ক্যামেলিয়া নিশান : ২৬ অক্টোবর আমাদের পরিবারের দুই টি বাচ্চার জন্মদিন। যদিও কয়েক বছরের আগে পরে। একজন আমার মেজো আপুর মেয়ে আমাদের মেয়ে, আমাদের ভালোবাসার দিঘী মনি। আরেকজন আমার একমাত্র ছেলে নির্ভান। দিঘী মনি পৃথিবীতে এসেছিল প্রি- ম্যাচুয়র বেবি হয়ে। সাত দিন ওকে ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছিলো। অপূর্ব সুন্দর একটা শিশু হয়ে জন্মেছিলো দিঘী। আমি খবর টা পেয়েই ছুটে গিয়েছিলাম হাসপাতালে। দেখেই বলেছিলাম একেবারে একটা দেবশিশু হয়েছে আমাদের ।
আমার মেজো আপু আমাকে দেখে বলেছিলো দেখো আমার একটা পুতুল হয়েছে। আসলেই ও একটা জ্যান্ত পুতুল হয়ে ছিলো। আর দিঘী নামটা আমারই দেয়া। আপু, কনসিভ হওয়ার পরে আমাকে নিয়ে আপু প্রায়ই যেতো ডাক্তারের চেম্বারে। আমি আর আমার আপু পাশাপাশি বাসায় থাকতাম তখন ইন্দিরা রোডে। ওর যখন যেটা খেতে ইচ্ছে করতো, আমি সেটাই আপুকে খাওয়াতাম। আসলে ও আমার বোন, বললে ভুল হবে ও ছিলো আমার মায়ের মতো। শাষণে সে এক নাম্বার, আদরেও সে এক নাম্বার। মেজোআপুকে নিয়ে আমার দেশে বিদেশে অনেক বার যাওয়া হয়েছে। সেখানে ও আমাকে আগলে রাখতো মায়ের মতো। আমার আপুর মনটা ছিলো বিশাল আকাশের মতো…উদার, মানবিক সম্পন্ন।
এখনো যেখানে যাই, সেখানেই তার সুন্দর স্নেহময় ব্যবহার এর কথা সবাই বলে। আমার ছেলে নির্ভানের জন্ম হয়েছিলো দুপুর একটায়। কিন্তু সেদিন দিঘীর ১ টাকার বউ সিনেমার সুটিং এর জন্য আপু আসতে পারছিলো না। বার বার ফোনে খোঁজ খবর নিচ্ছিলো। রাত প্রায় ১২টার দিকে ছোট্ট দিঘুমনি আর আপুর বড় ছেলে অন্তর কে নিয়ে আপু দুলাভাই সুব্রত ভাইয়া এসেছিলো হাসপাতালে। নির্ভানকে দেখে কি খুশি হোয়েছিলো আপু। কোলে নিয়ে আদর করে গোল্ডের চেইন পরিয়ে দিয়েছিলো। তখনি আপু হাসতে,হাসতে বলেছিলো ভালোই হয়েছে একই তারীখে হয়েছে ওরা, আমাদের দুই বোনের বাচ্চা সব সময় একসাথে Birthday celebrate হবে।
এর পর ঠিক পরের বছর আমরা চিলিস রেস্টুরেন্টে একসাথে জন্মদিন উদযাপন করেছিলাম। তারপরে আপু অসুস্থ হয়ে বিছানায় 🥲।এরপরেও আপুর বাসায় ও বেঁচে থাকা অবস্হায় আরো দুই বার জন্মদিন করতে পেরেছিলাম। তারপর সব শেষ। আমার আপুটা কোন আকাশের তাঁরা ★ হয়ে যে, চলে গেলো আর ফিরে, এলোনা। এলো দিঘী। ও আমাদের কাছে দিয়ে গেলো দিঘু বাচ্চাকে। করোনার কারনে দুই বছর সেভাবে জন্মদিন করা হয়নি একসাথে। গতকাল তাই ছোট ভাই নির্ভানের জন্য নিজে কেক এনে একসাথে ভাইকে নিয়ে Birthday celebrate করলো আমার মামনিটা।
আমাদের সবার প্রতি ওর অনেক মায়া, অনেক ভালোবাসা। অনেক familiar একটা মেয়ে দিঘী। এতো অল্প বয়সে বাবা, ভাই আশেপাশে আরো সবাই কে , আমাদের কে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছে। অনেক, অনেক দোয়া ও ভালোবাসা রইল মা আমার। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তোমাকে আর নির্ভানের নেক হায়াত দান করুন। সারাজীবন তুমি ঠিক এমনই থাকো। ইট কাঁঠে ঘেরা এই রঙিন শহরে বদলে যেওনা।
তোমার মায়ের মতো সুন্দর মনের, মানবিক মানুষ হও । অনেক বড় হও তুমি। তুমি অনেক বুদ্ধিমতি লক্ষি একটা মেয়ে। অনেক Talented. তোমার মেধা মননে তুমি হও অনন্য। সামনে তোমার অনেক লম্বা পথ… এগোতে হবে অনেক হিসেব করে সাবধানে, একটু ভুলে কাঙ্খিত পথটা যেনো হারিয়ে না ফেলো।
অনেক কাঁটা কে দুপায়ে মাড়িয়ে সদর্পে হেঁটে যেতে হবে তোমাকে। তোমার সাথে রয়েছে আমাদের সকলের দোয়া। মায়ের মতো হতে হবে তোমার। আমরা তো এখন তোমার মধ্যে আমার আপুকে খুঁজে ফিরি। আমার মা,তোমার নানু তার মেয়ে দোয়েল কে খুঁজে ফিরে…. আপু তুমি যেখানে থাকো শান্তিতে থাকো। আল্লাহ পাক আমার আপুকে, জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন। আমীন।
-লেখক : দীঘির খালামনি ও নির্ভানের মামনি।