Home সারাদেশ নিশাতকে সংসদে দেখার আশা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সবার

নিশাতকে সংসদে দেখার আশা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সবার

18

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: মৌলবাদের আগ্রাসনে নারীদের ঘর থেকে বের হওয়াটাই যখন দায় ছিল- তখন কলেজছাত্রী নিশাত আওয়ামী লীগের ঝান্ডা হাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজপথ কাঁপিয়েছেন। দলের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন অগ্রভাগে। রাজনীতির কালো অধ্যায় ওয়ান ইলিভেনের সময় নিশাত তার দৃপ্তকণ্ঠে আওয়াজ তুলেছিলেন ‘শেখ হাসিনার মুক্তি চাই’। নারীনেত্রী ও আইনজীবী তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাতকে বলা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজনীতির অগ্নিকন্যা।
নেত্রীর মুক্তির আন্দোলন থেকে শুরু করে দলের সকল কর্মকাণ্ডে তৃণমূলের নারীদেরও সম্পৃক্ত করেছিলেন তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তার নেতৃত্বেই আওয়ামী রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ এখন উল্লেখযোগ্য। শুধু আন্দোলন-সংগ্রামই নয়, ক্ষমতায় থাকাকালে শেখ হাসিনার অভূতপূর্ব উন্নয়নের কথাও তুলে ধরেছেন নিশাত। এবার তাই দলে শ্রম আর ত্যাগ বিবেচনায় সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে নিশাতকে চান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষজন।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নারীদের কল্যাণে কাজ করেন নিশাত। পারিবারিক কলহে অসহায় নারীদের আইনী সহায়তা প্রদান,দরিদ্র নারীদের ভাগ্য পরিবর্তনে তার ভূমিকা অসামান্য। জাতিসংঘের ইউএন উইম্যান এবং ইউএন সিডিএফ প্রতিনিধিদল ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিনিধি দল তার কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তনয়া সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের অনুপ্রেরণায় নিরবে প্রতিবন্ধীদের জন্যও কাজ করে যাচ্ছেন নিশাত। তিনি সুইড বাংলাদেশ পরিচালিত আসমাতুন্নেছা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ১৫ বছর প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে সুইড বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সাধারণ সম্পাদক নিশাত। এছাড়াও তিনি ড্রিম ফর ডিসএ্যাবিলিটি ফাউন্ডেশন, ড্রিম ফর ডিসএ্যাবিলিটি ফাউন্ডেশন হুইল চেয়ার ক্রিকেট টিম, ড্রিম ফর ডিসএ্যাবিলিটি ফাউন্ডেশন ফিজিক্যাল চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টিমের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রাজীতিতে নিশাতের পদচারণা:
১৯৮৯ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে পদচারণা শুরু হয় নিশাতের। এরপর পর্যায়ক্রমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের মহিলা সম্পাদিকা, জেলা ছাত্রলীগের মহিলা সম্পাদিকা নির্বাচিত হয়ে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ওই বছরই জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত একই পদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
অগ্নিকন্যা খ্যাত নিশাত ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে তৎকালীন বিএনপি-জামায়েত জোট সরকারের রোষানলে পড়েন। দ্রুত বিচার আইনে তার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা ও আদালতে ২টি মামলা হয়। পরবর্তীতে দলীয় সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের তত্ত্বাবধানে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় ফিরে আসেন নিশাতসহ মামলার অন্যান্য আসামিরা।
আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে নিশাত সাংগঠনিক কর্মকান্ডে বরাবরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। জেলা আওয়ামী লীগের ২০২২ সালের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের সম্মেলনে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ব্যাপক প্রশংসা পান।
এছাড়া জাতীয় সংসদ এবং স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে দল অন্তপ্রাণ নিশাত দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় সবসময় মুখ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনে নারী প্রচারকর্মীদের প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন নিশাত। প্রায় ১৫শ’ নারীকর্মী তার নেতৃত্বে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ঘরে ঘরে গিয়ে গণসংযোগ এবং প্রচারণা চালিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে নারীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে নারী সমাবেশের আয়োজন হয় তার নেতৃত্বে।
জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন:
নিশাত ২০১৪ সালের ৩১শে মার্চ অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৭৫ হাজার ৫৫২ ভোট পেয়ে নারী ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধির চেয়ে প্রায় ১৬ হাজার আর বিজয়ী চেয়ারম্যান এবং সাধারণ আসনের ভাইস চেয়ারম্যানের চেয়ে ১৭ হাজারেরও বেশী ভোট পান। নবম ও একাদশ সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য পদ পেতে দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে দলের মনোনয়নের জন্যে আবেদন করেছিলেন নিশাত।
চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতা:
সমাজ উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকার জন্যে ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হন নিশাত। এছাড়া নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ২০২০ সালের ৮মার্চ জাতীয়ভাবে দেশের অন্যতম শীর্ষ ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’ কর্তৃক ‘আনস্টপ্যাবল ওম্যান অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন নিশাত।
রাজনীতির পাশপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিভিন্ন সামজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডও করে যাচ্ছেন নিশাত। তিনি যুক্ত আছেন জেলার কয়েকটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনে। ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’র প্রতিনিধি হয়ে দরিদ্র নারী সমাজের কল্যাণে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ করেছেন তিনি। ক্রীড়াঙ্গণেও তার নাম সমুজ্জ্বল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মহিলাদের ক্রীড়া উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে তার। সাংবাদিকতার জগতেও আছে বিচরণ। ২০০৭ সালে তিনি নারী সাংবাদিকতায় ‘সালমা সোবহান ফেলোশিপ’ (ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া) অর্জন করেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় সাপ্তাহিক ‘গতিপথ’ এর সম্পাদক।
আওয়ামী লীগের দু:সময়ের কর্মী, অবহেলিত নারীদের কণ্ঠস্বর তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাতকে এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করার দাবি উঠেছে সর্বমহলে।
ড্রিম ফর ডিসএ্যাবিলিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হেদায়েতুল আজিজ মুন্না বলেন-প্রতিবন্ধীদের জীবন-মান উন্নয়নে,কল্যানে তার অনেক অবদান রয়েছে। বিশেষ করে অটিজম আক্রান্তসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধীদের ঘর থেকে বের করে এনে শিক্ষা দানে অনন্য নজির তৈরী করেছেন। আমরা মনে করি নারী সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি মনোনীত হলে শিক্ষা-স্বাস্থ্য
ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমরা আরো বেশী সুবিধে নিতে পারবো।
তরী বাংলাদেশ সংগঠনের সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত সক্রিয় রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত এবং পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন। সেবামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেশ পরিচিত এবং দলমত নির্বিশেষে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে তার। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ পেলে তিনি নিঃসন্দেহে ভালো করবেন বলে আশা করি।
জেলা নাগরিক ফোরাম সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা রতন কান্তি দত্ত বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এডভোকেট নিশাতকে নারী সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনীত করার দাবী রাখছি। দলের সকল কর্মকান্ডে তিনি যেমন অগ্রণী তেমনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনেও সোচ্চার। মোটকথা সকল প্রয়োজনে সাধারণ মানুষ তাকে কাছে পান।

অ্যাডভোকেট তাসলিমা সুলতানা খাম নিশাত বলেন, ছাত্র রাজনীতি থেকে এখনও পর্যন্ত মাঠের কর্মী হিসেবেই আওয়ামী রাজনীতি করছি। আমি যখন ছাত্রলীগে যোগ দেই- তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ তেমন ছিলনা। নারীদের দমিয়ে রাখা হতো। পথে-প্রান্তরে ঘুরে নারীদের জাগ্রত করেছি। এখন দলীয় কর্মকান্ডে মহিলা আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ এবং অবদান অনস্বীকার্য। দলের জন্য আমরা অনেক ত্যাগও আছে। রাজপথে লড়াই করতে গিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়েছে। নেত্রীর প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তিনি যদি আমার শ্রম আর ত্যাগ বিবেচনা করে আমাকে একবার সুযোগ দেন, আমি আমার সবটুকু দিয়ে তার প্রতিদান দেব। সংসদে যেতে পারলে আরও বেশি করে অবহেলিত এবং প্রতিবন্ধীসহ সবার জন্য কাজ করতে পারব।