Home সারাদেশ দৌলতপুরে প্রতিদিন জুয়ার আসর : খেলা চলে কোটি টাকার : প্রশাসন নিবর

দৌলতপুরে প্রতিদিন জুয়ার আসর : খেলা চলে কোটি টাকার : প্রশাসন নিবর

34

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে নিরাপদ ও নির্বিগ্নে প্রতিদিনই বসছে জুয়ার আসর। এসব জুয়ার আসরে কোটি কোটি টাকা জুয়া খেলা হয়ে থাকে। কোন কোন জুয়া খেলার আসর যুগ যুগ ধরে চলে আসলেও প্রশাসনের তেমন নজরদারি দেখা যায়না বলে ভূক্তভোগী এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ রয়েছে। জুয়া খেলা বন্ধে দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসনের আইন শৃঙ্খলা মাসিক কমিটির সভায় একাধিকবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থাপন করলেও বিষয়টি প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ আমলে নেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে। উল্টো অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে বাকবিতন্ডায় জড়াতে দেখা গেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।
তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৮ থেকে ১০টি স্পটে বা স্থানে প্রতিদিন বসে জমজমাট জুয়ার আসর। এসব জুয়ার আসরে কোটি কোটি টাকার জুয়া খেলা হয়ে থাকে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বাঁশঝাড় বা ঝোপ জঙ্গলে বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে এসব জুয়ার আসর। জুয়া খেলতে গিয়ে অনেকে সর্বশান্ত হয়েছেন। আবার প্রতিদিনই কেউ না কেউ সর্বস্ব হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন। এসব আসরে দৌলতপুরের বিভিন্ন এলাকা ও পার্শ্ববতী উপজেলা থেকেও জুয়াড়িরা জুয়া খেলতে আসেন। এসব স্থানে জুয়া খেলা বন্ধে বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা একাধিকবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় উপস্থাপন করলেও চোখে পড়ার মত আইনগত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে চরম হতাশা ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জুয়া খেলে সর্বশান্ত হওয়া এক ব্যক্তি বলেন, দৌলতপুরে অন্তত ৮ থেকে ১০টি স্থানে জুয়ার আসর বসে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য রিফাইতপুর ইউনিয়নের তেলিগাংদিয়া গ্রাম। এখানে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে জুয়া খেলা। একইভাবে সদর ইউনিয়নের দৌলতখালী গ্রামের কয়েকটি স্থানে নিয়মিত বসে জুয়ার আসর। এছাড়াও উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বিশ্ববাঁধ, হোগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের কল্যাণপুর মাঠপাড়া গ্রামে, মরিচা ইউনিয়নের কোলদিয়াড় গ্রামে, মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ এলাকায় ও বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বোয়ালিয়া মাঠসহ আসপাশের মাঠেও নিয়মিত বসে জমজমাট জুয়ার আসর। এছাড়াও উপজেলা বাজার পূর্বপাড়াসহ উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন আসপাশের বিভিন্ন দোকানের মাচায় তাস খেলাসহ বিভিন্ন কায়দায় জুয়ার আসর বসে থাকে। প্রায় দু’বছর আগে তারাগুনিয়া এলাকার সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের এক মহরার জুয়া খেলতে গিয়ে প্রাণও হারিয়েছেন। একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে এসব জুয়া খেলা পরিচালনা করে আসছেন। এদেরমধ্যে রয়েছেন তেলিগাংদিয়া গ্রামের বাবু, হোসেনাবাদ এলাকার লিটন, কল্যাণপুরের সজীব, বোয়ালিয়ার মানিক, বিশ্ববাঁধ এলাকার জহিরুল ও জুয়েল উল্লেখযোগ্য। এরা পুলিশকে ম্যানেজ করে এসব জুয়ার আসর বসিয়ে থাকেন বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় বয়োজ্যেষ্ঠ এক গণমাধ্যমকর্মী ও এক ইউপি চেয়ারম্যান জুয়া খেলা বন্ধে বক্তব্য দিতে গেলে সেখানে উপস্থিত দৌলতপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম তর্কে লিপ্ত হোন ও বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এসময় সভায় উপস্থিত সকল সদস্য গোস্বা প্রকাশ করেন।
জুয়া খেলা বন্ধের বিষয়ে রিফাইতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ বাবলু বলেন, তেলিগাংদিয়া গ্রামে জুয়া খেলা বন্ধে আইন শৃঙ্খলার মাসিক সভায় একাধিকবার উপস্থাপন করেও কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
একই বিষয়ে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল বলেন, আল্লাহ্র ত্রিশদিন বিশ্ববাঁধে জুয়ার আসর বসে। জুয়া খেলা বন্ধে কিছুদিন আগেও আমরা ১৪ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দৌলতপুর থানার ওসি’র চায়ের দাওয়াতে গিয়ে বলেছি এবং একাধিকবার আইন শৃঙ্খলার মাসিক সভাতেও বলেছি তাতে কোন লাভ হয়নি। পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জুয়ার আসর থেকে কোন অবৈধ সুবিধা নেয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন মাঝে মধ্যে পুলিশ জুয়াড়িদেরকে ধরে এবং টাকার বিনিময়ে আবার ছেড়েও দেয়।
জুয়া খেলার বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি সারা জীবনই জুয়া ও মাদকের বিপক্ষে। দৌলতপুরের কোন কোন জায়গায় জুয়া খেলা চলে এটা আমি জানতাম না, এটা আপনার কাছ থেকেই আমি প্রথম শুনলাম। গত মাসেও জুয়ার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা দিয়েছি। কোন কোন স্পটে জুয়া চলে তার সঠিক তথ্য পেলে সেসব স্পটে পুলিশ পাঠিয়ে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুয়া খেলা বন্ধে জুয়া খেলায় জড়িত চিহ্নিত জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভূক্তভোগী অভিভাবক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ। একইসাথে তারা প্রশাসনে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষেরও দৃষ্টি কামনা করেছেন।