসেন বিশ্বাস বলেন, সোমবার সকালে আমি আমার কয়েক কর্মী নিয়ে প্রচার কাজে যাওয়ার পথে শাহজাদা হাওলাদারের সন্ত্রাসী কর্মীরা আমার কর্মীদের উপরে হামলা চালায়। এ হামলায় আমার কর্মী রুম্মান, স্বপন, ইসমাইল সহ ১০ থেকে ১২ জন আহত হয়। তাছাড়া আমার পক্ষে কাজ করায় নওমালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কে.এম নাসির উদ্দিনকে শারিরিকভাবে লাঞ্চিত করে।
কে এই শাহাবুদ্দিন আকন? নওমালা ইউনিয়নের বটকাজল গ্রামের আজাহার আকনের পুত্র শাহাবুদ্দিন আকন। বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো: মোতালেব হাওলাদারের ভাগ্নে শাহাবুদ্দিন আকন। এই শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে রয়েছে অন্তহীন অভিযোগ। বগা বন্দর থেকে অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়েন শাহাবুদ্দিন আকন। কিলিং মিশন, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণসহ নানাবিধ অন্যায় অপকর্মের সংঘবদ্ধের চক্রের অন্যতম হোতা সে। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ রয়েছে অসংখ্য মামলা। তিনি বগা ইউনিয়নের বাসিন্দা। স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাদা হাওলাদারের সমর্থরা বলছেন, বহিরাগত সন্ত্রাসী শাহাবুদ্দিন আকনকে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল হোসেন বিশ্বাস মোটা অঙ্কের অর্থের গোপন বুনিবনায় ভাড়ায় এনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকের উপর সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে। এরইপরিপ্রেক্ষিতে শাহজাদা হাওলাদার সক্রিয় কর্মী ছাত্রলীগ নেতা সজিবকে হত্যাচেষ্টায় গুলি করে। যদিও শাহাবুদ্দিন আকন এ বিষয়ে বলেন, ঘটনার সময় আমি বাসায় ছিলাম। ওই ঘটনার সঙ্গে আমার কোন সম্পূক্ততা নেই।