Home সারাদেশ তাহের হত্যা মামলা: দুই আসামীর ফাঁসি কার্যকর

তাহের হত্যা মামলা: দুই আসামীর ফাঁসি কার্যকর

527

মো.পাভেল ইসলাম মিমুল রাজশাহী অফিস:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুই আসামি ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড বৃহস্পতিবার রাত ১০.১মিনিটে কার্যকর হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর পরই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান গেটে।
কারা সূত্র জানায়,কারা কর্তৃপক্ষ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর এক সপ্তাহ আগে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়। ফাঁসি কার্যকর করতে আটজনের একটি জল্লাদ টিম গঠন করে কারা কর্তৃপক্ষ।

এর পর তাদের প্রশিক্ষণ ও ফাঁসি কার্যকরের একাধিক মহড়া দেওয়ানো হয়। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত আটজনের মধ্যে টিম প্রধান হেন্ডেল টেনে ফাঁসি কার্যকর করেন । এ সময় তার সঙ্গে একজন সহযোগি ছিলেন। বাকি ছয়জনের মধ্যে চারজন দুই আসামীকে ধরে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে আসেন। আর দুইজন তাদের কালো কাপড়ের জম টুপি ও গলায় দঁড়ি পরিয়ে দেন।

সূত্রমতে,এক মঞ্চে এক সঙ্গে একই সময় দুই আসামীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। রাত ১০টা ১ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট তাদের দঁড়িতে ঝুলিয়ে রেখে মৃত্যু নিশ্চিতের পরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে পাঠানো হয়। জাহাঙ্গীরের লাশ পাঠানো হয় নগরীর মতিহার থানার খোঁজাপুরে। মৃত্যু জাহাঙ্গীরের লাশ পরিবারের পক্ষ থেকে তার বড় ভাই মিজানুর রহমান গ্রহন করেন।

আর মহিউদ্দিনের লাশ পাঠানো হয় তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামে।মহিউদ্দিনের লাশ গ্রহন করে পরিবারের পক্ষ থেকে তার ভাই।

ফাঁসি কার্যকরের সময় কারাগারের ডিআইজি প্রিজন, সিনিয়র জেল সুপার ও জেলার ছাড়াও জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন, মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন ।

গত ২৫ জুলাই দুই আসামির পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাত করেছেন। জাহাঙ্গীরের পরিবারের ৩৫ সদস্য তার সঙ্গে দেখা করেন। আর মহিউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে তার পরিবারের তিন সদস্য।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ। একদিন পর ৩ ফেব্রুয়ারি বাসাটির পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক এস তাহের আহমেদের গলিত মরদেহ। ওইদিন রাতে তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলমসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে।
২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন।

সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম, তার ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালাম। তবে বিচারে খালাস পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও জাহাঙ্গীরের বাবা আজিমুদ্দিন মুন্সি।

পরবর্তীতে সাজাপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিল বিভাগ মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের রায় বহাল রাখলেও নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন।

সর্বশেষ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করে। কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রায় ছয় মাস আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন তারা। সে আবেদনও নাকচ করেন রাষ্ট্রপতি। গত ৫ জুলাই সেই চিঠি রাজশাহী কারাগারে পৌঁছায়। এর পর থেকে তাদের ফাঁসি কার্যকর করার প্রস্তুতি শুরু হয়।