Home সাহিত্য ও বিনোদন বাঁশরীর উদ্যোগে মঞ্চায়িত হলো ‘সেতু-বন্ধ’

বাঁশরীর উদ্যোগে মঞ্চায়িত হলো ‘সেতু-বন্ধ’

30

স্টাফ রিপোটার: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবি ও সঙ্গীত স্রষ্টা হিসেবে সমধিক পরিচিত। তার সৃষ্টিশীল জীবনকালে (১৯২০-১৯৪২) তিনি অনেক নাটক রচনা করেছেন এবং নিজের নাটকের পাশাপাশি অন্য নাট্যকারের নাটক মঞ্চায়নের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। সেই প্রেক্ষিতেই বাঁধ দিয়ে পদ্মা নদীর প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৩০ সালের দিকে রচনা করেছিলেন নাটক ‘সেতু-বন্ধ’। কবির এই নাটকটি ঢাকার মঞ্চে এবার মঞ্চায়িত করলো বাঁশরী রেপার্টরি থিয়েটার।

মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাতটা ১৫ মিনিটে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চায়িত হয় এই নাটকটি। কাজী নজরুল ইসলামের এই নাটকটি মঞ্চে নির্দেশনা দিয়েছেন স্বনামধন্য নাট্য ব্যক্তিত্ব গোলাম সরোয়ার। নাট্যভাবনা ও পরিকল্পনা করেছেন ড. ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামান। নাটক নির্মাণের বিভিন্ন দায়িত্বে ও অভিনয়ে আছেন সুপরিচিত ও দক্ষ নাট্য শিল্পীরা। এটি ছিল ‘সেতু-বন্ধ’ নাটকের প্রথম শো।

নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, স্বর্গের দেবী পদ্মা জানতে পারে স্বচ্ছ জলরাশি নিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীতে যন্ত্রদানবকুল বাঁধ নির্মাণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। পদ্মা দেবী এই অপমান সইবে না। পদ্মার গতিবেগ রুখে দিয়ে জলাশয়কে নষ্ট করে দেওয়া দানব কুলের অভিলাষকে রুখে দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে মেঘরাজ পবন ও অন্যান্য দেবতাদের সহায়তা প্রত্যাশা করেন তিনি। মেঘরাজ, পবন, ঝঞ্ঝা, তরঙ্গ সেনাদল নিয়ে পদ্মা দেবীর সহায়তায় এগিয়ে আসে মেঘদেবী। শুরু হয় তুমুল লড়াই। লড়াইয়ে বিধ্বস্ত হয়ে যায় দানবকুলের ষড়যন্ত্র, স্বর্গরাজ্য প্রবেশের সকল প্রচেষ্টা হয়ে যায় ব্যর্থ। তবুও মৃত্যু-কাতর কণ্ঠে যন্ত্রদানব উচ্চারণ করে আমার মৃত্যু নেই দেবী, আমি আবার নতুন দেহ নিয়ে ফিরে আসব। পদ্মা দেবীও জবাব দেয়- জানি যন্ত্ররাজ, তুমি বারেবারে আসবে কিন্তু প্রতিবারেই তোমার এভাবে মৃত্যুদন্ড নিয়ে ফিরে যেতে হবে।

নাট্য নির্দেশক গোলাম সারোয়ার বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের নিকট প্রধানত কবি, সুরস্রষ্টা এবং গীতিকার হিসাবে পরিচিত। এর বাইরেও তাঁর অমর সৃষ্টি ভান্ডার রয়েছে। ছোট গল্প, বড় গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ইত্যাদি। রচনার তালিকায় নাটক খুবই কম। তারপরও তার নাটকগুলোর মধ্যে ‘সেতু-বন্ধ’ একটি অসাধারণ নাটক। প্রত্যেক নাট্যকারের নাটকে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে। কবি নজরুলের নাটকের বেলায় থাকবে না তা তো নয়। সেতু-বন্ধ কবির একটি অনবদ্য সৃষ্টি। এ নাটকে কবিতা, গান, আবৃত্তি, নৃত্য মিলেমিশে একাকার হয়েছে অথচ তা নৃত্যনাট্য নয়, আবার গীতিনাট্যও বলা যাবেনা। এমন একটি অসাধারণ নাটক মঞ্চায়ন করতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দিত। বাঁশরী সংগঠনের প্রান পুরুষ ড. ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামানকে এজন্য ধন্যবাদ এমন কাজ করার পেছনে উৎসাহ ও সহযোগিতা করায়। এই নাটকের প্রেক্ষাপটে নদী দূষণ এবং নদীতে বাঁধ দেয়ায় ক্ষতিকর প্রভাব যা সমকালীন বাস্তবতায় প্রয়োজনীয়। নজরুলের দূরদর্শী চিন্তার প্রভাব বর্তমান সময় কালে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য। যদিও প্রতীকী ধর্মীতায় রচিত এবং উপস্থাপনায় ফ্যান্টাসী এ নাটকের বৈশিষ্ট্য।

বাঁশরী নজরুল চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি ও নাটক মঞ্চায়নের উপদেষ্টা ড. ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামান বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গল্প-উপন্যাস থেকে দুই-একটি রূপান্তরিত নাটক মঞ্চস্থ বা টেলিভিশনে প্রচারিত হলেও কবি রচিত নাটক মঞ্চে অনুপস্থিত। দুই বাংলার জন্যই কথাটা সত্য। এমন অবস্থায় আমরা বাঁশরী (একটি নজরুল চর্চা কেন্দ্র) থেকে নাটক মঞ্চস্থ করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। ‘সেতু-বন্ধ’ প্রকৃতি ও পরিবেশরক্ষা-বিষয়ক নাটক। বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করার প্রতিবাদে কবি লিখেছিলেন সেতু-বন্ধ। পৃথিবীর দেশে দেশে বাঁধ দিয়ে নদীর পানি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, মাটি ও বর্জ্য ফেলে নদী ভরাট করা হচ্ছে, কলকারখানার বর্জ্য ফেলে নদীর পানি দূষিত করা হচ্ছে। তাই অনেক নদীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে। নদীর অববাহিকায় প্রকৃতি ও কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, খাবার পানির সংকট দেখা দিচ্ছে এবং মানুষের জীবন ও জীবিকা ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, তুরস্ক, ইথিওপিয়াসহ বিভিন্ন দেশে নদীতে বাঁধ দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। বাঁধ দেওয়ার পক্ষে ক্ষমতাধর অপশক্তি নানা যুক্তি উত্থাপন করছেন। সেতু-বন্ধ নাটকটি কবি লিখেছিলেন বাঁধ দিয়ে পদ্মা নদীর প্রবাহ বন্ধের পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে।

শরতের সন্ধ্যায় নাট্যাঙ্গনের বিশিষ্ট অভিনেতা অভিনেত্রী কলাকুশলীদের নিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে মঞ্চায়ন হয় নাটকটি। মঞ্চায়নের পর অসংখ্য দর্শকের মনেও স্থান করে নিয়েছে এই মঞ্চায়ন। সকলকে দিয়েছে পূর্নতা। আর ‘সেতু-বন্ধ’ নাটকটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শারমিন সঞ্চিতা খানম পিয়া, সুরভী রায়, চন্দ্রিমা দেয়া, জান্নাতুল ফেরদৌস হ্যাপী, হাসিনা আক্তার নিপা, মেহরান সানজানা, মোনালিসা মোনা, জয়িতা মহলানবীশ, শিবলী সাদিক প্রমুখ।