Home রাজনীতি দেশে ফিরেই জামায়াত নেতাকে ‘মানবতাবাদী’ বললেন নুর

দেশে ফিরেই জামায়াত নেতাকে ‘মানবতাবাদী’ বললেন নুর

26

ডেস্ক রিপোর্ট: ইসরাইলের লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি স্বীকারের পর দেশে ফিরেই জামায়াত ইসলামের পক্ষে বক্তব্য দিলেন গণপরিষদের সদস্য সচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জঙ্গিবাদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকার অপরাধে গ্রেফতার জামায়াত ইসলামের আমিরের প্রসঙ্গ তুলে তাকে ‘মানবতাবাদী লোক’ হিসেবে অভিহিত করেন নুর। এ সময় তিনি নিজের নিরপত্তা হুমকির কথা উল্লেখ করে বলেন, জামায়েতের আমীরের মতন একজন মানবতাবাদী লোককেও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যারা জেলে নিতে পারে আমাকে নেয়া তো তাদের জন্য কোন ব্যাপার না।
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানকে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ গ্রেফতার করে। এর আগে সরাসরি জঙ্গিদের সঙ্গে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেফতার করা হয় তার ছেলে চিকিৎসক রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহ। ছেলে জঙ্গি ট্রেনিংয়ের জন্য হিজরত করে এবং তার ছেলে একটা গ্রুপসহ বান্দরবানের পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা করে যেতে না পেরে শফিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরবর্তীতে জামায়াত আমির তাঁকে (ছেলেকে) নিরাপদে ফিরিয়ে আনার সব ব্যবস্থা করেন। এ সবকিছু প্রমাণিত এবং শফিকুর রহমান এ সব কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু তার জঙ্গি সম্পৃক্ততাকে নুর ‘জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ’ এবং মুক্তিযুদ্ধকালে যুদ্ধাপরাধ করা এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কার্যক্রমে জড়িত জামায়াত ইসলাম নেতাকে ‘মানবতাবাদী লোক’ হিসেবে অভিহিত করে নুর। যা স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করে, তিনি দেশের মৌলবাদী ডানপন্থী রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে যাচ্ছেন।

অবশ্য সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত হওয়ার নুরের জন্য নতুন কিছু নয়। জনপ্রিয়তা অর্জনের শুরু থেকেই তিনি বিভিন্ন সময় তার রূপ বদলেছেন। ডাকসু নির্বাচনে তার ডাকে সারা দিয়ে যখন বাম বেশ কিছু দল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়, সেখানেই নিজে পদত্যাগ করেননি নুরুল হক নুর।
সম্প্রতি দুবাই সফরে গিয়ে ইসরাইলি লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ছবিটি শুরুতেই ‘এডিটেড’ বলে প্রচারণা শুরু করেন নুর এবং তার অন্যতম সহযোগী এবং সমর্থক তারেক। এই ছবির বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ও ছবি পোস্ট করতে থাকেন তিনি।

এমনকি বৈঠকের ঘটনার সমালোচনা করায় আওয়ামী লীগের ওয়েব টিমের সমন্বয়ক ও বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তন্ময় আহমেদকে শিবির বলেও প্রচার করে তারেক ও নুরের সহযোগীরা।

নুরের সহযোগী তারেকের ফেসবুকে গিয়ে দেখা যায়, ডাকসুর সাবেক এই ভিপির পক্ষে বারবার প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি। এছাড়াও দেশ বিরোধী নানা বক্তব্য নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে এই যুবক। এরমধ্যে একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রোহিঙ্গাদের ট্রেনিং দিয়ে অস্ত্র, গোলা বারুদ ও গ্রেনেডসহ মিয়ানমারে পাঠানোর দাবি জানিয়েছে সে। ফেসবুকে রোহিঙ্গাদের ট্রেনিং ও অস্ত্র দেয়ার কথা বলার কয়েকদিন পরই এক ক্যাম্পে গোলাগুলিতে নিহত হয় রোহিঙ্গা।

এ ছাড়াও হিন্দুদের ধর্মীয় গ্রন্থকে চটি বলে দাবি করেন তারেক এক ভিডিওতে। তার উগ্রবাদী এমন বক্তব্যের জন্য শাস্তি না হওয়ায় আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন নুরের এই সমর্থক।

এর আগে জামায়াতের পক্ষ নিয়ে হুম্মাম কাদেরের সুরে নুর যেভাবে সাফাই গেয়েছিলেন (বাংলাদেশ ভারতের পেটের ভেতর ঢুকে যাবে) সেই বক্তব্যও প্রচার করেছেন তারেক। এবার দেশে ফিরে আবারও সরাসরি জামায়াত ইসলামের আমিরের পক্ষে বক্তব্য দিলেন তিনি। এ ছাড়াও নুরের ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডেও জামায়াতের সঙ্গে তার যোগাযোগ বাড়ানো এবং বিদেশে থাকা জামায়াত নেতাকর্মীদের সঙ্গে আরও সম্পর্ক তৈরির বিষয়ে জানান তিনি।

২০২১ সালে ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের আগে চট্টগ্রাম নগরীর জেএম সেন হল পূজামণ্ডপে হামলা হয়।

সেদিন আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ থেকে জুমার নামাজের পর মিছিল নিয়ে এসে জেএম সেন হল পূজামণ্ডপের গেইট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা চালায় হামলাকারীরা। পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এ হামলার ঘটনায় পরে যুব অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীসহ দশজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরুর রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ, চট্টগ্রামের ৯ নেতাকর্মী ছিল।
ইত্তেফাক