Home জাতীয় বরিশালে ইউএনও’র বাসভবনে হামলার নেপথ্যে ‘রাজনৈতিক ‌মদদদাতা’?

বরিশালে ইউএনও’র বাসভবনে হামলার নেপথ্যে ‘রাজনৈতিক ‌মদদদাতা’?

149

আহমেদ জালাল : বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলার নেপথ্যে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে জল্পনা-কল্পনা চলছে। রাজনৈতিক মদদদাতাদের কোন যোগসূত্র রয়েছে কিনা এ নিয়ে জনমনে বিভিন্ন প্রশ্ন ধুমায়িত হচ্ছে। অভিজ্ঞমহল বলছে, কোন সন্ত্রাসী নিজের পেশীশক্তির বলে কাজ করে না। তাদের পিছনে মদদদাতা ও আশির্বাদ থাকে। কেননা, এর সাথে অর্থের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, অর্থ প্রাপ্তির বিষয় রয়েছে। বুধবার রাতে (১৮ আগস্ট) আনসার সদস্যদের স‌ঙ্গে আওয়ামী লী‌গ-ছাত্রলীগ সদস্য‌দের সংঘর্ষে সদর উপজেলা প্রাঙ্গণ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আনসার সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুড়ে। এতে গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। ইউএনও’র বাসভবনে হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।
এরআগে বুধবার রাতে জাতীয় শোক দিবসের ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে দু’দফায় আ’লীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের কয়েক’শ নেতাকর্মী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)’র বাসভবনে হামলা চালায়। হামলায় পুলিশ ও আনসার সদস্যসহ অন্তত ৩০-৪০ জন আহত হন। সিটি মেয়র সমর্থকদের অভিযোগ, বুধবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে বরিশাল নগরের থানা কাউন্সিল (উপজেলা পরিষদ) কম্পাউন্ডে ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লক্ষ্য করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আনসার সদস্যরা গুলিবর্ষন করেন। বিপরীতদিকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারি বাসভবনে হামলার অভিযোগ তুলেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০ থেকে ২৫ জন কর্মচারী নগরের সিঅ্যান্ডবি রোডে উপজেলা পরিষদ এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার শুভেচ্ছা ব্যানার অপসারণের কাজ শুরু করেন। এসময় ইউএনওর কার্যালয় ও সরকারি বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা তাঁদের পরিচয় জানতে চান। এরপর তাঁরা সকালে এসে কাজ করার জন্য বলেন। এসময় সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের বাকবিতণ্ডা হয়। খবর পেয়ে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাসান আহেমদ বাবুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সহসভাপতি আতিকুল্লাহ খান মুনিম, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব খান, সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতসহ শতাধিক নেতাকর্মী সেখানে যান। সেখানে আনসার সদস্যদের সঙ্গে তাঁদের কথা কাটাকাটি হয়। তৎসময়ে নেতাকর্মীরা ইউএনওর বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ঘটনার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইউএনওর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এরপর তাঁরা পুলিশের ওপরও চড়াও হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। লাঠিচার্জ করা হয়। বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলায় ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পৃথক দৃটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইউএনও’র বাসভবনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় ৩০-৪০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত কয়েকশ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকবিতণ্ডা, সংঘর্ষ, হামলা, সর্বোপরি উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনসার সদস্যদের গুলির বিষয়ে বরিশাল রাজনৈতিক অন্ধরমহল থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে আলোচনায় আলোচিত হচ্ছে। উশৃঙ্খল-অরাজক পরস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হার্ডলাইনে অবস্থান করছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এহেন অপ্রতিকর ঘটনাটির বিষয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে দায়িত্বে অধিষ্ঠিরা গুরুত্ব সহকারে নজর রাখছেন। বরিশাল নগরীতে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
ওদিকে, বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয়ে শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে অসহায়দের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনায় দোষী ও প্ররোচনাকারীদের শাস্তি হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেছেন, ‘বিষয়টি এখন তদন্তাধীন। তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে কার ভূমিকা কী ছিল। কেউ যদি ভুল-ভ্রান্তি করে থাকেন, তাহলে তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনায় দোষী ও প্ররোচনাকারীদের শাস্তি হবে।’
একাধিক সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল জাহিদ ফারুক (এমপি)’র সঙ্গে সিটি মেয়র সেনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছিল। সাম্প্রতিক সময়ে সিটি করপোরেশনের ছয় কাউন্সিলর প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া অনুদানের চাল দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন মেয়র। পরে ছয় কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে বিসিসির কর্মচারীদের তুলে আনা হয়। সূত্রের দাবী, ওই দ্বন্দ্বের জের ধরেই ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়তে যান সিটি করপোরেশনের লোকজন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ওই দ্বন্দ্বের জের ধরে বুধবার রাতে বিসিসি কর্মী এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী প্রতিমন্ত্রীর ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করতে গেলে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে প্রাথমিকভাবে সত্যতা নিশ্চিত করেন বিসিসির ২৩ ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফ মো: আনিচুর রহমান, ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান দুলাল এবং ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) থানা সূত্র জানায়, নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালানা করে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে রয়েছেন মহানগর আওয়ামী ল‌ী‌গের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহামুদ বাবু ও রুপাতলী বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আহ‌ম্মেদ শাহা‌রিয়ার বাবু, ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন ফিরোজ, ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অলিউল্লাহ অলি, ৬ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১২ জন। দায়েরকৃত মামলায় এদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। উপ‌জেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মামলায় তার বাসায় হামলা ও ভাঙচু‌রের অভি‌যোগ আনা হ‌য়ে‌ছে। আর পু‌লি‌শের দা‌য়ের করা মামলায় সরকা‌রি কা‌জে বাধা, পু‌লি‌শের ওপর আক্রমণ ও ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হ‌য়ে‌ছে। ওসি আ‌রও জানান, দু‌টি মামলায় ৩০-৪০ জ‌নের ম‌তো নামধারী এবং ক‌য়েকশত অজ্ঞাত আসামি র‌য়ে‌ছে।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বেলা পৌ‌নে ১২টার দি‌কে নগ‌রীর কা‌লিবা‌ড়ি রোডস্থ মেয়‌রের বাসভবন হঠাৎ ক‌রেই ঘি‌রে ফে‌লেন র‌্যাব ও পু‌লি‌শের সদস্যরা। এ সময় সেখা‌নে জেলা প্রশাস‌নের নির্বাহী ম্যাজি‌স্ট্রেট উপ‌স্থিত ছি‌লেন। মেয়‌রের বাসার ভেত‌রে নেতাকর্মীরা যে‌তে চাইলে তা‌তেও পু‌লিশ বাধা দেয়। ত‌বে কিছুক্ষণ পর সেখান থে‌কে আইন-শৃঙ্খলা বা‌হিনীর সদস্যরা চ‌লে যান। এ বিষয়ে পুলিশের ভাষ্য, আমা‌দের কা‌ছে তথ্য ছি‌ল রা‌তের ঘটনায় যারা জ‌ড়িত ছি‌লেন তাদের কেউ কেউ ওখা‌নে অবস্থান কর‌ছেন। সেজন্য সেখানে যাওয়া, ত‌বে সেখা‌নে গি‌য়ে সেরকম কাউকে পাওয়া যায়‌নি এবং কাউকে সেখান থে‌কে আটকও করা হয়‌নি।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, বরিশাল নগরীতে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। একইসঙ্গে মাঠে থাকছে অতিরিক্ত ১০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ইউএনওর বাসভবনে হামলার ঘটনার পর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বিজিবি ও অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে খুলনার জোন থেকে ১০ প্লাটুন বিজিবি রওনা হয়েছে। এছাড়া পিরোজপুর ও পটুয়াখালী থেকে ১০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসছে।
ইউএনওর বাসভবনে দায়িত্বরত আনসার কমান্ডার আম্মাম হোসেন বলেন, ইউএনওর বাসভবনের পাশে শোক দিবস উপলক্ষে লাগানো পোস্টার-ব্যানার অপসারণ করতে আসেন সিটি করপোরেশনের লোকজন। এতে বাঁধা দেন ইউএনও। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের লোকজন চলে যান। কিছুক্ষণ পর সিটি করপোরেশনের লোকজনকে নিয়ে পোস্টার-ব্যানার সরাতে আসেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তখন ইউএনও রাতে পোস্টার-ব্যানার সরাতে নিষেধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইউএনওকে অবরুদ্ধ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে গুলি চালানোর অনুমতি দেন ইউএনও। গুলি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে তারা পাল্টা হামলা চালান। তখন দুই পক্ষের সংঘর্ষ লাগে। এতে ওসি ও প্যানেল মেয়রসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষ হয়।
এ ঘটনার পর বুধবার দিনগত গভীর রাতে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান-বিপিএম বার, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান, বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, বরিশাল র‍্যাব-৮ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি জামিল হাসানসহ একাধিক কর্মকর্তারা ইউএনও’র বাসায় যান।
বাসভবনে হামলার প্রসঙ্গে ইউএনও মুনিবুর রহমান জানান, উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে শোক দিবস উপলক্ষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম (এমপি)’র ব্যানার-পোস্টার লাগানো ছিল। রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসব ছিঁড়তে আসে। রাতে লোকজন ঘুমাচ্ছে জানিয়ে তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বৃহস্পতিবার সকালে এগুলো ছিঁড়তে বলেন। এরপর তারা তাকে গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা ইউএনওর বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। রাতে দুই দফায় তারা হামলা চালায় বলে জানান ইউএনও মুনিবুর রহমান।
বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিম ও সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত দাবি ক‌রে‌ছেন, সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ অন্তত ৩০ জন আহত হ‌য়ে‌ছেন। তি‌নি ব‌লেন, সংঘর্ষ থামাতে আনসার সদস্যরা গুলি চালালে মেয়রসহ ৩০ জন আহত হন।
বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এনামুল হক বলেন, ইউএনও জানিয়েছেন তাঁর বাসভবন এলাকায় ব্যানার-পোস্টার খুলতে আসে কিছু লোকজন। সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় রাতে ব্যানার খুলতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। এমনকি নিষেধ অমান্য করে ইউএনওর বাসভবনে প্রবেশ করতে চাইলে আনসার বাহিনী গুলি চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। সে সময় ইউএনওর বাসভবনের দিকে কিছু লোক এগিয়ে গেলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। সংঘর্ষে একাধিক পুলিশ আহত হয়। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এরামুল হক বলেন, ইউএনওর অফিস ও বাসভবন সংরক্ষিত এলাকা। এ এলাকায় বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা আইনত অপরাধ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যা করণীয় সেটাই করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেদিকে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে।
বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম জানান, হামলাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তি‌নি ব‌লেন, সংঘর্ষ থামাতে আনসার সদস্যরা শটগা‌নের গু‌লি‌তে বেশ ক‌য়েক জন আহত হন। ঘটনার পর ইউএনও’র নিরাপত্তায় গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ওসি জানান, দু‌টি মামলার ম‌ধ্যে এক‌টির বাদী ব‌রিশাল সদর উপ‌জেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মু‌নিবুর রহমান এবং অপরটির বাদী পু‌লিশ।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বিকেল ৪টায় নগরের কালীবাড়ি রোডের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবন সেরনিয়াবাত ভবনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মেয়র অংশগ্রহন করেননি। তবে তিনি বাড়িতেই ছিলেন। বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলা, পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, শোকের মাসে পরিকল্পিতভাবে একটি শহরকে অশান্ত করতে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ইউএনওর বাসায় কেউ হামলা করেনি। এটি পরিকল্পিত ঘটনা। এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া দরকার। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পড়েন বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের দৈনন্দিন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শোক দিবসে নগরে যেসব ব্যানার, বিলবোর্ড, লাগানো হয়েছিল, সেগুলো অপসারণ করতে যান। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁরা উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরে ব্যানার অপসারণের কাজ শুরু করেন। এ সময় ইউএনও তাঁর বাসভবন থেকে নিজে বের হয়ে কর্মীদের বাধা দেন। পরে কর্মচারীরা ব্যানার অপসারণের বিষয়টি তাঁকে জানালে ইউএনও তাঁদের বলেন, ‘আমার কম্পাউন্ডে কোনো মেয়রগিরি চলবে না, তোমরা চলে যাও।’ পরে সেখানে থাকা কর্মচারীরা বিষয়টি মেয়রকে জানান। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ ওরফে বাবু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জিয়াউর রহমান ঘটনাস্থলে যান। ইউএনও তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন ও হাসান মাহমুদকে নিজের বাসভবনে আটকে রাখেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে বাসভবনে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের গুলি করার নির্দেশ দেন ইউএনও। আনসার সদস্যরা নিবৃত্ত থাকলেও ইউএনও আনসার সদস্যদের হাত থেকে অস্ত্র নিজে নিয়েই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর গুলি ছোড়েন। এ সময় সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসসহ ছয়-সাতজন গুলিবিদ্ধ হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহম্মেদকে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় মেয়রের উদ্দেশেও গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরে শত শত নেতা-কর্মী মেয়রকে উদ্ধার করে নিরাপদে বাসায় পাঠান। সেই সময় গুলিবিদ্ধ হন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জিয়াউর রহমান, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. মনির। পরে ইউএনওর বাসভবনে আটক মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদের মুক্তির জন্য উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে সিঅ্যান্ডবি রোডে কয়েক শ নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হন। সে সময় আবার গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম, কর্মচারী মানিকসহ সাত-আটজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে হাজারো নেতা-কর্মী ও জনতা সিঅ্যান্ডবি রোডে অবস্থান নিয়ে ইউএনওর অপসারণ দাবি করে স্লোগান দিতে থাকলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের দাঙ্গা বাহিনী সেখানে উপস্থিত হয়ে লাঠিপেটা, দলীয় নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ সময় আহত নেতা–কর্মীরা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও তাণ্ডব চালায় পুলিশ। গাজী নঈমুল হোসেন দাবি করেন, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে তাঁদের ৬০ জন নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং ৫০ জনের বেশি পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘একটি শান্ত শহরকে অশান্ত করতে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ইউএনওর বাসায় কেউ হামলা করেনি। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। আমরা মনে করি, শোকের মাসে এটি একটি মানবতাবিরোধী কাজ। আমরা এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।’
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও আহত নেতা-কর্মীদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
এরআগে বুধবার দিনগত রাত ৩টার দিকে নগরের কালিবাড়ি রোডস্থ সেরনিয়াবাত ভবনে থানা কাউন্সিলের ঘটনার বিবরণ শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেছেন, যে কাজ করতে গিয়ে আজকের এ ঘটনা, ওই কাজটি আমাদের রেগুলার কাজ। এরআগে সংবাদ সম্মেলনে আমি ব্যানার নিয়ে স্টেটমেন্ট দিয়েছি, পুরোনো ব্যানার বা ভূইফোর সংগঠনের ব্যানারগুলো সরিয়ে ফেলতে। এতে শহর পরিষ্কার হবে। আর আপনারা জানেন মনে হয়, আমার নিজের করা ব্যানারটিও আমি খুলে ফেলেছি। আর সেই ধারাবাহিকতায় পরিষ্কার করতে করতে তারা থানা কাউন্সিলে গিয়েছে। আপনার দেখেছেন থানা কাউন্সিলের ভেতরে বিভিন্ন লোকজন, বিভিন্ন ব্যানার দেয়। আর যেখানে সিটি করপোরেশনের লোকজন কাজ করছিলো সেটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এর বাসা না। ওখানে পুকুর আছে, যেখানে সাধারণ মানুষ গোসল করে, ওখানে মসজিদ আছে, ওখানে আরো অনেক অফিস আছে, ওখান থেকে পেছনে বসবাসকারী মানুষদের যাতায়াতের রাস্তাও রয়েছে। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা আমাকে যেটা জানিয়েছেন, ওখানে কাজ প্রায় শেষের পথে ছিলো, পরিষ্কার করে চলে আসবে তখন ইউএনও সাহেব বের হয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের বলেছে কার কাছে জিজ্ঞাসা করে সেখানে তারা গিয়েছে। কর্মীরা বলেছে, তাদের গালাগালি করা হয়েছে। আর এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওনার বাসায় হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু ওনার বাসার গেটের ভেতরে কি তারা ঢুকেছে। ওখানে আমাদের ১ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক ছিলো, তারপর প্রচার সম্পাদকের সঙ্গে সিনিয়রদের পাঠালাম সেখানে কি হয়েছে দেখার জন্য। তিনি বলেন, যখন তারা আমাকে বললো যে গুলি হচ্ছে, তখন আমার বাসায় আমি, আমাদের সিটি করপোরেশনের সিও, মহানগর আওয়ামী লীগের অনেক নেতারা উপস্থিত ছিলো। আমি তাৎক্ষণিক একাই ঘটনাস্থলে চলে গেলাম। সিও সাহেবও পেছনে পেছনে রওনা দিলেন। আমি যখন ঘটনাস্থলে গিয়ে হেলমেট খুলে কর্মীদের বললাম তোমরা গেটের বাইরেই দাঁড়াও কেউ ভেতরে যেও না। এরপর একা থানা কাউন্সিলের গেট দিয়ে যখন ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম এবং বললাম আমি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র। তারা সে কথা শুনে অনবরত গুলি করা শুরু করলো। এরমধ্যে পেছনে যে নেতা-কর্মীরা ছিলো তারা সকলে এসে মানবপ্রাচীর বানিয়ে আমাকে বাহিরে নিয়ে আসলো। তারপর ওখানে থেকে আমার খুবই খারাপ লাগছে, খুবই লজ্জা লাগছে। তাই আমি ওখান থেকে চলে আসছি। চলে আসার পরে শুনলাম আবারো গুলি হয়েছে। আমাদের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটুকে রেখে আসছিলাম যাতে ওখানে অপ্রতিকর কিছু না ঘটে। তিনি বলেন, আমি গুলিবিদ্ধ হয়নি, তবে আমাকে গুলি করা হয়েছে, আর সেগুলো আমার জ্যাকেটের কারণে শরীরের ভেতরে লাগেনি কিন্তু গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছি। আর গুলির সময় নেতা-কর্মীরা সামনে চলে আসায় তাদের গায়েই গুলিগুলো লেগেছে। কতজনের গায়ে লেগেছে তা আমি হিসেব করে বলতে পারবো না। কতজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন সে বিষয়েও এখন কিছু বলতে পারবো না। ব্যানারকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা ঘটতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কি বলবো বলেন, গুলি করা হয়েছে ওখানে। মেয়রের গায়েও পর্যন্ত গুলি করা হয়েছে। মেয়র বলেন, আমি ওখানে যাওয়ার পরে পুলিশ কমিশনার সাহেব, র‌্যাবের সিও, আনসাররা গুলি করায় আনসারদের প্রধানকেও ফোন করেছি। কিন্তু আমি চলে আসার পরে পুলিশ বের হয়ে আসার পরও আবারো নাকি গুলি হয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগের এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদককে যেহেতু আটকে রাখা হয়েছে, তাই হয়তো প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু আলোচনার জন্য ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাকে গুলি করা হয়েছে, ৩৫-৩৭টি শটগানের গুলির পিলেট তার গায়েও লেগেছে। আমাদের সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস ব্যানার উচ্ছেদের সময় থেকেই ওখানে ছিলো। তার গায়েও গুলি লাগছে। তিনি বলেন, ঘটনার অবশ্যই জোড়ালো তদন্ত চাইব এবং অবশ্যই আমরা আইনের আশ্রয় নেবো। মেয়র হিসেবে এভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব না। আমি মেয়র হিসেবে তাহলে ব্যর্থ। প্রধানমন্ত্রী আমাকে শপথ পরিয়েছেন, আমার বাবা আছেন তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে, আমি আমার রেজিগনেশন লেটার দিয়ে দেবো। মেয়র বলেন, আপনার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়ে থাকলে আমাকে বলতে পারতেন। বরিশালে এতো বছরে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, যে এইভাবে আমাদের গুলি করা লাগবে। আবার শুনলাম যারা আহত হয়েছে তাদের গ্রেফতার করার জন্য মেডিক্যালে গেছে। তাহলে ঠিক আছে, অপরাধ হয়ে থাকলে তাদের হয়নি, আমি মেয়র মাথা পেতে নিলাম আমি রেজিগনেশন লেটার প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়ে দেবো।
অপরদিকে, এহেন ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা সড়কে ময়লা ও যানবাহন ফেলে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে রাতভর সেখান দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকে। ইউএনওর সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে বরিশাল থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ রুটেও বাস চলাচল বন্ধ করেন মালিক সমিতির নেতা ও শ্রমিকরা। পরে ১৩ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) দুপুর সোয়া ১২টা থেকে আবারও বাস চলাচল শুরু হয়।
প্রসঙ্গত, বুধবার(১৮ আগস্ট)রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিটি কর্পোরেশনের লোকজনসহ কয়েক ছাত্র-যুব ও আ’লীগ নেতা বরিশাল সদর উপজেলা চত্ত্বরে প্রবেশ করে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে টাঙানো ব্যানার উচ্ছেদ শুরু করার চেষ্টা করেন। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার সদস্যরা বিষয়টি নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিবুর রহমানকে অবহিত করলে তিনি বলেন, এখন অনেক রাত কাল (বৃহস্পতিবার) সকালে উচ্ছেদ করবেন। এনিয়ে ইউএনও’র সাথে আ’লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে উত্তেজিত ছাত্র-যুব ও আ’লীগ নেতাকর্মীরা ইউএনও’র বাসভবনে প্রবেশ করে তাকে গালিগালাজসহ দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। তখন আনসার সদস্যরা ধাওয়া দিয়ে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহামুদ বাবুকে আটক করেন। খবর পেয়ে সিটি মেয়র সেখানে ছুটে গেলে ছাত্র-যুব ও আ’লীগ নেতাকর্মীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের মূলফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে আনসার সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ে। এতে কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম খোকনসহ কয়েকজন গুলিব্ধি হন।
এদিকে, বরিশাল সদর উপজেলার ইউএনও মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনের জোরপূর্বক গেট খুলে একদল ব্যক্তির প্রবেশের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। কেউ কেউ ওই ভিডিও কপি করে নিজস্ব আইডিতে দেয়ার সাথে সাথে দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। ২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, নগরীর সদর উপজেলা প্রাঙ্গনে থাকা ইউএনও’র বাসভবনের ভিতরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হাঁটাহাঁটি করছেন। এরই মধ্যে তারা লক্ষ্য করেন একদল লোক ইউএনও’র বাসভবনের দিকে ছুটে আসছে। এরপর তারাও বাসভবনে ছুটে গিয়ে গেট খুলে ভিতরে প্রবেশ করে আটকে দেয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে জোরপূর্বক গেট ঠেলে নেতাকর্মীরা ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় কারো হাতে লাঠি ও ইট ছিল। বাধা দিলে এক প্রহরীকে মারধরও করা হয়। এমনভাবে তারা প্রবেশ করছিল সকলকে ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল। তাদের পথ আটকাতে এক পুলিশ সদস্য শটগানে গুলি ঢুকালে নেতাকর্মীরা পিছু হটে, আবারও তারা বাসার দিকে ছুটে যায়। ইউএনও বাসভবনের সাথে ওই সিসিক্যামেরা লাগানো। এ কারণে গেটের ছবি ভালোভাবে এসেছে। রাতেই কে বা কারা কিছু অংশ কেটে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিলে তা ভাইরাল হয়। ইউএনও গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার বাসভবনে জোরপূর্বক প্রবেশ করে তাকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা চালায়। আর সেই ঘটনাটি ছিল যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।