Home জাতীয় পর্দার আড়ালেই রয়ে গেল বরিশালে ছাত্রদল নেতা জিতু হত্যার অনুঘটকরা!

পর্দার আড়ালেই রয়ে গেল বরিশালে ছাত্রদল নেতা জিতু হত্যার অনুঘটকরা!

210

আহমেদ জালাল : বরিশাল নগর ছাত্রদলের একাংশের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সরকারি বরিশাল কলেজ শাখার আহ্বায়ক রাফসান আহম্মেদ জিতু (২৪) হত্যার দীর্ঘ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও ঘাতকরা নগরজুড়ে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কে বা কারা হত্যা করেছিল তরুণ উদীয়মান এই ছাত্রনেতাকে? কেন-ই-বা পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়েছিল? এই হত্যার নেপথ্যের অনুঘটক কে বা কারা? এ নিয়ে নানামুখী প্রশ্ন রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। যাইহোক-ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেল পর্দার আড়ালে থাকা জিতু হত্যার অনুঘটকরা। আর প্রকাশ্য জিতুকে যারা হত্যা করেছিল তাদের অনেকেই আজও এই বরিশাল নগরজুড়ে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, জিতুর ছাত্র রাজনীতির উত্থানে তৎকালীন বরিশাল বিএনপির বিবাদমান দু’গ্রুপের অবস্থান ছিল অনেকটা মারমুখী। বিএনপির সাবেক জেলা সভাপতি ও সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামাল এর সমর্থক ছিলেন ছাত্রদল নেতা রাফসান আহম্মেদ জিতু। একইসঙ্গে তিনি বর্তমান বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন এর অনুসারী ছিলেন। আহসান হাবীব কামাল এবং বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন একই প্লাটফর্মে রাজনীতি করতেন। তৎকালীন সময়ে বরিশাল নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি দলের যুগ্ম মহাসচিব সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার এর রাজনীতির সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামালের প্রকাশ্য বিরোধ ছিল।
প্রসঙ্গত : ২০১২ সালের ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় নগরীর সরকারি বরিশাল কলেজের সামনে (পোস্ট অফিস গেট) কালীবাড়ি সড়কে একই সংগঠনের প্রতিপক্ষ গ্রুপের সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন ছাত্রদল নেতা রাফসান আহম্মেদ জিতু। প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা জিতুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহত জিতুর অনুসারীদের ভাষ্য, মাঠের রাজনীতিতে রাফসান আহম্মেদ জিতু সাংগঠনিক শক্তিমত্তায় এগিয়ে ছিল। অবাক করার বিষয়-জিতু যখন এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল তখন সাংগঠনিক কারিশমায় নগরীর বিভিন্ন কলেজ থেকে ছাত্ররা নিয়মিত তাঁর কাছে আসত, যোগাযোগ রেখে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করত। ঐতিহ্যবাহী বরিশাল বিএম কলেজ, বরিশাল কলেজ, হাতেম আলী কলেজ সহ নগরীর অন্যান্য কলেজ থেকে শ’শ ছাত্ররা তাঁর কাছে নিয়মিত এসে সাংগঠনিক বিষয়ে খোঁজখবর এবং সংগঠনকে গতিশীল করার বিষয়ে পরামর্শ নিত। এসএসসি পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হওয়ার পর সরকারি বরিশাল কলেজে ভর্তি হয়ে সংগঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে সক্ষম হন। এতে ইশ্বার্ন্বিত হয়ে পড়ে খুনের রাজনীতিতের মত্ত এক গ্রুপ। তাদের ইশারা ইঙ্গিত আর গোপন বুনিবনায় জিতুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এরইধারাবাহিততায় তরুণ ছাত্রদল নেতা জিতুকে খুন করা হয়। হত্যার আগ থেকেই একটি গ্রুপ জিতুকে নিয়ে বাহারী কায়দায় মিথ্যাচার চালিয়ে আসছিল। ওই গ্রুপটি বিভিন্ন কায়দায় জিতুকে কিশোর সন্ত্রাসী তকমা লাগিয়ে অব্যাহতভাবে হয়রানি করে আসছিল। পড়ালেখার প্রতি জিতুর ছিল প্রচণ্ড ঝোঁক। নানামুখী হয়রানি আর জীবনের চরম নিরাপত্তাহীনতার মুখে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল।
জিতুর পরিবারের ভাষ্যমতে, হত্যার আগে জিতু এবং জিতুর পরিবার অসংখ্যবার জীবনের চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে এরকম মন্তব্য করে আসছিল। জিতুকে বার বার হত্যা চেষ্টা করা হয়েছিল, তখন জিতুর বুদ্ধিমত্তায় সন্ত্রাসীদের কবল থেকে বার বার প্রাণে বেচেঁছিল। এমনকি তৎকালীন সময়ে বার বার হত্যা চেষ্টা, হত্যার গোপন মিশন, হত্যার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ার বিষয়টি বরিশাল কোতয়ালী থানা পুলিশের কাছে অসংখ্যবার শরনাপন্ন হয়েও কোন ধরণের প্রতিকার পায়নি জিতু।
প্রশ্ন হচ্ছে-কে বা কারা তৎকালীন সময়ে জিতুকে হত্যার গভীর ষড়যন্ত্রের কলকাঠি নেড়েছিল? আর কেন থানা পুলিশ জীবনের নিরাপত্তায় চরমভাবে শঙ্কিত জিতু এবং তাঁর পরিবারের কোন কথা-ই কর্নপাত করেনি পুলিশ? জিতু একাধিবার থানায় এ বিষয়ে জিডি করতে গেলেও তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল! উল্টো জিতুর পরিবারের প্রতি নানাবিধ কৌশলীপন্থায় চালানো হয়েছিল হয়রানি।
এদিকে, ঘাতকরা দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছে বলে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহত জিতুর ভাই ছাত্রদল নেতা রফিকুল ইসলাম টিপু। তিনি বলেন, জিতু হত্যার অন্যতম ঘাতক সবুজ আকনকে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সহ সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। এবং জিতুর অন্যান্য ঘাতকরা নগরজুড়ে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। টিপুর ভাষ্য, এখনও জিতু হত্যার অনুঘটকরা এবং ঘাতকরা নানামুখী কায়দায় আমাকে সাজানো নাটকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার চক্রান্তসহ হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আমি ও আমার পরিবার এখনও জীবনের চরম নিরাপত্তাহীনতার মাঝে বসবাস করছি।
বলাবাহুল্য : ২০২০ সালের ৭ নভেম্বর সরকারি বরিশাল কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম টিপুকে একদল সন্ত্রাসী অতির্কতভাবে হামলা চালিয়ে এলোপাথারিভাবে কুপিয়ে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। একই এলাকায় টিপুর ছোট ভাই রাফসান আহম্মেদ জিতুকে কুপিয়ে হত্যা করেছিল সন্ত্রাসীরা। সেই একই এলাকায় টিপুকে হত্যার পরিকল্পনায় কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে রেখে যায় সন্ত্রাসীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুসারে সন্ধ্যারাতে কালিবাড়ি রোডস্থ বরিশাল কলেজের পাশে জনসম্মুখে টিপুকে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এলোপাতারিভাবে কুপিয়েছে। কোপানোর পর মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায় হামলাকারীরা। সূত্রের ভাষ্যমতে, রফিকুল ইসলাম টিপু শ্রীনাথ চ্যাটার্চী লেনের মুখে একটি হোটেলে বসে ছিলেন। ওইসময়ে হঠাৎ ১৫/২০ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এসে তাঁকে টেনে বের করার চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হয়ে তারা দোকানটিতে হামলা-ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে টিপুকে টেনে হিচড়ে বের করে রাস্তার ওপরে এলোপাতারি কুপিয়ে জখম করে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পরেও টিপুকে অস্ত্রধারীরা কোপাতে থাকে। শেষে তাঁকে মৃত ভেঙে সড়কের ওপর দেহটি ফেলে চলে যায়। নৃশংস এই ঘটনাটি আশাপাশ থেকে অনেকে প্রত্যক্ষ করলেও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ভয়ার্ত পরিবেশের কারণে টিপুকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসার সাহস করেনি। পরে স্থানীয় কয়েকজন তাঁকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম)হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে উন্নত চিকিৎসায় রাতেই তাঁকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়।
নিহত জিতুর ভাই ছাত্রনেতা রফিকুল ইসলাম টিপু বলেন, জিতু হত্যা মামলার বিচার কাজ বর্তমানে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। খুনিরা টাকার জোরে মামলার বিচার কাজ কৌশলে ধামাচাপা দিয়ে রাখায় জিতু হত্যার বিচার আজও পাইনি।