Home রাজনীতি ন‌ভেম্বর জাপার কাউ‌ন্সিলের ডাক দি‌লেন রওশন এরশাদ

ন‌ভেম্বর জাপার কাউ‌ন্সিলের ডাক দি‌লেন রওশন এরশাদ

38

স্টাফ রিপোটার: আগামী ২৬ ন‌ভেম্বর জাতীয় পা‌র্টির কাউ‌ন্সিল ডে‌কে‌ছেন সংস‌দের বি‌রোধী দলীয় নেতা ও দল‌টির পৃষ্ঠ‌পোষক বেগম রওশন এরশাদ। বুধবার বি‌রোধী‌নেতার নিজ স্বাক্ষ‌রে পাঠা‌নো এক চি‌ঠি‌তে এতথ‌্য জানা‌নো হ‌য়ে‌ছে।

বিকা‌লে বি‌রোধী‌নেতার রাজ‌নৈ‌তিক স‌চিব গোলাম মসীহ এতথ‌্য নি‌শ্চিত ক‌রে‌ছেন।

কাউ‌ন্সিল সফল করতে দ‌লের মহাস‌চিব মু‌জিবুল হক চুন্নুসহ কো চেয়ারম‌্যান‌দের যুগ্ম আহ্বায়ক করা হ‌য়ে‌ছে। কাউ‌ন্সি‌ল প্রস্তু‌তি ক‌মি‌টির আহ্বায়ক হ‌য়ে‌ছেন বি‌রোধীনেতা বেগম রওশন এরশাদ।

কমি‌টির যুগ্ম আহ্বায়করা হ‌লেন দ‌লের কো চেয়ারম‌্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এমপি, কো চেয়ারম‌্যান ও সা‌বেক মহাস‌চিব রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, এমপি, আবু হোসেন বাবলা, এমপি, সালমা ইসলাম, এমপি।

ক‌মি‌টির সদস‌্য স‌চিব করা হ‌য়ে‌ছে বি‌র্ধেী নেতার রাজনৈতিক সচিব ও এরশাদ মুক্তি পরিষদের সাবেক সভাপতি গোলাম মসীহ্কে।

‌নেতাকর্মী‌দের উ‌দ্দে‌শ্যে লেখা চি‌ঠি‌তে বি‌রোধী নেতা ও দল‌টির অন‌্যতম প্রতিষ্ঠাতা বেগম রওশন এরশাদ শাহ মোয়াজ্জম হো‌সেনসহ ত‌্যাগী নেতা‌দের ফি‌রি‌য়ে এ‌নে নতুন প্রজম্মের সমন্ব‌য়ে নতুন নেতৃ‌ত্বে এক‌টি শ‌ক্তিশালী জাতীয় পা‌র্টি গঠ‌নের আহ্বান জানান।

রওশন এরশা‌দের চি‌ঠি হুবহু তু‌লে ধরা হ‌লো:

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
জাতীয় পার্টির দশম কাউন্সিল
২৬শে নম্বেভর (শনিবার) ২০২২ খ্রিস্টাব্দ
আমি বেগম রওশন এরশাদ (এমপি) বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির
প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে জাতীয় পার্টির গঠনতান্ত্রিক প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জাতীয় পার্টির দশম কাউন্সিল
আহ্বান করছি। এই কাউন্সিল ২০২২ সালের ২৬শে নভেম্বর (শনিবার) সকাল ১০:০০ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত
হবে।

আমি দীর্ঘদিন যাবৎ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং ব্যাংকক এর বামরুনগ্রাদ
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। এ সময় আমি লক্ষ্য করি, জাতীয় পার্টির গঠনতান্ত্রিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য,
নিয়মাবলি এবং পার্টির মূল আদর্শ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। বর্তমানে পার্টি গঠনতান্ত্রিক গৃহিত আদর্শ,
নিয়ম ও নীতিমালা থেকে সরে গিয়ে ভ্রান্তপথে অগ্রসর হচ্ছে।
২০১৪ সালের ২রা ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টি দেশের
সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা সংরক্ষণ ও দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ অক্ষুন্ন রেখেছে। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঘোষিত উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখতে মহাজোটের অন্তর্ভুক্তিতে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ফলে মহাজোট সরকার গঠিত হয়। এ সময় পার্টির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সরকারের মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভুক্ত হন। পার্টির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান হিসেবে আমি জাতীয় সংসদ এর বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হই। বিদ্যমান রাজনৈতিক ধারাবাহিকতায় জাতীয় পার্টি ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।

জাতীয় পার্টি একটি মাল্টি ক্লাস গণতান্ত্রিক দল হিসেবে নির্বাচন বর্জনের সংস্কৃতি লালন করে না। জাতীয় পার্টির অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগীতার কারণেই আজ পদ্মা সেতুর মতো বিশে^র অন্যতম বৃহত্তর অবকাঠামো বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্মিত হয়েছে। জাতীয় পার্টিপদ্মা সেতু নির্মাণের অন্যতম কৃতিত্বের অংশীদার। জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গের উচিৎ এই কৃতিত্বের অংশীদার হয়ে জাতিকে আশ^স্ত করা। কিন্তু নেতৃত্বের শীর্ষস্থান দখল করা নেতৃবৃন্দ এই কৃতিত্বের অংশীদারীত্বের বিষয়টি জনগণের কাছে তুলে ধরার বিষয়ে অনীহা মনোভাব পোষণ করছেন, যা পার্টির মূল নীতিমালা বহির্ভূত কাজ।
চলমান পাতা-২
দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, জাতীয় অর্থনীতিতে লুটপাট এবং রাষ্ট্রীয় অর্থ বিদেশে পাচার ইত্যাদি বিষয়ে গোটা দেশবাসীকে সচেতন করা একান্ত আবশ্যক। সীমান্তে খুন বন্ধ, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে সমুন্নত রাখা এবং আমাদের প্রিয় নবী রসূলে করিম হযরত মুহম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে ভিনদেশীদের ঔধত্ব্যপূর্ণ আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। বর্তমানে এসব গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জাতীয় পার্টির ভূমিকা অত্যন্ত দুর্বল। আমি সাংগঠনিকভাবে তৃণমূলের কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে যোগ্যতর নেতৃত্বনির্বাচন এবং বিপরীত গোষ্ঠীর অসৎ আয়ের বিনিময়ে নেতৃত্বপ্রদান এবং ত্যাগী নেতাকর্মীদের বসিয়ে দেওয়ার প্রবনতা জাতীয় পার্টির ঘোষিত নীতির বিপরীত।
স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সমুন্নত রাখা এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে জাতীয় পার্টিকে একক দল হিসেবে আবির্ভুত হতে হবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণে নিজস্ব কর্মীবাহিনী পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর দেশপ্রেমিক লড়াকু সৈনিকদের সমন্বয়ে মূল জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী পার্টি হিসেবে আবির্ভুত হতে হবে। এই কর্মকান্ডে যোগ্যতর নেতৃত্ব প্রদানে ব্যর্থতার কারণে কাউন্সিলে জাতীয় পার্টির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন এখন সময় এবং এরশাদ প্রেমিক নেতাকর্মীদের প্রাণের যৌক্তিক দাবী। তাই জাতীয় পার্টির গঠনতান্ত্রিক প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আমি আগামী ২৬ নভেম্বর ২০২২ খ্রিঃ তারিখ শনিবার সকাল ১০:০০ ঘটিকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট, রমনা, ঢাকায় জাতীয় পার্টির দশম কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করছি। আমি পার্টির নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

১. আমি কৃতজ্ঞ তাদের নিকট, যারা সময়ের পরীক্ষিত এবং পার্টির জন্য নিবেদিত প্রাণ এবং পার্টির জন্য অমানুষিক কষ্ট সহ্য করেছেন, কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন, জীবনের মূল্যবান সময় দিয়েছেন, সর্বোপরি নিজের অমূল্য জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং আমাদের ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সালের অন্ধকার দিনগুলিতে দলীয় কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেছেন। এই নেতাকর্মী এবং তাদের পরিবার-পরিজন পার্টির সকল স্বীকৃতি ও স্নেহ প্রাপ্য।
২. ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সালের সর্বকালের পরীক্ষিত ও নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীরা যারা দল ত্যাগ করেছেন বা চলে গেছেন তাদের সম্মানের সাথে ফিরিয়ে আনতে হবে। বিশেষ করে এখন যারা জনাব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জনাব কাজী জাফর ও জনাব নাজিউর রহমান মঞ্জুর দলে আছেন।
৩. পার্টিকে অবশ্যই নতুন প্রজন্মের তরুণ নেতাদের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের পার্টিতে আমন্ত্রণ ও স্থান করে দিতে হবে, যাতে আমরা আমাদের এমপি কোটার অন্তত ৫০% এই নতুন প্রজন্মের তরুণদের দলের জন্য মনোনীত করতে পারি, পুরুষ এবং মহিলা উভয়েই।
৪. পার্টিকে অবশ্যই সৎ এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পেশাদার, প্রাক্তন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও এনজিও প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে।
জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য পার্টিকে প্রস্তুত ও
শক্তিশালী করতে হবে।
৫. অনুগ্রহ করে কাউন্সিলের আগে, উপরের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য অর্জন করুন। এই লক্ষ্যে সামগ্রিক কর্মকান্ড ও তৃণমূল পর্যায়ে দেশব্যাপী নেতাকর্মীদের সমন্বয়ের জন্য
(পার্টির কো-চেয়ারম্যান)
১. ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এমপি ।
২. জনাব রুহুল আমিন হাওলাদার, সাবেক মহাসচিব।
৩. জনাব কাজী ফিরোজ রশীদ, এমপি।
৪. জনাব আবু হোসেন বাবলা, এমপি।
৫. জনাব মুজিবুল হক চুন্নু , এমপি।
৬. মিসেস সালমা ইসলাম, এমপি।
উক্ত কাউন্সিলে উপরে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ যুগ্ম আহ্বায়ক থাকবেন ও আমার রাজনৈতিক সচিব এরশাদ
মুক্তি পরিষদের সাবেক সভাপতি ও পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জনাব গোলাম মসীহ্কে সম্মেলন প্রস্তুতি
কমিটির সদস্য সচিব পদে নিয়োগদান করিলাম।

(বেগম রওশন এরশাদ, এমপি)
প্রধান পৃষ্ঠপোষক জাতীয় পার্টি,
কাউন্সিলের আহ্বায়ক ও বিরোধী
দলীয় নেতা বাংলাদেশ জাতীয়
সংসদ।