Home সাহিত্য ও বিনোদন বাংলায়ন সভা’র বর্ষপূর্তি আয়োজন

বাংলায়ন সভা’র বর্ষপূর্তি আয়োজন

39

ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নিয়মিত কাজ করছে ‘বাংলায়ন সভা’। ‘বাংলা বিশ্বময়’ শ্লোগান নিয়ে ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। কার্যক্রম হিসেবে সাহিত্যের নানা বিষয় নিয়ে সংগঠনটি নিয়মিত ‘শিল্প-সাহিত্যের বৈঠক’ শিরোনামে নিয়মিত সভা আয়োজন করে আসছে। ৩ সেপ্টেম্বর ছিল সংগঠনটির বর্ষপূর্তির আয়োজন। শনিবার বিকেলে এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার হলে। এবারের আলোচনার বিষয় ছিল ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিশ্বায়নে অন্তরায় এবং উত্তরণের পথ’।
উল্লিখিত বিষয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও রাষ্ট্রচিন্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক হাকিম আরিফ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলায়ন সভার সম্পাদক ফারুক সুমন এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সমন্বয়ক গাজী মুনছুর আজিজ ও লেখক সুরজিৎ রায় মজুমদার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলায়ন সভার মুখপাত্র শামস সাইদ। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল কবিকন্ঠে কবিতা পাঠ। অনুষ্ঠান আয়োজন সহযোগী ছিল ইশিখন ডটকম এবং ফ্যাশন হাউজ বালুচর।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘মানবতাবাদী মনীষীদের বিশ্বভাতৃত্বের মহাবয়ান আর বিশ্বায়নের ধারনা এক নয়। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো বরাবরই চায় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো যেনো বিকশিত না হয়। এজন্য তারা নানাভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করে রাখে। এমনকি বাংলাদেশও নানা দিক থেকে বিশ্বায়নের চাপে আছে। ফলে আমাদের বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য-সংস্কৃতিও বিশ্বায়নের চাপে রয়েছে। আর সে কারণে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিশ্বময় খুব বেশি ছাড়াতে পারেনি। অবশ্য রাষ্ট্র হিসেবেও আমাদের দেশ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বময় ছড়াতে খুব একটা উদ্যোগ নেয়নি। এছাড়া বাংলা ভাষা ও সহিত্য নিয়ে বাংলা একাডেমির যে কাজ করার দরকার ছিল, তারাও এ বিষয়ে কাজ করছে না। ফলে নানাভাবেই বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিশ্বায়নের পথে এগুতে পারেনি। অথচ এ বিষয়ে রাষ্ট্রেরই উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার ছিল।’
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে হলে প্রতিটি দেশে বাংলাদেশ কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্বময় ছড়াতে হলে বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্ব প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক হাকিম আরিফ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বাংলা ভাষার দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলা। কিন্তু এখনও আমাদের শিক্ষানীতিতে বাংলা ভাষার বিষয়টি অনুপস্থিত। তাই আমাদের নিজেদের যেমন বদলাতে হবে, তেমনি রাষ্ট্রকেও ভাষার প্রচার-প্রসারে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া গত ১০০ বছরে বিশ্বের যত ইনোভেটিভ ঘটনা ঘটেছে, তার অধিকাংশই হয়েছে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে। সে তুলনায় আমাদের বাংলা ভাষার অনুবাদ একেবারেই কম হয়েছে। ফলে বিশ্বের মানুষ জানতেও পারছে না আমাদের সাহিত্যে কী ঘটছে। সেজন্য এখন দরকার বাংলা সাহিত্য বেশি বেশি ইংরেজিতে অনুবাদ করা। এছাড়া আমাদের পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে আমরা যেমন মেডইন বাংলাদেশ ট্যাগ ব্যবহার করছি, তেননি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকেও আন্তর্জাতিক বাজারে ব্র্যান্ডিং করতে হবে। আর এসব উদ্যোগ রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।’ আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে অতিথি এবং সম্পাদনা পর্ষদ মিলে ‘বাংলায়ন বার্ষিকী প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন। প্রকাশনাটিতে ছাপা হয়েছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যবিষয়ক পঁচিশটি প্রবন্ধ-নিবন্ধ।
কবিকন্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি আদিত্য নজরুল, শাকিরা পারভিন, স্নিগ্ধা বাউল, আজিম হিয়া, শান্তা মারিয়া, বিধান সাহা, আশরাফ জুয়েল, সেঁজুতি বড়ুয়া এবং মামুন অপু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি সৌম্য সালেক এবং চামেলী বসু।