কয়েক বছরের ব্যবধানে খাবারের দাম প্রায় দ্বিগুণ

ডেস্ক রিপোর্ট: ‘একটা ডিম আর দুই লোকমা খিচুড়ির দাম কি ৬০ টাকা? এরা যে যেভাবে চায় সেভাবেই দাম বাড়িয়ে রাখে। কারো কোন কিছু করার নেই। এখানে এক কাপ সাধারণ চায়ের দাম ১০ টাকা, এক গ্লাস সাধারণ লেবুর শরবতের দাম ১০ টাকা। কেউ কিছু বলে না, যেভাবে পারছে দাম নিচ্ছে আর লুটে খাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণের কেউ নেই কোথাও। অথচ ‘ক্যাম্পাস শ্যাডো’র এই একটিসহ আশেপাশের কয়েকটি খাবারের দোকান কলাভবন, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষার্থীদের ভরসা।’—এসব বলতে বলতে রবিবার নিজের ক্ষোভ ঝাড়ছিলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তরের এ শিক্ষার্থী জানান, বেশ কয়েক বার তাদের দাম কমাতে বলেছিলেন, কিন্তু তাদের কোনো রা নেই। শুধু ক্যাম্পাস শ্যাডো নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর ক্যান্টিন, দোকান, ভ্রাম্যমাণ দোকানের সব জায়গায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়ে রয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য না শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রয়েছেন, না শিক্ষক রয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনগুলোতে খাবারের দাম বৃদ্ধি পেলেও কমেছে মান। গত তিন বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে খাবারের দাম হয়েছে দ্বিগুণ। দ্বিগুণ দাম হলেও খাবারের মান ক্রমান্বয়ে কমেছে। খাবারের দাম এবং মান নির্ধারণের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন কমিটি নেই, দায়িত্বপ্রাপ্তও কেউ নেই, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দেওয়ারও কোনো জায়গা নেই। হল প্রশাসন মাঝেমধ্যে পরিদর্শন করতে আসেন এবং ক্যান্টিন মালিককে সতর্ক করেই দায়িত্ব শেষ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনগুলোতে তিন ধরনের খাবার সরবরাহ করা হয়—সবজি, মাছ ও মাংস। সবজির দাম ৫ থেকে ১০ টাকা, মাছ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং মাংস ৪৫ থেকে ৬০ টাকা। কয়েক বছর আগে মাছ পাওয়া যেতো ২০ থেকে ৩০ টাকায় এবং মাংস ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, খাবার এবং পুষ্টির বিষয়টি অনেকটা আপেক্ষিক। আপনি খাবারের পেছনে কত টাকা খরচ করছেন সেটি বিবেচ্য বিষয়। এখন ২০ টাকার খাবার দিয়ে আমরা তো পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করতে পারব না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হতে হবে। সবাই সচেতন হলে খাবারের দাম এবং মান নিজেদের আয়ত্তে আনা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে শিক্ষার্থী আসিফ আহমেদ বলেন, হলগুলোতে খাবার প্রস্তুত থেকে পরিবেশন—কোনো ক্ষেত্রেই ন্যুনতম স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। আগের দিনের বেঁচে যাওয়া খাবার নতুন খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে, খাবারে পোকা, ময়লা পাওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। অন্যদিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ‘ফাও’ খাওয়া ও চাঁদাবাজির কারণে ক্যান্টিন মালিকরা খাবারের মান নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে থাকে শিক্ষার্থী আজিজুর রহমান রিজভী জানান, করোনার আগে যেখানে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা দিয়ে পুরো মাসের খাবার খরচ চালানো যেত এখন তা আর সম্ভব হয় না। এখন ভালোভাবে একটি মাস পার করতে হলে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায়ও হয় না। আগে বাড়ি থেকে ৫ হাজার টাকা আনলেই মাস চলে যেত এখন ১০ হাজারেও হিসাব মেলে না।

ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ক্যান্টিনে-ডাইনিংয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব রয়েছে শিক্ষার্থীরা যাতে নিয়মিত মানসম্মত-পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে তার ব্যবস্থা করা। হলগুলোতেও খাবারের দাম অন্যায্যভাবে বাড়ানো হয়েছে। এক তরফাভাবে যে দাম বাড়ানো হয়েছে তা বিশ্ববিদ্যালয়কে সমন্বয় করতে হবে।

খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা
খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে বাড়তি অর্থের সংস্থান করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রতিদিনের নিয়মিত খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক শিক্ষার্থী জানান, তার বাবা একজন দিনমজুর। পরিবারের খরচ মেটানোই তার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে, তাকে টাকা পাঠানো তো দূরের কথা। তাই নিজের টিউশনির টাকা দিয়েই তাকে চলতে হয়। সেই সঙ্গে পরিবারেও টাকা পাঠাতে হয়। তাই খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য খরচ কমিয়ে দিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রিত দামের মধ্যে মানসম্মত খাবার দিতে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের প্রাধ্যক্ষ মহোদয়রা আছেন। তারা নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। যদি কোনো ত্রুটি পাওয়া যায় তাত্ক্ষণিক তা সমাধানও করা হচ্ছে।
ইত্তেফাক