Home রাজনীতি ফিরে আসছেন সম্রাট, নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত

ফিরে আসছেন সম্রাট, নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত

73

নাজির আহমেদ সজল: দুর্দিনের মাঠের ত্যাগী ও পরীক্ষিত কর্মী হয়ে তৃণমূলকে চাঙ্গা করে আওয়ামী লীগের পাশে ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিন যুবলীগের নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা মহানগরীর’ অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সম্রাটের ফিরে আসার খবরে ঢাকা মহানগর দক্ষিনের পাড়া-মহল্লায়ও আবারো চাঙ্গা হয়ে উঠছে যুবলীগের নেতাকর্মীরা। অনেকই স্থানীয় মসজিদ-এতিমখানায় মিলাদ-দোওয়া মাহফিলের আয়োজন করছেন।একইসাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুক্ক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাসরিন সুলতানা ঝাড়া লিখেছেন, যারা ত্যাগী এবং দলের দু:সময়ে রাজপথে থেকে আন্দোলন করেছে, তারাই আরেকজন ত্যাগী নেতার পক্ষে কথা বলবে, দু- চার কলম লিখবে এটাই স্বাভাবিক। সবাই শুধু দোয়া করেন, আল্লাহ্ যেন খুব শীঘ্রই ভাইকে এই ষড়যন্ত্র মূলক মিথ্যা মামলা থেকে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ভাইকে মুক্ত করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন। আল্লাহ্ যেন ভাইকে সম্মানিত করেন। ডিএসসিসি ৬৫নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি নীরু আমিন নুরুল লিখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাদের মুখের দিকে তাকিয়েছেন, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ভাইয়ের জন্য আল্লাহর দরবারে লক্ষ কুটি শুকরিয়া, এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা কে ধন্যবাদ জানাই। সম্রাটের সাথে একটি ছবি পোস্ট করে ডিএসসিসি ৬৭ নং ওয়াড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুজ্জামান আকাশ লিখেছেন, আবারো ঢাকার রাজ পথ অপেক্ষায় ভাই, তোমার পদচারণের জন্য। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু..আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাদের মুখের দিকে তাকিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর দরবারে লক্ষ কুটি শুকরিয়া, এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা কে ধন্যবাদ। ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিনের সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমান লিখেছেন,আলহামদুলিল্লাহ..আল্লাহ আপনি মহান। আমাদের মমতাময়ী নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আপার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। এইভাবে শতশত নেতাকর্মী সম্রাটের জামিন হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
যুবলীগের বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, নেতাকর্মীদের বিপদ-আপদ ছাড়াও আওয়ামী লীগ এবং দলের অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নেতাদের পাশে থেকে মানবতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। কর্মহীণ মানুষদের ছোট-খাট চা-পান দোকানদারদের ফুটপাতে বেঁেচ-খেয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দিতেন যুবলীগের এই নেতা। প্রতিদিন ছিন্নমূল-অসহায় মানুষদের একবেলা বিনা পয়সায় খাওয়ার আয়োজনও তিনি করেছিলেন। এইভাবে নিজের অজান্তেই সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু ২০১৯ সালে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় আটকা পড়েন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। তার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো বাণিজ্যসহ চাঁদাবাজির নানা রকম অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করে। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত কারাগারেই আছেন। শারীরিকভাবে অসুস্থ। কিন্তু ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের গ্রেপ্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। অনেকে মনে করতো, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট হলো আওয়ামী লীগের দুর্দিনের সাথী। আওয়ামী লীগের কঠিন সময় গুলোতে সম্রাট যেভাবে দলের পাশে দাঁড়িয়েছে, লড়াই করেছে সেটি বিরল ঘটনা এবং একজন ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতা হিসেবে দলে তার সুনাম রয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, যত ত্যাগই স্বীকার করুক না কেন দলের পরিচয় ব্যবহার করে যদি চাঁদাবাজি করা যায় তাহলে শাস্তি পেতেই হবে। কিন্তু এ ধরনের মতবাদের সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে। বরং দলের অগণিত নেতাকর্মী মনে করেন যে, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট দলের জন্য প্রয়োজন। বিশেষ করে সামনে নির্বাচন এবং এই নির্বাচনের আগে আন্দোলনের শঙ্কা রয়েছে। আন্দোলনে ঢাকা একটি বড় ফ্যাক্টর। ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে যত অভিযোগই করা হোক না কেন তিনি যে একজন ভালো সংগঠক এটি নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট গ্রেফতার হওয়ার পর ঢাকা মহানগরীতে আওয়ামী লীগ এক ধরনের সংকটে পড়েছে। কারণ, ঢাকায় একটা বড় ধরনের কর্মসূচি করা, লোক জোগাড় করা বা বিভিন্ন বিরোধীদের চাপ মোকাবেলার জন্য যে ধরনের শক্তি এবং সাংগঠনিক দক্ষতা দরকার তার শূন্যতা অনুভূত হয় প্রায়ই। একারণেই অনেকেই মনে করছিলেন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। আর এখন যে অবস্থায় তাতে ধারণা করা হচ্ছে, সম্রাট ফিরেই আসছেন। চারটি মামলার মধ্যে তিনটি মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন, আগামীকাল বুধবার দুর্নীতি দমনের মামলাতেও জামিন চাওয়া হবে এবং সেই মামলাতেও তিনি জামিন পাবেন বলে আশা করছে সম্রাটের শুভাকাঙ্ক্ষীরা। এর আগে, সম্রাটকে অর্থ মামলা, অস্ত্র মামলা এবং মাদক মামলা থেকে জামিন দেয়া হয়েছে। ফলে শুধু দুর্নীতির মামলায় যদি তিনি জামিন পান তাহলেই সম্রাটদের মুক্তিতে আর কোনো বাধা থাকে না। প্রশ্ন উঠেছে, সম্রাটকে কি আইনি লড়াইয়ে মুক্তি দিচ্ছে না এই মুক্তির পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে? সম্রাট গ্রেফতার হওয়ার পর ঢাকা মহানগরীতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা যেমন চোখে পড়েছে ঠিক তেমনিভাবে বিভিন্ন এলাকায় আন্ডারগ্রাউন্ডের সন্ত্রাসীদের দাপট বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে শাজাহানপুরের ডাবল মার্ডারের পর বুঝা গেছে যে, আওয়ামী লীগের ভিতরেও সন্ত্রাসীদের অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু সম্রাট যখন পূর্ণ ক্ষমতায় ছিল তখন এ ধরনের ঘটনাগুলো অকল্পনীয় ছিল। কারণ, সম্রাটের নিয়ন্ত্রণেই ছিল কমলাপুর, মতিঝিল এলাকা। শুধু তাই নয়, পুরো ঢাকা শহরে তার একটা নিয়ন্ত্রণ ছিল। আর এই কারণেই অনেকে মনে করছেন যে, সম্রাটকে হয়তো ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং অপরাধের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতায় নীতি গ্রহণ করে আছে। কাজেই, কেউ যদি অপকর্ম করে তাহলে তাকে আবার দলে ফিরিয়ে নিয়ে আসাটা ভালো লক্ষণ হবেনা। কিন্তু আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করছে যে, শেষ পর্যন্ত সম্রাটকে হয়তো আবার ফিরিয়ে আনা হবে। কারণ সামনে নির্বাচন, আন্দোলনের চেষ্টা ইত্যাদির প্রেক্ষাপটে সম্রাটের আওয়ামী লীগে ফিরে আসাটাই অনেক প্রত্যাশা করছেন। জামিনের মাধ্যমে কি তাহলে ফিরে আসছেন সম্রাট? এই প্রশ্নই এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে।