ডেস্ক রিপোর্ট: দশ দশটি বন। একসময় যেগুলোয় ছিল ঘনজঙ্গল। আশ্রয় নিত হাজারো পশুপাখি। জোগান দিত কোটি মানুষের বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় উপাদান অক্সিজেন। কিন্তু দাবানল, বননিধন আর বৈশ্বিক উষ্ণতার কবলে পড়ে সেই বনগুলোই এখন বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। অপার অক্সিজেনদাত্রী পৃথিবীর ফুসফুসগুলো হয়ে উঠেছে এক একটা কার্বন বোমা। ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট, দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার ও ইউনেস্কোর মতো তিন নামকরা প্রতিষ্ঠানের এক জরিপে দেখা মন খারাপ করা এই তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বের সবচেয়ে সংরক্ষিত ১০টি বনাঞ্চল যা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোতে অবস্থিত এই বনাঞ্চলগুলো ২০০১ সালের পর থেকে কার্বন শোসনের চেয়ে নির্গমনই বেশি করে চলেছে। বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষিত এসব বনাঞ্চলের আকার জার্মানির আয়তনের দ্বিগুণ। দ্য গার্ডিয়ান।

জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্ক, অস্ট্রেলিয়ার গ্রেটার ব্লু মাউন্টেইন ও ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রার চিরহরিৎ বনের মতো বনগুলো বিরূপ আচরণ শুরু করেছে। ২০০১ সাল থেকে এই বনগুলো অক্সিজেন কার্বন শোষণের চেয়ে কার্বন নিঃসরণ করছে বেশি। ফলে বায়ুমণ্ডলে আরও বেশি গ্রিনহাউজ গ্যাস জমা হচ্ছে। ইউনেস্কোর জরিপ প্রতিবেদনটির অন্যতম লেখক ড. টেলস কারবালহো রেসেন্ডে বলেন, ‘মূল কারণ হলো কৃষি জমির সম্প্রসারণ, অবৈধ কাঠ সংগ্রহসহ মানুষের সৃষ্টি করা চাপ।’

অসহ্য দাবানলের মুখে পড়তে যাচ্ছে বিশ্ব, বিজ্ঞানীদের হুঁশিয়ারি : বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভেলি থেকে মধ্যপ্রাচ্য, ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চল পর্যন্ত জীবন ইতোমধ্যে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের গতি থামাতে এখনই যদি কিছু না করা হয়, তাহলে শিগগিরই আরও অসহ্য দাবানলের মুখে পড়বে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। কপ-২৬ শীর্ষ জলবায়ু সম্মেলনকে সামনে করে এমনটাই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। চলতি বছর বিশ্বজুড়ে রেকর্ডসংখ্যক দাবানলের ঘটনা ঘটেছে। মূলত গ্রিনহাউজ গ্যাস বৃদ্ধির সুবাদে অতি তাপমাত্রার কারণে এমনটা ঘটছে।

জলবায়ু সংকট এড়াতে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে বিশ্ব-রিপোর্ট : জলবায়ু মোকাবিলার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে বিশ্ব। বৃহস্পতিবার গার্ডিয়ানে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ এক বৈশ্বিক বিশ্বেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, ‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে পিছিয়ে পড়ছে। বিদ্যুৎ খাত, ভারী শিল্প, কৃষি, পরিবহণ, অর্থ এবং প্রযুক্তি বিস্তৃত ৪০টি বিভিন্ন ক্ষেত্রে জলবায়ু ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন দ্রুত করা যাচ্ছে না।’ প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, পুনঃনবীকরণযোগ্য বিদু্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে জীবাশ্ম জ্বালানির জন্য জনসাধারণের অর্থায়ন পর্যন্ত কোনো সূচকেই এই দশকে গ্রিন গ্যাস নির্গমন অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

গরিব দেশগুলোর প্রতি নজর দিতে হবে-জাতিসংঘ : জাতিসংঘ বলেছে, কপ-২৬ সম্মেলন সফল করতে হলে অবশ্যই গরিব দেশগুলোর ওপর নজর দিতে হবে। কারণ, এসব দেশ করোনা মহামারি ও ক্রমবর্ধবান দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছে। এদিকে ২০টির বেশি দেশের জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমির প্রধান এবং শীর্ষ বিজ্ঞানীরা বিশ্ব নেতাদের প্রতি উদ্বেগ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন। এতে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ দ্রুত কমাতে এবং বৈশ্বিক উত্তাপকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে নীতিনির্ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার দুটি প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।-যুগান্তর