Home রাজনীতি বানারীপাড়ায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব গড়িয়েছে আদালতে, এমপিপন্থী ৫ নেতার বিরুদ্ধে...

বানারীপাড়ায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব গড়িয়েছে আদালতে, এমপিপন্থী ৫ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

31

রাহাদ সুমন,বিশেষ প্রতিনিধি॥ বরিশালের বানারীপাড়ায় আওয়ামী লীগের এমপিপন্থী ও বিরোধী দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব অবশেষে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। সোমবার বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের বিরুদ্ধে ১৭টি অভিযোগ তুলে উপজেলা আওয়ামী লীগ তাকে শোকজ করে। ফলে এমপির পক্ষে উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৪২ নেতা এক যৌথ বিবৃতি দেন। এ বিবৃতিকে কেন্দ্র করে এমপি পন্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের ৫ নেতার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার ১৮ অক্টোবর বরিশাল বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে বানারীপাড়া উপেেজলা আওয়ামী লীগের সদস্য অধ্যাপক উত্তম কুমার দাস বাদী হয়ে এমপিপন্থী বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এটিএম মোস্তফা সরদার,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত লাল কুন্ডু,যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য মামুন-উর রশিদ স্বপন,সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল হুদাকে আসামী করে জাল- জালিয়াতি ও প্রতারণাসহ বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন। আদালতের বিচারক সুমাইয়া রিজভী মৌরি বিষয়টি তদন্তের জন্য বরিশাল পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদী অধ্যাপক উত্তম কুমার দাস ও ৫ সাক্ষী উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক এবং সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ,কোষাধ্যক্ষ ও বিশারকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম শান্ত. উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর শাহজাহান, সেলিম সরদার ও মিজানুর রহমান মিঠু অভিযোগ করেন এমপির পক্ষে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে গণমাধ্যম ও ফেসবুকে দেওয়া ওই বিবৃতির বিষয়ে তাদের কারও স্বাক্ষর জাল করে আবার কাউকে ভুল বুঝিয়ে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে ।
এছাড়া বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান আ. জলিল ঘরামী তাকে ভুল বুঝিয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল হুদাসহ কয়েকজন এমপির পক্ষে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে দেওয়া বিবৃতিতে স্বাক্ষর নিয়েছেন মর্মে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ।
এ ব্যপারে তিনি নুরুল হুদাসহ তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এটিএম মোস্তফা সরদার ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত লাল কুন্ডু বলেন,একজন সম্মানিত এমপিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের শোকজ করার এখতিয়ার নেই। এমপির পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর দিয়ে পরে কেউ যদি অস্বীকার করেন সেটা তাদের ব্যপার। এবিষয়ে তারা আইনীভাবে মোকাবেলা করবেন বলেও জানান।
শোকজ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম ফারুক এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাওলাদ হোসেন সানা বলেন, তারা এমপি হিসেবে নয় বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নম্বর কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে মো. শাহে আলমকে শোকজ করেছেন।
প্রসঙ্গত সোমবার ১৭টি অভিযোগ এনে বরিশাল-২ আসনের এমপি শাহে আলমকে শোকজ করে বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। উল্লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা নোটিস প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব গোলাম ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাওলাদ হোসেন সানাকে পাল্টা শোকজ করে জেলা আওয়ামী লীগ। সংগঠনের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্ ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস স্বাক্ষরিত এ শোকজে বলা হয়েছে, জেলা কমিটিকে না জানিয়ে কোন ক্ষমতাবলে এমপি শাহে আলমকে শোকজ করা হয়েছে তার জবাব আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে পাল্টাপাল্টি শোকজ ও মামলা দায়েরের ফলে বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। নেতা-কর্মীরা দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে বিষেদগার করছেন। অনলাইনসহ জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকাগুলোতেও দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব নিয়ে একের পর এক নিউজ প্রকাশিত হচ্ছে। এনিয়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ায় যেকোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশংকা দেখা দিয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের শান্তিপ্রিয় সাধারণ নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা দ্বন্দ্বের ফলে দলের ভাবমূুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে দাবি করে দলের স্বার্থে ও এলাকার শান্তি-স্থিতি অব্যাহত রাখতে নেতাদের দ্রুত দ্বন্দ্ব নিরসনকল্পে রাজনৈতিক অভিভাবক বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপিসহ নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অন্যথায় আগামী নির্বাচনে দলকে এর চরম খেসারত দিতে হবে বলেও তারা মনে করছেন।