Home স্বাস্থ্য দেশে ৫ কোটি থাইরয়েড রোগীর ৩ কোটি নারী

দেশে ৫ কোটি থাইরয়েড রোগীর ৩ কোটি নারী

39

ডেস্ক রিপোর্ট: হরমোন সংক্রান্ত রোগগুলো নারীদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও সংকোচের কারণে নারীরা স্বাস্থ্যসেবা কম নেন। ফলে জটিলতা বাড়ে। আবার ডায়াবেটিস বা ওবেসিটিও বেশি হয় নারীদের। কিন্তু এসব রোগের চিকিৎসাও তারা নিতে আসেন কম।

বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস) তথ্য মতে, দেশে হরমোনজনিত রোগী প্রায় ৫ কোটি। এর মধ্যে ৩ কোটি নারী। বিশ্বব্যাপী এ রোগে ভুগছেন ৭৫ কোটি মানুষ। এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৯ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী থাইরয়েড দিবস পালিত হয়ে আসছে। থাইরয়েড সমস্যা হলে হৃদস্পন্দন হ্রাস পায়, ঠান্ডায় স্পর্শকাতরতা বাড়ে, হাতে অবশ অবশ অনুভূতি হয়ে ঘাড়ের পরিবর্ধন শুরু হয়। এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য, মেয়েদের মাসিকে প্রচুর রক্তপাত হয় এবং চুল ও ত্বকে শুষ্কতা দেখা দেয়। থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে সমস্যা হলে মৃদু থেকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, ঘাড় নড়াচড়া করলে অথবা কোনো কিছু গিলে খেতে গেলে অস্বস্তি অথবা ব্যথা হয়ে থাকে। সর্দি (ফু), হাম অথবা মাম্পসের মতো ভাইরাসজনিত রোগের সময় এ রোগটি দৃশ্যমান হয় বেশি।

অবসাদ, বিষণ্ণতা, ভুলে যাওয়ার সমস্যার রোগের নাম ‘থাইরয়েড’। এটি হরমোনজনিত একটি সমস্যা। থাইরয়েড প্রজাপতির ডানার মতো শরীরের একটি গ্রন্থি। যা গলার ষড়যন্ত্রের দুপাশে থাকে। এ গ্রন্থির রং বাদামি। ঘাড়ের কাছে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসারিত হরমোন শরীরের মেটাবলিজমকে নিয়ন্ত্রণ ও শরীরের প্রতিটি কোষকে প্রভাবিত করে। এই হরমোন শরীরের শক্তি, পুষ্টি ও অক্সিজেন উৎপাদন করতে সহায়তা করে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট অ্যান্ড ডায়াবেটোলজিস্ট বাংলাদেশের প্রসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন এক গবেষণার বরাত দিয়ে বলেন, বাজারে থাকা ১০ ব্র্যান্ডের লবণ পরীক্ষা করে দেখা গেছে তাতে আয়োডিনের মাত্রা ঠিক নেই। লবণের এই মাত্রা ঠিক করা অতি জরুরি। তিনি বলেন, দেশে ছয়টি মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। উন্নত বিশ্বে এই মৌলিক অধিকার সাতটি। এর মধ্যে সপ্তমটি হচ্ছে থাইরয়েড হরমোন বিষয়ক তথ্য অধিকার। থাইরয়েডজনিত রোগ বিশ্বের ১ নম্বর রোগ। তাই এই রোগ প্রতিরোধ কিংবা চিকিৎসার ক্ষেত্রে জনসচেতনতাই মুখ্য। থাইরয়েড হরমোন কম বা বেশি নিঃসৃত হওয়া উভয়ই রোগের সৃষ্টি করে। তাই বিয়ের আগে কিংবা গর্ভধারণের আগে নারীদের অবশ্যই থাইরয়েড পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। এ রোগের সম্ভাবনা থাকলে যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে তারপর গর্ভধারণ করা উচিত। তা না হলে বাচ্চাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

হরমোন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. হাফিজুর বলেন, প্রতিটি বাচ্চার জন্মগ্রহণের পর বাধ্যতামূলকভাবে থাইরয়েড পরীক্ষা নিশ্চিত করা উচিত। কেননা বিকলাঙ্গ বাচ্চা আমাদের কারো কাম্য নয়।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে শহরের ২০ থেকে ৩০ ভাগ গর্ভবতী নারী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। আর গ্রামের পরিস্থিতির কোনো রেকর্ড নেই। তাই ধারণা করা যায়, সেখানকার অবস্থা আরো করুণ। এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ না থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এ হরমোনের তারতম্যের ফলে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, হঠাৎ করে শরীর মোটা ও চিকন হওয়া, মাসিকের বিভিন্ন সমস্যা, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, হার্টের সমস্যা, চোখ ভয়ংকর আকারে বড় হয়ে যাওয়া, বন্ধ্যাত্ব, এমনকি ক্যানসারের সৃষ্টি হতে পারে। সাধারণত একজন পুরুষের বিপরীতে ১০ জন নারী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে বলা হয়, সব বয়সের মানুষের স্ক্রিনিং, আয়োডিনের অভাব, ভেজাল খাদ্য ও আর্সেনিকযুক্ত পানি পান না করা এ রোগের প্রধান প্রতিরোধক। পাশাপাশি বাজারের লবণগুলোর আয়োডিনের মান নিশ্চিত করতে পারে।

হরমোন বিশেষজ্ঞ ডা. তানজিনা হোসেন বলেন, হরমোনজনিত সমস্যাগুলো নারীদেরই বেশি হয়। যে কোনো রোগেই নারীকে সচেতন হতে হবে। সুস্বাস্থ্য রক্ষা ও চিকিৎসাসেবা গ্রহণে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়াতে হবে।-ইত্তেফাক