Home জাতীয় দৌলতপুরে ২৬টি অবৈধ ইটভাটায় অবাঁধে পুড়ানো হচ্ছে জ্বালানী কাঠ : উজাড় হচ্ছে...

দৌলতপুরে ২৬টি অবৈধ ইটভাটায় অবাঁধে পুড়ানো হচ্ছে জ্বালানী কাঠ : উজাড় হচ্ছে ফসলি জমি

39

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ২৬টি অবৈধ ইটভাটায় অবাঁধে পুড়ানো হচ্ছে কাঠ। একই সাথে ফসলি জমির মাটি কেটে অবৈধ এসব ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে মাটি। ফলে উজাড় হচ্ছে ফসলি জমি। এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় থেকে নিদের্শ দেওয়া হলেও সে নির্দেশ মানা হয়না দৌলতপুরে। দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসনের নীরবতার কারণে অবৈধ এসব ইটভাটা মালিকরা অবাঁধে কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশ করে তুলছে বিপন্ন।
দৌলতপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রন) আইন ২০১৩ সংশোধিত ২০১৯ আইন না মেনে দৌলতপুরে ২৬টি অবৈধ ইঁটভাটার মধ্যে দু’একটি বাদে প্রায় সবগুলো ইটভাটাতেই দেদারসে পুড়ানো হচ্ছে কয়লার পরিবর্তে জ্বালানী কাঠ বা কাঠের গুড়ি। এরফলে উজাড় হচ্ছে সবুজ বৃক্ষ। উপজেলার বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকাধীন ফলের বাগান বা বনাঞ্চল থেকে গাছ কিনে এসব অসাধু ভাটা মালিকরা তাদের ইটভাটায় জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহার করছে। আর এসব ইটভাটাগুলো থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় দূষিত হয়ে পড়ছে চারপাশের পরিবেশ। এতে একদিকে যেমন উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল অপরদিকে পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে হুমকির মুখে। এছাড়াও মাঠের আবাদী কৃষি জমির মাটি কেটে সরবরাহ করা হচ্ছে এসব অবৈধ ইটভাটায়। এরফলে কৃষি জমিও হচ্ছে সাবাড়।
দৌলতপুর উপজেলার হাসপাতাল রোডের সরকারী শেখ ফজিলাতুনেছা মুজিব মহিলা কলেজ সংলগ্ন স্থানে গড়ে ওঠা ৪টি ইটভাটাসহ কল্যানণপুর, মরিচা কোলদিয়াড়, ডাংমড়কা, মানিকদিয়াড়, সাদীপুর, রিফায়েতপুর, চকদৌলতপুর, সোনাইকান্দি, ঝাউদিয়া, সংগ্রামপুর, পিয়াপুর মাদিয়া, বড়গাংদিয়া, বোয়ালিয়া, স্বরুপপুর ও প্রাগপুর এলাকার সব ইটভাটায় হাজার হাজার মন গাছের গুড়ির স্তুপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয় উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় ছোট-বড় ৯টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটাতেও কয়লার পরিবর্তে পুড়ানো হচ্ছে বনাঞ্চলের সবুজ বৃক্ষ। দৌলতপুর উপজেলার সদরে স্বরুপপুর, মানিকদিয়াড় ও সাদীপুর এলাকার ইটভাটাসহ সব ইটভাটাতে অবাঁধে কাঠ পুড়ানো হলেও প্রশাসন রয়েছে নীরব। উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন লতিবমোড়ে প্রতিদিন প্রকাশ্যেই ট্রাকভর্তি জ্বালানী কাঠ ওজন দেওয়া হয়ে থাকে। আর এসব নিষিদ্ধ ইটভাটায় ফসলী জমি থেকে মাটি কেটে সেই মাটি দিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে ইট। প্রতিটি ভাটায় এক রাউন্ড ইট পুড়াতে সময় লাগে ১২-১৫ দিন। সে হিসেবে একটি মৌসুমে প্রায় ১২ থেকে ১৫ রাউন্ড ইট পুড়ানো সম্ভব। এক রাউন্ড ইট পুড়াতে ১০ থেকে ১২ হাজার মন জ্বালানী কাঠের প্রয়োজন হয়। সে হিসেব অনুযায়ী প্রতিটি ইটভাটায় এক মৌসুমে একলক্ষ মন বা তারও বেশী জ্বালানী হিসেবে সবুজ বৃক্ষ বা কাঠ পুড়ানো হলে ২৬টি ইটভাটায় প্রায় ২৬ লক্ষ মন বা তারও বেশী কাঠ পুড়ানো হয়ে থাকে। এবছরও তাই হচ্ছে। এছাড়াও ইটভাটাগুলো সরকারী নিয়ম নীতি না মেনে যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মত উর্বর ফসলী জমি ও জনবসতি এলাকায় গড়ে উঠায় ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় শিশুদের শ্বাসকষ্ট ও স্বাস্থ্যহানী ঘটছে, পরিবেশ হচ্ছে বিপর্যস্থ। সেই সাথে আবাদী জমি ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি জমির উর্বর শক্তি লোপ পাচ্ছে।
এদিকে অবৈধ এসব ইটভাটার বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল জব্বার গত সপ্তাহে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন ২০১৩ সংশোধিত ২০১৯ আইনে ৩টি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। এসময় তিনি জনস্বার্থে এ অভিযান অব্যাহত থাকার কথাও জানিয়েছেন।
তবে ফসলি জমি ও পরিবেশ রক্ষার জন্য অবৈধ এসব ইটভাট বন্ধে প্রশাসনের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন পরিবেশবিদ সহ এলাকার সচেতন মহল।