Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে গুচ্ছ পদ্ধতির সুফল পাওয়া যায়নি

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে গুচ্ছ পদ্ধতির সুফল পাওয়া যায়নি

23

ডেস্ক রিপোর্ট: উচ্চমাধ্যমিকের পর উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি কমাতে কোনো উদ্যোগই সুফল পায়নি। ফলে এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোটাছুটি, মানসিক টেনশন, শারীরিক পরিশ্রম এবং আর্থিক সাশ্রয় কোনোটিই কমবে না এবারেও। এ নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা অস্বস্তিতে রয়েছেন। গুচ্ছের দীর্ঘ প্রক্রিয়া, সমন্বয়হীনতার, সময়ক্ষেপণ, অধিকতর সুযোগ দানের বিষয়গুলোকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বুধবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এতে ১০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন, যার অধিকাংশই উচ্চশিক্ষায় ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তথ্য অনুযায়ী, গুচ্ছ পদ্ধতি চালুর আগে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ছুটে যেতে হতো। ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতেন। পাশাপাশি অসুস্থ হয়ে পড়তেন শিক্ষার্থীরা। তাই ভর্তিতে গুচ্ছ পদ্ধতির দাবি তোলা হয়। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ পদ্ধতি চালু করতে ১০ বছর লাগে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা।
কিন্তু গুচ্ছের ত্রুটিযুক্ত পরীক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীর ভোগান্তি মোটেও কমেনি। গুচ্ছতে নানা জটিলতায় আগের চেয়ে ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণে। বারবার মেধা তালিকা দিয়েও আসন পূর্ণ করতে পারছে না অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে সেশনজটের কবলে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
আবার গুচ্ছ পদ্ধতিতে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে আনা যায়নি। উচ্চশিক্ষায় ভর্তির জন্য অধিকাংশ শিক্ষার্থীর এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পছন্দের শীর্ষে থাকে। ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছে না আসায় শিক্ষার্থীদের এই পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পৃথক পৃথকভাবে পরীক্ষা দিতে হবে। ফলে শুরুতেই ভোগান্তি-হয়রানিতে পড়লেন শিক্ষার্থীরা।

এই পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়। এর পর ঐ শিক্ষার্থীকে পৃথক পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করতে হয়। তবে এক্ষেত্রে নতুন করে পরীক্ষা দিতে হয় না। এই প্রক্রিয়ায় একজন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হলে গুচ্ছের অধীনে থাকা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সুযোগ পান। সুযোগ রয়েছে মাইগ্রেশনেরও।
তথ্য অনুযায়ী, টানা ১০ বার মেধাতালিকার পরও আসন পূর্ণ করতে পারেনি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দশম মেধাতালিকার ভর্তি শেষে তিন ইউনিটে এখনো ৪৮১ আসন খালি রয়েছে। খালি আসন পূর্ণ করতে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হয়েছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের বিভিন্ন অনুষদে আসন ফাঁকা রেখেই ক্লাস শুরু হয়। ৯টি মেরিট লিস্ট ও দুইটি অনস্পট ভর্তি করেও আসন পূরণ করা যায়নি। এ কারণে আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার কথাও ভাবছেন কোনো কোনো শিক্ষক। গুচ্ছের অধীনে থাকা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একই অবস্থা।

২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্ট সংকট দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মতো একটি ভালো আয়োজন, যাতে প্রশ্নের মুখে না পড়ে, সে বিষয়ে উপাচার্যদের সচেষ্ট থাকারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গত শিক্ষাবর্ষে সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়।

তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভর্তি প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্ট নন শিক্ষামন্ত্রী। বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই প্রক্রিয়ায় না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একটি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ভর্তির ব্যবস্থায় যেতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে একটি পরীক্ষা হয়। সেখানে হয় তো গণিত, বিজ্ঞান বা ভাষা এ জাতীয় বিষয় এবং সাধারণ জ্ঞানের ওপর পরীক্ষা হয়। সেই পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশে যারা এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষা দিচ্ছেন, তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আবারও একই বিষয়ের ওপর পরীক্ষা দিচ্ছেন। সেটি না করে ভাষা, গণিত, সাধারণ জ্ঞানের ওপর একটি পরীক্ষা হওয়া উচিত। আর যতক্ষণ না পর্যন্ত সেটিতে যেতে পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যমান গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা ব্যবস্থাপনাকে আরো ভালো করতে হবে।

এবার পুনর্বিন্যাস করা যে পাঠ্যসূচিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হয়েছে, সেই পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাটি হওয়া উচিত বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী।
ইত্তেফাক