ডেস্ক রিপোর্ট: ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। বলা হচ্ছে, রুশ সরকারকে লক্ষ্য করে দেয়া এসব নিষেধাজ্ঞা দেশটির অর্থনীতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। ইউক্রেন সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বনেতাদের প্রতি যে দাবিগুলো ছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো, রাশিয়াকে সুইফট থেকে বাদ দিতে হবে। শেষ পর্যন্ত গতকাল সুইফট থেকে রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করতে সম্মত হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান উত্তেজনায় সবচেয়ে উচ্চারিত শব্দগুলোর একটি হলো সুইফট। এখন প্রশ্ন হলো সুইফট কী? কেন এটি নিয়ে এত আলোচনা?

ইংরেজি সুইফট শব্দটির পুরো অর্থ হলো, সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন। এটি মূলত দ্রুত আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক। এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাঠানো বার্তা অত্যন্ত সুরক্ষিত থাকে। পাশাপাশি এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো অনেক বড় অংকের অর্থ অতি দ্রুত লেনদেন করতে পারে।

একটি সমবায় হিসেবে ১৯৭০ সালে বেলজিয়ামভিত্তিক এ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। বর্তমানে বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশের ১১ হাজার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ নেটওয়ার্কে যুক্ত। সুইফটকে বলা হয় আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। ২০২০ সালে এ প্লাটফর্ম ব্যবহার করে প্রতিদিন ৩ কোটি ৮০ লাখ বার্তা আদান-প্রদান হয়েছে। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতি বছর কয়েক ট্রিলিয়ন অর্থ লেনদেন হয়। যদিও কিছু ব্যতিক্রম আছে। যেমন রাশিয়া ও চীন নিজস্ব ব্যবস্থা ব্যবহার করে, যা অনেকটা সুইফটের মতো। তবে সুইফটই বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহূত নেটওয়ার্ক।
এখন প্রশ্ন হলো, রাশিয়ার ওপর সুইফটের নিষেধাজ্ঞা কী গুরুত্ব বহন করে? যদি রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে সুইফট নেটওয়ার্কে নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে কী হবে? তাহলে যেটা হবে সেটা হলো, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজারগুলোতে প্রবেশ করা রাশিয়ার ব্যাংকগুলোর জন্য ভীষণ কঠিন হয়ে যাবে। রাশিয়ার ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের পক্ষে অন্যান্য দেশে পণ্য রফতানি বা আমদানি করা, ঋণ নেয়া বা বিদেশে বিনিয়োগ করার প্রক্রিয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ প্রায় ৩০০ রুশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেনের জন্য সুইফট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে।
রাশিয়া তেল ও গ্যাস রফতানির জন্য সুইফটের ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। ফলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে লেনদেনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যায় পড়বে দেশটি। যার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশটির অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, এর ফলে অর্থ লেনদেনের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকবে রাশিয়া।
এদিকে সুইফট নিষিদ্ধের পদক্ষেপ বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত যে দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার ব্যবসা রয়েছে সেগুলো। এ বিষয়ে জার্মানির অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডার বলেন, সুইফট থেকে রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করার অর্থ হলো জার্মানিতেও শিল্পপণ্যের কাঁচামাল ও গ্যাস রফতানি না করতে পারা। একই ধরনের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে ইতালি, হাঙ্গেরি, সাইপ্রাস ও লাটভিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের সাবেক প্রসিকিউটর ব্রায়ান ফ্রে মনে করেন, রাশিয়ার ওপর সুইফটের এ নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিপদে ফেলবে। কেননা রাশিয়ার কাছে তো বিকল্প আছেই। কিন্তু হঠাৎ করে এ সিদ্ধান্ত নেয়ায় বিপদে পড়ে যাবে অন্য দেশগুলো।-আমাদের সময়.কম