Home জাতীয় দেশে দশ মাসে পানিতে ডুবে প্রাণহানি ১২৪৯

দেশে দশ মাসে পানিতে ডুবে প্রাণহানি ১২৪৯

26

ডেস্ক রিপোর্ট: চট্টগ্রাম জেলায় পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত এ জেলায় পানিতে ডুবে মারা যায় অন্তত ৫৭ জন। নিহতদের ৪৭ জনের বয়স ৯ বছরের কম। পারিবারিক সদস্যদের অগোচরে এ সব শিশু পানিতে ডুবে প্রাণ হারায়। তাদের মধ্যে ১৩ কন্যাশিশু এবং ৩৪ ছেলেশিশু।

মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) ভার্চুয়ালি আয়োজিত সেমিনারে সমষ্টির নেতৃবৃন্দ এ তথ্য জানান। গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সমষ্টি এ সেমিনারের আয়োজন করে।

চট্টগ্রাম ছাড়া এ সময়ে আরও ১৩টি জেলায় অন্তত ৩০ জন বা তার বেশিসংখ্যক মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে ৫২ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫১ জন, কক্সবাজার ও ময়মনসিংহে ৪৮ জন, নোয়াখালীতে ৪১ জন এবং চাঁদপুরে ৩৯ জন করে মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। অন্যদিকে শরীয়তপুর জেলায় পানিতে ডুবে সবচেয়ে কম মানুষের মৃত্যু হয়। গত ১০ মাসে এ জেলায় চার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কম মৃত্যুর দিক থেকে নড়াইল, মাগুরা, বান্দরবান, রাজবাড়ী ও খুলনা জেলাগুলোও রয়েছে। এ সব জেলায় উল্লিখিত ১০ মাসে মৃত্যু ছিল দুই থেকে পাঁচ জনের মধ্যে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে এ চিত্র দেখা গেছে। গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহযোগিতায় সমষ্টি-২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে পানিতে ডুবে মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বিভিন্ন প্রবণতা বিশ্লেষণ করে আসছে।

সমষ্টির বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, গত ১০ মাসে (এ বছরের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত) ৯১৭টি ঘটনায় ১ হাজার ২৪৯ জন পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে ১ হাজার ১২২ জন পানিতে ডুবে এবং ১২৭ জন নৌদুর্ঘটনায় ডুবে বা আহত হয়ে মারা যায়। পানিতে ডুবে মৃতদের ৮৪ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের কম। চার বছর বা কম বয়সিদের মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যু সবচেয়ে বেশি, ৫৩৮ জন। পাঁচ থেকে ৯ বছর বয়সি ৩৬৪ জন, ১০-১৪ বছরের ১০৩ জন এবং ১৫-১৮ বছরের ৩৯ জন। ২০৫ জনের বয়স ছিল ১৮ বছরের বেশি।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ সময়ের মধ্যে পানিতে ডোবার ৭৯ শতাংশ ঘটনা ঘটে দিনের বেলায়। দিনের বেলায় শিশুরা পানিতে বেশি যায়। দিনের প্রথম ভাগে অর্থাৎ সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ৫০৬ জন এবং দুপুর থেকে সন্ধ্যার আগে ৪৫৪ জন মারা যায়। তবে রাতেও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সন্ধ্যা বা রাতে ২৮৯ জনের মৃত্যু হয়।

বর্ষাকাল ও এর আগে-পরের মাসগুলোতে (জুন-অক্টোবর) পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ২০২১ সালে সর্বোচ্চসংখ্যক ২১০ জন মারা যায় আগস্ট মাসে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল জুলাই মাসে ১৫৭ জন। তবে এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত শতাধিক করে মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সমষ্টির পরিচালক মীর মাসরুর জামান বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাগুলোর জাতীয়ভাবে কার্যকর তথ্যায়ন ব্যবস্থা না থাকায় বেশির ভাগ ঘটনাই গণমাধ্যমে আসে না। ফলে এ-সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায় না।

পরিবারের সদস্যদের যথাযথ নজরদারি না থাকায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পানিতে ডোবার ঘটনা ঘটে। পানিতে ডুবে ১ হাজার ২৪৯টি মৃত্যুর প্রায় ৯০ শতাংশ (১ হাজার ১৩১) ঘটে পরিবারের অন্য সদস্যদের অগোচরে। অধিকাংশ শিশু বড়দের অগোচরে বাড়িসংলগ্ন পুকুর বা অন্য জলাশয়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর বিষয়টি একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে অধিকতর গুরুত্বারোপ করেছে। সরকার ও দাতা সংস্থার যৌথ উদ্যোগে পাইলট ভিত্তিতে কয়েকটি জেলায় কিছু কিছু কাজ হচ্ছে। শিশু সুরক্ষার জন্য দেশব্যাপী এ সব কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এ বিষয়ে ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) প্রণয়ন করা হয়েছে। ডিপিপিটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। -ইত্তেফাক