Home মতামত পদ্মা নদীতেও “ফেরি অধ্যায়ের” অবসান হতে যাচ্ছে আগামী ২৫ জুন

পদ্মা নদীতেও “ফেরি অধ্যায়ের” অবসান হতে যাচ্ছে আগামী ২৫ জুন

42

অপর্না পালঃ আমি যমুনা পাড়ের মানুষ। সেইদিনের কথা আজও আমার মানসপটে ভেসে ওঠে যেদিন প্রথম আমি ঢাকা যাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবার উদ্দেশ্যে। আমার দাদা ঢাকায় তখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) এম. কম. শেষ বর্ষের ছাত্র ছিল এবং একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরী করত। একদিনে ঢাকা থেকে আসা এবং ফিরে যাওয়া খুব কষ্টকর ছিল। কারণ তখনও বঙ্গবন্ধু সেতুর উদ্বোধন হয়নি। আমি সর্বমোট দুবার ফেরি দিয়ে ঢাকা গিয়েছিলাম সিরাজগঞ্জ থেকে। দ্বিতীয়বার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম। যখন ঢাকা থেকে ফিরলাম “ফেরী অধ্যায়” তখন অতীত। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা “বঙ্গবন্ধু সেতু”র উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে উত্তর বঙ্গের সাথে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়।

ছাত্রীজীবনে অসংখ্যবার গিয়েছি গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গি পাড়ায়, যেখানে ঘুমিয়ে আছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা, আমাদের জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ছাত্রলীগের কর্মী থাকার কারণে সংগঠনের সবার সাথে পদ্মা নদীর এই ফেরী পথটুকু একটু ভিন্ন রকম আনন্দের ছিল। ছাত্রীজীবনে কোন কষ্টই আমাদের নিকট কষ্টের নয়, আমরা সবাই কষ্টটাকে উপভোগ করি সাধারণত।

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে দেশরত্ন, মাননীয় নেত্রীর সফর সঙ্গী হবার।

২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সারাদেশে বিএনপি-জামাত যে সহিংসতা চালিয়েছিল মাননীয় নেত্রী তখন সারাদেশে ছুটে বেড়িয়েছেন ভিকটিম মানুষগুলোর পাশে থাকার জন্য।

বিএনপি-জামাত সরকার সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল বরিশাল ও ভোলা জনপদে। সেই কথা অন্য কোনদিন লিখব। তবে আপার সাথে যাওয়া ও ফেরী দিয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দেবার স্মৃতি আমাকে আজও শিহরিত করে। সেদিন নেত্রী পদ্মা সেতু নিয়ে উনার স্বপ্নের কথা বলছিলেন। কারণ আপনারা ইতিমধ্যে জানেন যে, ২০০১ সালের ৪ঠা জুলাই তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়। কিন্তু ২০০১ এর ষড়যন্ত্রের নির্বাচনের কারণে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসে, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ স্বপ্নই রয়ে যায়।

আমরা তখন বিরোধী দল, আপনারা সবাই জানেন রাষ্ট্র ক্ষমতা ছাড়া এত বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবে পদ্মা সেতুর মতো এমন স্বপ্নের একটি সেতুর জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতার চেয়েও বেশি কিছু দরকার হয়……আর তা হলো স্বপ্ন পূরণের সৎ সাহস এবং একজন শেখ হাসিনা।

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে। বঙ্গবন্ধু কন্যা পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজে হাত দিলেন, আবার শুরু হলো দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্র। আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা, তিনি কখনো মাথা নত করেননি কোন অন্যায়ের সাথে। ধন্য পিতার, ধন্য কন্যা তিনি।

আমি যমুনা পারের হলেও আমার শ্বশুর বাড়ি পদ্মা নদীর পাড়ে। দুইবার গিয়েছিলাম আমার দুই মেয়েকে নিয়ে ফেরী পথে। তখন যে কষ্ট হয়েছিল আমার মেয়েদের নিয়ে, তা এখানে বর্ণনা করলাম না। শেষবার আমাদের কারের পাশেই ছিল মৃতদেহ বহনকারী একটি এম্বুলেন্স। আমার মেয়েরা তখন আরো অনেক ছোট ছিল এবং তারা অনেক কিছুর সাথেই অভ্যস্ত ছিল না। আমার ছোট মেয়ে মর্মর ফেরির কোণায় লোহায় লেগে পা কেটে গেলো, আমাদের সে যে কি টেনশন। যাই হোক সমস্ত কিছুর অবসান ঘটিয়ে পদ্মা নদীতেও “ফেরি অধ্যায়ের” অবসান হতে যাচ্ছে আগামী ২৫ জুন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা, বাংলাদেশের মানুষের আশার প্রতীক, যার একক সাহসের ফসল “পদ্মা বহিমুর্খী সেতু”। দেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্জনগুলোই আওয়ামীলীগের তথা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরেই এসেছে।

কৃতজ্ঞতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

যতদিন শেখ হাসিনার হাতে দেশ,
পথ হারাবে না বাংলাদেশ।

-লেখকঃ সাবেক সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র লীগ।