Home জাতীয় বন্ধ হতে যাচ্ছে কুমিল্লা চিড়িয়াখানা

বন্ধ হতে যাচ্ছে কুমিল্লা চিড়িয়াখানা

33

ডেস্ক রিপোর্ট: কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুড়ি এলাকায় জেলা প্রশাসকের বাংলোর পাশে স্থাপিত চিড়িয়াখানাটি তিন যুগ পর এখন বন্ধ হওয়ার পথে। চিড়িয়াখানার অধিকাংশ পশুপাখির খাঁচা খালি পড়ে আছে। নোংরা পরিবেশ। সব মিলিয়ে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে চিড়িয়াখানায়। একসময় জেলার একমাত্র চিড়িয়াখানাতে চিত্রা হরিণের পাল, শিয়াল, তিনটি ময়ূর, তিনটি ঘোড়া, চারটি মেছোবাঘ, সিংহসহ আরও অনেক পশুপাখি ছিল। অনেক দর্শনার্থীর আনাগোনায় মুখর ছিল বোটানিক্যাল গার্ডেনও।
কিন্তু এমন দৃশ্য এখন আর নেই। সম্প্রতি জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা প্রশাসনের তদারকিতে বোটানিক্যাল গার্ডেনের উন্নয়ন করা হলেও শিগগিরই চিড়িয়াখানার কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলা হবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুরি মৌজায় জেলা প্রশাসকের বাংলো লাগোয়া সরকারি খাস খতিয়ানের ১০ দশমিক ১৫ একর ভূমিতে ১৯৮৬ সালে গড়ে তোলা হয় বোটানিক্যাল গার্ডেন। এর এক কোণে করা হয় চিড়িয়াখানা। এ ভূমির মালিক জেলা প্রশাসন হলেও ব্যবস্থাপনার যাবতীয় দায়িত্ব নেয় জেলা পরিষদ। তাই এ দুই প্রতিষ্ঠানের টানাটানিতে বিগত তিন যুগেও চিড়িয়াখানার তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। বর্তমানে এখানে যে কয়েকটি পশুপাখি আছে তাও মুমূর্ষু। অধিকাংশ খাঁচা শূন্য। এ চিড়িয়াখানায় বাঘের খাঁচায় আছে তিনটি বাজপাখি। সিংহ ও খরগোশের খাঁচা খালি। গুটিকয়েক পাখি ছাড়া তেমন কিছুই নেই। বিগত কয়েক বছর ধরে সাধারণ মানুষ এ চিড়িয়াখানা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেলা ১২টার দিকে স্ত্রী ও তিন সন্তান সঙ্গে নিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেন-চিড়িয়াখানার প্রধান গেটে অপেক্ষমাণ জালাল উদ্দিন নামের এক প্রবাসী। তিনি বলেন, ১৫ দিন আগে কাতার থেকে দেশে এসেছেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছেন। ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে তিনি কোটবাড়ী শালবন বিহারে যাবেন বলে জানান। এটা কেন বন্ধ জানেন না। বন্ধ থাকার বিষয়টি ফটকে লিখে দেওয়া প্রয়োজন ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নগরীর ছোটরা এলাকার অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আবদুল হক বলেন, চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠা হয়েছে প্রায় তিন যুগ হলো। কিন্তু ভেতরে গেলে মনে হবে সরকারি এ স্থাপনাটি অভিভাবকহীন। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এসে ফিরে যাচ্ছে, তারা ভোগান্তিতে পড়ছে। এটা দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানার জমি জেলা প্রশাসনের। প্রতিষ্ঠার পর থেকে জেলা পরিষদ এর ইজারা দেওয়াসহ উন্নয়ন কাজের দেখভাল করে আসছিল। কিন্তু গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে এর তদারকি করছে জেলা প্রশাসন। তাই নতুন করে কাউকে এটা ইজারা দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় বোটানিক্যাল গার্ডেন দৃষ্টিনন্দন করে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া এবং চিড়িয়াখানার কার্যক্রম বন্ধ করে এর পশুপাখি বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পশুপাখি হস্তান্তর না করা পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করছে জেলা পরিষদ।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের জায়গার মালিক জেলা প্রশাসন। এত দিন জেলা পরিষদের অধীনে থাকলেও আমরা জায়গাটির মালিকানা বুঝে নিয়েছি। এ বিনোদন স্থাপনাটির উন্নয়নে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তাই উন্নয়নকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ থাকবে। চিড়িয়াখানার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ইত্তেফাক