বিশেষ প্রতিনিধি, ম্যানিলা: ম্যানিলাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এবং এবং ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম ইনস্টিটিউট-এর যৌথ উদ্যোগে ফিলিপাইনে প্রথমবারের মতো তিনদিন ব্যাপী ‘বাংলা ফিল্ম অ্যান্ড ফুড ফেস্টিভ্যাল’ উদযাপিত হয়েছে। বাংলা চলচ্চিত্র ও খাবারের মাধ্যমে বাঙালী সংস্কৃতিকে ফিলিপিনোদের মাঝে তুলে ধরার লক্ষ্যে এ উৎসব আয়োজন করা হয়।

সোমবার (০৬ মে) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউপিএফআই ফিল্ম সেন্টারে ফিতা কেটে যৌথভাবে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এফ. এম. বোরহান উদ্দিন এবং ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম ইনস্টিটিউট-এর পরিচালক রবার্ট রাউন্ড। ফিলিপিনো পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, প্রবাসী বাংলাদেশীসহ বিপুল সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। উদ্বোধনী দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের উপর ভিত্তি করে শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত সিনেমা ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়।

স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক রবার্ট রাউন্ড সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রশংসা করেন। তিনি এ ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করায় দূতাবাসকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান। সেই সাথে এ উৎসবে বিভিন্ন ঘরানার নান্দনিক বাংলা সিনেমা প্রদর্শন ফিলিপিনো দর্শকগণ বাংলা চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতির বিষয়ে আরো আগ্রহী উঠবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

রাষ্ট্রদূত বোরহান উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের গভীর তাৎপর্যের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, সংস্কৃতি বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের মানুষ একে অন্যকে আর গভীরভাবে জানতে পারে। সে ধারা অব্যাহত রাখতেই ফিলিপিনোদের মাঝে বাংলা চলচ্চিত্র ও বাংলা খাবার বিস্তৃতভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে দূতাবাস প্রথমবারের মতো এ উৎসবের আয়োজন করেছে। এ উৎসবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ফিলিপাইন পারস্পরিক বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উদ্বোধনী দিনে প্রায় চার শতাধিক দর্শক ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রটি উপভোগ করেন। প্রদর্শনী শেষে উপস্থিত রাষ্ট্রদূতগণসহ সকল শ্রেনীর দর্শক সিনেমাটির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তারা জানান, চলচ্চিত্রটি দেখার মাধ্যমে তারা বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান এবং দেশের জন্য তাঁর ত্যাগ-তিতিক্ষা সম্পর্কে অনেক কিছু নতুন ভাবে জানতে পেরেছেন। সকলেই এ চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। উদ্বোধনী চলচ্চিত্র প্রদর্শনী শেষে দূতাবাসের আয়োজনে ম্যানিলাস্থ কয়েকটি বাংলা রেস্টুরেন্ট আলু চপ, সিঙ্গারা, কাবাব, কাচ্চি বিরিয়ানি, ডিম কোরমা, রসগোল্লা, কালোজাম, গোলাপজাম, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, ফুচকাসহ আরও নানান পদের মুখরোচক খাবার উপস্থাপন করে।

উৎসবের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে প্রদর্শিত অন্যান্য সিনেমাগুলো হচ্ছে ‘বিউটি সার্কাস, ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন, ‘রিকশা গার্ল এবং ‘নোনাজলের কাব্য’। তিনদিনব্যাপী এই উৎসবে আট শতাধিক চলচ্চিত্রপ্রেমী অংশগ্রহণ করেন। উৎসবের প্রতিটি সিনেমাই দর্শকদের কাছে বিপুল সাড়া ফেলে। প্রদর্শনী শেষে দর্শকরা বাংলাদেশি চলচ্চিত্র শিল্পের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতেও এ ধরণের উৎসব আয়োজন অব্যাহত রাখার জন্য দূতাবাসকে অনুরোধ জানান।