Home জাতীয় পদ্মা সেতু আনবে নয়া শিল্প বিপ্লব

পদ্মা সেতু আনবে নয়া শিল্প বিপ্লব

65

সঞ্জীব রায়:আর মাত্র কয়েকটি দিনের অপেক্ষা। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হবার পর শিল্প বাণিজ্যে বাংলাদেশ জন্য এক অমিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু সেতুর উদ্বোধনই করবেন না বরং সূচনা করবেন এক নতুন যুগের। শিল্পায়নের এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫ কোটি মানুষ সরাসরি সুবিধা পাবে এই সেতুর। ২১ জেলাজুড়ে বাড়বে কর্মচাঞ্চল্য, হবে নতুন শিল্পকলকারখানা। এই অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। পদ্মা সেতু যোগাযোগব্যবস্থায় যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে তার খবর ইতোমধ্যেই পৌছে গেছে গোটা বিশ্বে। বিনিয়োগাকারীরা চোখ রাখছেন এই সেতুর সুযোগ কাজে লাগিয়ে কীভাবে নতুন শিল্পকারখানা গড়ে তোলা যায়।
শুধু বিদেশি বিনিয়োগকারীরাই নয় বরং দেশিয় বাণিজ্য ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রেও পদ্মাসেতু রাখবে বিশেষ অবদান। পটুয়াখালী, কুয়াকাটা ও মোংলা বন্দরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে ছোট বড় শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার কাজ। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)র দেয়া তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর খুলনা বিভাগে বেসরকারি উদ্যোগে নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠতে শুরু করেছে। নতুন গড়ে ওঠা উল্লেখযোগ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে, জুট অ্যান্ড টেক্সটাইল, এলপি গ্যাস, অটো রাইসমিল, মাছের হ্যাচারি ও হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, ফুড অ্যান্ড এলাইড প্রোডাক্টস, ক্যাটল, পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিশ ফিড, প্রকৌশল শিল্প, রসায়ন শিল্প, ফার্মাসিউটিক্যাল, ফার্টিলাইজার, কোল্ড স্টোরেজ, প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, উড অ্যান্ড পার্টিকেল বোর্ড প্রসেসিং, ডক ইয়ার্ড শিল্প, সার্ভিস (সেবা শিল্প), ডেইরি প্রোডাক্টস অ্যান্ড ডেইরি ফার্ম, অটোমেটিক ব্রিক ফিল্ড, প্লাস্টিক প্রোডাক্টস, নির্মাণশিল্প, পোল্ট্রি হ্যাচারি, পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং চামড়া ও ট্যানারি শিল্প ইত্যাদি।
যুগের পর যুগ এই অঞ্চলে কোন উল্লেখযোগ্য শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। দেশের আটটি এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন বা ইপিজেড এর মধ্যে মাত্র একটি মংলায়। বৃহৎ শিল্প কলকারখানার জন্য প্রয়োজন জ্বালানি। বর্তমান সরকারের হাতে নেয়া বিভিন্ন প্রকল্প বিশেষ করে বিদ্যুৎকেন্দ্র, এবং যোগাযোগের জন্য পদ্মাসেতুর বাস্তবায়ন দেখে এরই মধ্যে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা শত শত একর জমি ক্রয় করেছেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাটারিচালিত গাড়ি, বিদ্যুৎ সহজলভ্য হওয়ায় ওই অঞ্চলের পর্যটন খাতও ব্যাপক বিস্তৃত হচ্ছে। এসব শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পায়রা বন্দর, পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন, দৃষ্টিনন্দন ফোর লেনের পায়রা সেতুর পাশাপাশি শেরে বাংলা নৌ-ঘাঁটি ও ইপিজেড স্থাপিত হলে পুরো দক্ষিণাঞ্চল পরিণত হবে অর্থনৈতিক জোনে। সুতরাং পদ্মা সেতু চালুর হওয়ার পর ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এক নয়া শিল্প বিপ্লবের সূচনা ঘটবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই নতুন নতুন বিনিয়োগাকারীদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রস্তাব পাচ্ছে। যে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অমূলক অভিযোগে এই প্রকল্প থেকে নিজেদের হাত গুটিয়ে নেয়, সেই বিশ্বব্যাংকও পদ্মাসেতুর আর্থ-সামাজিক সম্ভাব্য সুফল নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু চালুর মধ্য দিয়ে সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠলে যে শিল্পায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে তার সরাসরি সুফল ভোগ করবে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১ টি জেলা। সেগুলো হল: – খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা। বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী। এই নতুন শিল্প বিপ্লবের যুগে পদার্পনের জন্য শুধু ২১ জেলার জনগনই নয় বরং গোটা বাঙালি জাতি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তাকিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে।