Home জাতীয় প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন প্রসঙ্গে আমাদের বক্তব্য

প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন প্রসঙ্গে আমাদের বক্তব্য

52

ডেস্ক রিপোর্ট: আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন কায়েম করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা কালাকানুন দিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ও বিরোধী মতকে দমন করছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশী আক্রমণ, মিছিলে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে দিয়ে বিরোধীতাকারীদের গুম, পুলিশী হেফাজতে খুন- ইত্যাদি ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটছে। রাস্তায় ন্যূনতম প্রতিবাদও সহ্য করা হচ্ছে না। জনগণের মতামত ও জীবন যাপনের কথা তোয়াক্কা না করেই প্রতিনিয়ত বাড়ানো হচ্ছে নিত্য পণ্যের দাম। সম্প্রতি রাতের আধারে জ্বালানি তেলের সর্বোচ্চ ৫১% মূল্যবৃদ্ধি তার অন্যতম উদাহরণ। চাল, ডাল, তেল, ঔষধসহ সকল কিছুর দাম মানুষের নাগালের বাইরে। শিক্ষাঙ্গনের পরিস্থিতি আরও খারাপ। ক্রমাগত বাড়ছে শিক্ষা ব্যয়। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার ব্যয় বেড়েছে। শিক্ষার বেসরকারিকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতি বেপরোয়া গতিতে এগিয়ে নিচ্ছে সরকার। ছাত্র, শিক্ষক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের কোন মতামত না নিয়েই সরকার বৃহৎ ব্যবসায়ীদের স্বার্থে তার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। ক্যাম্পাসগুলিতে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় তাদের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দখলদারিত্ব কায়েম করেছে। গোটা দেশ চলছে জনগণের স্বার্থের বিপরীতে, কিছু সংখ্যক বৃহৎ পুঁজিপতিদের স্বার্থে আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনা করছে। এ রকম পরিস্থিতি থেকে ছাত্র সমাজসহ আপামর জনগণ মুক্তি চায়।বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ( সিপিবি সমর্থিত একাংশ) সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) জয়দীপ ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার এক যৌথ বিবৃতিতে বাপ ছাত্র সংগঠনের ঐক্য নিয়ে এক ব্যখা তুলে ধরেছেন।

আজ তাদের দেওয়া বিবৃতিতে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন গড়ে না ওঠ নিয়ে আরও বলেন, এদেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রসমাজই প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। এখনও জাতীয় স্বার্থবিরোধী প্রত্যেকটি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ ধ্বনিত হয় ছাত্রসমাজের মধ্য থেকেই। আর এক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোই। সাংগঠনিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো যেমন ছাত্র অধিকার নিয়ে সরব থেকেছে, তেমনি প্রতিটি জাতীয় ইস্যুতে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। সুন্দরবন ধ্বংসকারী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, মোশতাক হত্যা ও ডিএসএ বিরোধী আন্দোলন, ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনসহ সাম্প্রতিক সময়ের অনেক দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যাবে।
বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর একটি সক্রিয় জোটÑপ্রগতিশীল ছাত্র জোট। বুয়েটে সনি হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সংঘটিত আন্দোলনের গর্ভ থেকে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সৃষ্টি। ছাত্র জোট বিগত সময়ে শিক্ষার অধিকার, জাতীয় সম্পদ রক্ষা, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ ছাত্র—জনতার অধিকার রক্ষার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে।
সম্প্রতি দেখা গেছে ছাত্র জোটের সমস্ত রীতি ভঙ্গ করে দুটি সংগঠনÑ ছাত্র ইউনিয়ন (ফয়েজ—দীপক) ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) ছাত্র জোটের নামে কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছেন। এ নিয়ে অনেকেই আমাদের প্রশ্ন করছেন। ফলে ছাত্রসমাজ তথা জনগণের সামনে আমাদের বক্তব্য আমরা তুলে ধরছি। প্রশ্ন না উঠলেও এই আলোচনা আমরা ছাত্রসমাজ ও জনগণকে যুক্ত করেই করতাম। কারণ এটি শুধু ছাত্র জোটের অভ্যন্তরীণ আলোচনা নয়, এর সাথে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলনকে আমরা কী দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি সেই প্রশ্নটিও যুক্ত। এটি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠার প্রশ্নের সাথে সম্পর্কিত। অনেকটা তাৎক্ষণিক ও সংক্ষিপ্তভাবে আমাদের ¬¬¬বক্তব্য এই সময়ে তুলে ধরতে হলো, ফলে এতে অসম্পূর্ণতা থাকবে। ভবিষ্যতে আমরা বিশদভাবে আমাদের চিন্তা তুলে ধরবো।
বিবৃতিতে বলেন, ডাকসু নির্বাচনের পূর্বে ছাত্র জোটের পাঁচটি শরিক সংগঠন ছিলো। ডাকসু নির্বাচন পরবর্তীকালে ভিন্ন ভিন্ন কারণে ছাত্র ফেডারেশন ও বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী জোট থেকে বেরিয়ে যায়। পাশাপাশি অন্য একটি বাস্তবতাও এই সময়ে তৈরি হয়। ছাত্র ইউনিয়নের সর্বশেষ কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে সংগঠনটি দুটি আলাদা অংশে বিভক্ত হয় এবং দুটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। এক অংশের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন যথাক্রমে মো. ফয়েজউল্লাহ এবং দীপক শীল। অন্য অংশের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক হন যথাক্রমে নজির আমিন জয় এবং রাগীব নাইম। মো: ফয়েজ উল্লাহ এবং দীপক শীলের নেতৃত্বশীল অংশ ছাত্র জোটে সংযুক্ত থাকে। প্রগতিশীল ছাত্র জোট পরিণত হয় তিন সংগঠনের জোটে। আমরা, ছাত্র ইউনিয়ন (ফয়েজ—দীপক) ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) মিলে ছাত্রজোটের কিছু কর্মসূচী পালন করি। অপরদিকে বেশিরভাগ সক্রিয় সংগঠন ছাত্র জোটের বাইরে থেকে যায়।
তারা বলেন, আমরা তখন থেকেই বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর বৃহত্তর ঐক্যের দাবি তুলি। কিন্তু ছাত্র জোটের অপর দুই সংগঠন এতে কর্ণপাত করেনি। এমনকি ছাত্র জোটে যখন ছাত্র ইউনিয়ন (জয়—রাগীব) যুক্ত হতে চেয়েছে, তখন ছাত্র ইউনিয়ন (ফয়েজ—দীপক) এর তীব্র বিরোধীতার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। আমরা তখন একইসাথে ছাত্র জোটের কর্মসূচী ও অপরাপর সাত সংগঠনের [ছাত্র ইউনিয়ন (জয়—রাগীব), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (গণসংহতি আন্দোলন), গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল) ও বিপ্লবী ছাত্র—যুব আন্দোলন] সাথে যুক্ত হয়ে ‘আট সংগঠন’ এই নামে কর্মসূচী পালন করতে থাকি। আন্দোলনের মাঠে এই ‘আট সংগঠন’ দ্রুত সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। তখনও ছাত্র ইউনিয়ন (ফয়েজ—দীপক) ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) ছাত্র জোটের ব্যানারেই কর্মসূচী পালনের ব্যাপারেই জোর দিচ্ছিলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের উপর জোর দিচ্ছিলাম। স্বাভাবিকভাবে ‘আট সংগঠন’ এর সক্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা ‘ছাত্র জোট’ থেকে বেশি ছিলো। এভাবে চলতে চলতে একসময় পরিস্থিতির চাপে পড়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) ‘আট সংগঠন’ এর কর্মসূচীর সাথে যুক্ত হতে থাকে। তখন আমরা নয় সংগঠন মিলে ‘প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনসমূহ’ নামে কর্মসূচী পালন করি।
আরও বলেন, বিপ্লবী ছাত্র সংগঠন হিসাবে আমরা মনে করি এই ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলা সময়ের কর্তব্য হিসাবে উপস্থিত হয়েছে। এই চিন্তার প্রেক্ষিতে প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও পাশাপাশি আট সংগঠন, নয় সংগঠন এভাবে না চলে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর বৃহত্তর ঐক্য নিয়ে ছাত্রজোটের অভ্যন্তরে বারবার আলোচনা করি। আমরা তখন বলেছি, ছাত্রজোটে বাকি সংগঠনগুলো যদি যোগ দেয় ভাল, যদি না দেয়, তাহলে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলনের স্বার্থে নতুন জোট গড়ে তোলা দরকার। ইতিমধ্যে আমরা বেশকিছু কর্মসূচী একত্রে পালন করার মধ্য দিয়ে সেই ন্যূনতম সমঝোতার জায়গা অর্জন করেছি। সর্বশেষ জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কর্মসূচী পালনকালে নয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর পুলিশ নৃশংস হামলা করে এবং পরবর্তীতে তাদের নামেই মামলা দেয়। এই সমস্তকিছু মিলে এই সংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বাস্তব পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
প্রশ্ন আসে নয়টি ছাত্র সংগঠন যখন একত্রে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছে এবং সক্রিয়ভাবেই রাস্তায় আছে, নির্যাতন সহ্য করছে, মামলা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে- তখন তাদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম গড়ে তুলতে সমস্যা কোথায়? এমনও কর্মসূচীর নিদর্শন আছে যেখানে দশটি ছাত্র সংগঠনই একত্রে ছিলো। এই সংগঠনগুলোর সবাই যদি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ—বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে, জাতীয় সম্পদ ও প্রাণ—প্রকৃতি—পরিবেশ রক্ষার পক্ষে থাকে, তাহলে ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচীতে তারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারবেনা কেন? এক্ষেত্রে ছাত্র জোট নামে যদি সবাই আসতে চায়, সেটা হতে পারে। আবার ছাত্র জোট নামে যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ নাও হতে পারি তাহলে অন্য কোন নামে আমরা কেন ঐক্যবদ্ধ হতে পারবোনা? ছাত্র জোট একটা ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। এখন নতুনভাবে যে প্রয়োজন সামনে এসেছে সেখানে তার ঐতিহাসিক কর্তব্য নির্ধারণ করা উচিত নয় কি? সকল বামপন্থী সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ তার নেয়া উচিত নয় কি?
এক্ষেত্রে জোটভুক্ত অপর দুই সংগঠনের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়ন (ফয়েজ—দীপক) কোনভাবেই ছাত্র ইউনিয়নকে (জয়—রাগীব) জোটে যুক্ত করবেন না। তারা বিভক্তভাবে ক্যাম্পাসগুলোতে ক্রিয়া করলেও অন্য অংশের অস্তিত্ব মেনে নিতে নারাজ। অথচ সিপিবি’র প্রোগ্রামে উভয় অংশই একসাথে অংশ নেন, বক্তব্য রাখেন। আমরা যুক্তি তুলেছিলাম, দলে আপনাদের একইসাথে চলতে সমস্যা হচ্ছেনা, তাহলে যৌথ আন্দোলনের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে কেন? সংগঠন বিভক্ত হওয়ার পরও দুটি অংশই জোটের মধ্যে ক্রিয়া করছে, এ ঘটনা তো জোটে আগেও ঘটেছে। তাহলে বাধা কোথায়? বাস্তবে তারা ছাত্র জোটে সংগঠনগত প্রভাব বিস্তার ও নিজেদের সাংগঠনিক প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করতে গিয়ে জোট সম্প্রসারণ ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করলেন। সংকীর্ণ সাংগঠনিক চিন্তা থেকে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলনের পদক্ষেপকে দূরে ঠেলে দিলেন।
বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) বিভিন্ন ইস্যুতে ‘প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ’ এই ব্যানারে কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু আবার তারা মনে করেন প্রগতিশীল ছাত্র জোটকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ এর দীর্ঘ আন্দোলনের ইতিহাস আছে। আমরা এ ব্যাপারে আমাদের লেখায় পূর্বেই বলেছি এবং তাদের সাথেও একই যুক্তি করেছি যে, এ কারণেই যৌথ আন্দোলনে ছাত্র জোটভুক্ত সংগঠনের দায় সবচেয়ে বেশি। আমাদেরই তো ঐক্যের উদ্যোগ নেয়া দরকার।
তাদের দ্বিতীয় যুক্তি হলো, আমরা নয় সংগঠন ঐক্য করলেও ছাত্র ইউনিয়ন (ফয়েজ—দীপক) আসবেনা। তাদের বাদ দিয়ে ঐক্য করলে সেটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর বৃহত্তর ঐক্য হয় কি? এই যুক্তি করে বাস্তবে তারা ছাত্র ইউনিয়ন (ফয়েজ—দীপক) এর অযৌক্তিক ও একপেশে মনোভাবকেই সমর্থন দিলেন, ঐক্যের প্রশ্নে তাদের উপর কোন চাপ সৃষ্টি করলেন না।
আমরা বৃহত্তর ঐক্যের পক্ষে যুক্তি করতেই থাকলাম। আমাদের যুক্তিকে গ্রাহ্য করা হলো না, উপরন্তু আমাদের উপর জোটকে বিভক্ত রাখা ও অকার্যকর করার অভিযোগ আনা হলো, যদিও জোট ইতিমধ্যেই অকার্যকর হয়ে গিয়েছিলো। ছাত্র ইউনিয়নের বিভক্তির জের মেটানোর জন্য একটা আনুষ্ঠানিক জোটকে চালিয়ে নেয়া যায় না, অন্তত আমরা তাতে যুক্ত থাকতে পারি না। জোটভুক্ত দুই সংগঠনের কাছে আমাদের প্রশ্ন, আপনারা বলুন- কী ধরনের মৌলিক রাজনৈতিক বাধা এই বৃহত্তর ঐক্য গঠনে আমাদের মধ্যে আছে? প্রগতিশীল ছাত্র জোটের ঐতিহ্য ও সুনাম বজায় রাখা? নাকি ছাত্র ইউনিয়ন একক সংগঠন সেটা প্রমাণ করা? নাকি নতুন জোটে কার প্রভাব বেশি থাকবে সেই সমীকরণ? এগুলোই কোনটাই এই সময়ের প্রেক্ষিতে গ্রহণযোগ্য যুক্তি নয়।
এই মুহূর্তে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো বিভক্ত হয়ে দুটি ব্যানারে কর্মসূচী পালন করার কোন যৌক্তিকতা আমরা খঁুজে পাচ্ছিনা। যে কঠিন সময় আমরা পার করছি এবং সামনে যে আরও কঠিন সময় আসছে তাকে মোকাবেলা করার জন্য বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর বৃহত্তর ঐক্য এখন একটি প্রধান শর্ত হিসেবে উপস্থিত হয়েছে।
এই দশটি সংগঠনের মধ্যে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিগত অনেক পার্থক্য আছে, সেটা থাকাই স্বাভাবিক। এর মধ্যে আপোষকামী চিন্তা আছে, অতি বাম হঠকারি চিন্তাও আছে। কিন্তু সর্বোচ্চ বোঝাপড়া এবং ন্যূনতম কর্মসূচীর ভিত্তিতে আমাদের একটা প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। এই আন্দোলন পরিচালিত হবে ‘ঐক্য—সংগ্রাম—ঐক্য’ নীতির ভিত্তিতে। ঐক্যবদ্ধ ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি করা ও সাথে সাথে নিজেদের অভ্যন্তরে আদর্শগত সংগ্রাম অর্থাৎ অপরের রাজনীতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমেই এই ঐক্যের ভিত্তি রচিত হবে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে চাই, ফ্যাসিবাদবিরোধী সর্বাত্মক ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই।
আমাদের মনে রাখতে হবে, দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এই ফ্যাসিবাদী একদলীয় শাসনব্যবস্থায় মানুষ মুক্তির জন্য ছটফট করছে। আর এই সময়ের আন্দোলনরত বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকের ওপর অর্পিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সকল গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনসমূহের প্রতি আমরা ঐক্যবদ্ধ লড়াই গড়ে তোলার আবেদন জানাই। এই কাজ আমরা যত দ্রুত করতে পারবো, তত দ্রুত সবাই মিলে আকাঙ্ক্ষিত লড়াই গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।