Home রাজনীতি পূজার মধ্যে সিদ্ধান্ত নেন: আল্টিমেট ফকরুলের

পূজার মধ্যে সিদ্ধান্ত নেন: আল্টিমেট ফকরুলের

29

স্টাফ রিপোটার: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, এখনো সময় আছে পুজার মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেন, স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছাড়বেন নাকি জনগণের আন্দোলনে বিতাড়িত হবেন?

তিনি বলেন, আজকে এই লাখো জনতা এ সমাবেশ আপনাকে বার্তা দিয়েছে আপনি (প্রধানমন্ত্রী) আর নেই।

সরকার পতনের একদফা দাবিতে বুধবার নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক আব্দুস সালাম। সমাবেশ শেষে বিএনপি মহাসচিব আগামী ২৮ অক্টোবর রাজনীতিতে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়ে বলেন, এ মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আজকেও দেখলাম প্রথম আলোর ভূয়া পেইজ খুলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তাদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে। আজকের এই লাখো জনতার উপস্থিতি প্রমাণ করে এই প্রপাগাণ্ডা জনগণ বিশ্বাস করে না।

তিনি বলেন, যখনই আমাদের সমাবেশ হয় তখনই নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আজকের সমাবেশকে কেন্দ্র ২৫০ জনেরও বেশি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ থেকে প্রমান হয় সরকার ভীতু হয়েছে। এদের পায়ে কোনো মাটি নেই। ভয় থেকেই সরকার এগুলো করছে।

ফখরুল বলেন, আমি আবারও বলছি এই সরকার সম্পূর্ণ অবৈধ সরকার। এরা বলছে সংবিধানের বাইরে যাবে না। এরা সংবিধান কাটাছেঁড়া করে জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে। এরা কথায় কথায় সংবিধানের দোহাই দেয়। আজকে রাষ্ট্রপতি দেশের বাইরে। সংবিধান অনুযায়ী কাউকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দিতে হয়। আসলে এই সংবিধান এক পরিবারের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে। সংবিধানের কথা বলে সারাদেশকে সংহিস রাজনীতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার।

তিনি বলেন, আজকের এই সমাবেশে অনেক জেলা থেকে সাধারণ মানুষ ও দলীয় কর্মীরা ছুটে এসেছে। কারণ, তারা নতুন কর্মসূচি চায়। দেশব্যাপী উদগ্রীব হয়ে আছে কখন এ সরকার বিদায় নিবে। আজকে হামলা মামলা জনগণ ভয় পায় না। কোনো কিছু করে দেশের মানুষকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়াকে গতকালও দেখতে গিয়েছিলাম। ডাক্তাররা বলেছেন তাকে বাচাতে হলে অবিলম্বে বিদেশে সুচিকিৎসার কোনো বিকল্প নাই। যপ মানুষটি আজীবন দেশের জন্য গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন তাকে বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ সরকার কতটা ভয়াবহ, নিষ্ঠুর।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মিথ্যা মামলা দিয়ে ৯৬ জন নেতাকে সাজা দিয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে তাদের সাজা দিতে পারলে মাঠ পরিস্কার। কত ভীতূ হলে ও কাপুরুষ হলে তারা তা করতে পারে। এরা ক্ষমতায় থাকলে শুধু রাজনীতি নয়, দেশ রসাতলে যাবে।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ আপনাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য পাঁচ বছরে একদিনই জনগণ ভোটের অধিকার পায়, কিন্তু ২০১৪ ও ১৮ সালে সে অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে। এ সরকারের কোনো ভিত্তি নেই। এখনো বলছি মানে মানে ক্ষমতা ছাড়ুন। আজকে মানুষ জেগে ওঠেছে। এই জাগ্রত জনতা ফুসে ওঠার আগে জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, এত গ্রেপ্তারে কি আন্দোলন থেমে গেছে? নেতাকর্মীরা গ্রেফতারে ভয় পায় না। গতকাল একটি বিশেষ শ্রেণির সভা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে বিরোধী নেতাকর্মীদের দমন করার জন্য। এসব কোনো প্রক্রিয়ায় কাজ হবে না। জনগণ রাস্তায় নেমে গেছে। আপনার কত অপকর্ম করেছেন, চুরি করছেন জনগ ন তা জেনে গেছে। আপনারা বলছেন- বাড়াবাড়ি করবেন না। বাড়াবাড়িতো আপনারা করছেন। পুলিশ নিয়ে অহংকার করছেন। এত অহংকার ভালো না। ওবায়দুল কাদের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আমরা নাকি ১৮ তারিখে বসে পড়বো। আমাদের বসার কোনো পরিকল্পনা নেই। আপনি বলছেন শাপলা চত্বরের মত অবস্থা হবে। তার মানে আপনি স্বীকার করলেন সেদিন আপনারই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন। মনে রাখবেন হেফাজত আর আমরা এক নয়। আমরা তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী বলছেন- তারেক রহমান কোথায়? আপনার স্বামী ওয়াজেদ মিয়া যখন মারা গেলো তখন আপনার সন্তানরা কোথায় ছিলো।

ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আজকে বাংলাদেশ থেকে বাকশালকে বিদায় করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। এই আওয়ামী লীগ তিন মিনিটে গণতন্ত্র ধ্বংস করে বাকশাল কায়েম করেছিলো। আজকে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দিকনির্দেশনায় রাজপথে নেমেছি। এই আওয়ামী লীগ কখনই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে নাই। এরা জনগণের ইচ্ছাকে পদদলিত করে বার-বার ক্ষমতায় এসেছে। এরা গণপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার। আওয়ামী লীগ বলতো আমার ভোট আমি দিবো, যাকে খুশি তাকে দিবো। আজকে তারা কেনো একথা বলে না। তারা এখন বলে দিনের ভোট রাতে দিবো। কারণ তারা দিনে ভোট দিলে ১০ শতাংশ ভোটও পাবে না। আমরা জানতাম পাকিস্তানী অবকাঠামোর মধ্যে গণতন্ত্র সম্ভব না। তাই মানুষ দেশ স্বাধীন করেছে। এই আওয়ামী লীগও দেশের গণতন্ত্র চায় না, জনগণের বাকস্বাধীনতা দিতে চায় না। ভূয়া উন্নয়নের প্রকল্প নিয়ে মানুষকে খুশি করা যায় না। তা বুঝতে পেরে তারা আবারও একদলীয় নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তু এবার তা সফল হবে না। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এদের বিদায় করে দেশে জনগণের শাসন কায়েম করবো ইনশাআল্লাহ।

আমীর খসরু বলেন, আজকে সব জায়গায় মানুষের একটি প্রশ্ন- আর কয়দিন? মানুষ আর অপেক্ষা করতে পারছে না। দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন তারা। এখনই পদত্যাগ করুন। আলোচনা সমঝোতার কথা আসছে। বিএনপি অবশ্যই আলোচনা সমঝোতায় বিশ্বাস করে। এর আগে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। তারপরেই বিএনপি আলোচনায় বসতে রাজি। অবৈধভাবে সংবিধান পরিবর্তন করেছে আওয়ামী লীগ। সংবিধানের দোহাই দিয়ে লাভ হবে না। জনগণ রাস্তায় নেমেছে। সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরবে না তারা।

সালাম তার বক্তব্যে বলেন, ওবায়দুল কাদের নিজেই বিএনপির প্রচার করছে। বলছেন রাজধানীর সকল হোটেল, বাসাবাড়ি পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের মাথায় নাকি ইউরেনিয়াম ঢেলে দিবে। আসলে আওয়ামী লীগে পাগলে ভরা। সরকারের কিছু উচ্ছিষ্টভোগী যারা ইউরেনিয়াম দিয়ে হত্যার হুমকি দেয় তাদের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য দালালী করছেন। একদিকে বিএনপি শূন্য করছেন আরেকদিকে বলছেন নির্বাচনে আসেন।

কাকরাইল থেকে মতিঝিল পর্যন্ত জনস্রোত

রাতে পুলিশের কড়াকড়ির পর ভোর হতেই নয়াপল্টনে আসতে শুরু করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। দলীয় কার্যালয়ের সামনে তৈরি মঞ্চের চারপাশে জড়ো হন তারা।
ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা ওয়ার্ডসহ আশেপাশের জেলাগুলো থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন। দুপুর গড়াতেই জনস্রোত শুরু হয় নয়াপল্টনমুখী। বেলা ২টায় সমাবেশ শুরুর আগেই নেতাকর্মীদের ঢল মালিবাগ, কাকরাইল, নাইটিংগেল মোড়, মৎস্যভবন, পল্টন, ফকিরাপুল, মতিঝিল, আরামবাগ, পীর জঙ্গি মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এসময় নেতাকর্মীদের সরকারবিরোধী নানা স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে নয়াপল্টন এলাকা। এদিকে জনস্রোতের কারণে নাইটিংগেল মোড় থেকে মতিঝিল, পল্টন, দৈনিক বাংলা পর্যন্ত সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া সমাবেশে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন এলাকায় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।

ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, হাবিবুর রহমান হাবিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক আনম সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।