Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস ঢাকার ৩৫০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই

ঢাকার ৩৫০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই

25

ডেস্ক রিপোর্ট: ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। নতুন প্রতিষ্ঠান হয়েছে কয়েক হাজার। আধুনিক অবকাঠামোও পেয়েছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখনো অবহেলায় আছে এই শহিদ মিনার। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের অর্ধেকের মতো প্রতিষ্ঠানে এখনো কোনো শহিদ মিনার তৈরি করা হয়নি।
বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে খুব নিবিড়ভাবে জড়িত ঢাকার সরকারি প্রতিষ্ঠান মিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। অথচ পুরোনো এই প্রতিষ্ঠানটিতেও নেই কোনো শহিদ মিনার। বিশাল জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটিতে শহিদ মিনার না থাকলেও প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই। স্কুলটির সিনিয়র শিক্ষক শহীদুল্লাহ মীরদাহ বলেন, আমি যখন এই প্রতিষ্ঠানটির চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলাম, তখন শহিদ মিনার দেখেছি। কিন্তু সেখানে পরে মার্কেট হয়ে যাওয়া শহিদ মিনারটি ভেঙে ফেলা হয়। এরপর আর শহিদ মিনার হয়নি। একুশে ফেব্রুয়ারিতে অস্থায়ীভাবে তৈরি শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো হয়। তিনি জানান, শহিদ মিনার স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে বিভিন্ন সময় দাবি জানানো হয়েছে। ঢাকার মিরপুরে শুধু একটি প্রতিষ্ঠানই নয়। এই থানার ১৬টি প্রতিষ্ঠানে কোনো শহিদ মিনার নেই।

ঢাকা জেলার শিক্ষা অফিসার আব্দুল মজিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা জেলার মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ এবং মাদ্রাসা আছে ১ হাজার ১১টি। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩০০ প্রতিষ্ঠানেই নেই কোনো শহিদ মিনার। রাজধানীর বাড্ডার ৬৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শহিদ মিনার নেই ৪৩টিতে। ক্যান্টনমেন্ট থানার ৫২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টিতে, গুলশানের ৩৫টির মধ্যে নেই ১৩টিতে, মতিঝিলের ৫৪টির মধ্যে ১৩টিতে, ডেমরার ৮২টির মধ্যে ৩৬টিতে। মোহাম্মদপুরের ৫২টির মধ্যে ২৪টিতে। সাভারের ১০৭টির মধ্যে ৩১টিতে, ধামরাইয়ের ৫২টির মধ্যে ২৫টিতে, কেরানীগঞ্জের ৬১টির মধ্যে ১৩টিতে কোনো শহিদ মিনার নেই।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সারা দেশের চিত্র হিসাব করলে শহিদ মিনার নেই এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অন্তত ১৫ হাজার হবে।

ঢাকার কাছের জেলা মুন্সীগঞ্জের ছয়টি উপজেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৭৯টি। এর মধ্যে ১১০টি বিদ্যালয়ে রয়েছে শহিদ মিনার। জেলায় সবচেয়ে বেশি সিরাজদীখান উপজেলায় ৪১টির মধ্যে ১৪ টিতে, সদর উপজেলায় ৪০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৬টি, শ্রীনগরে ৩০টির মধ্যে ১২টি, টঙ্গীবাড়িতে ২৭টির মধ্যে ১১টি, গজারিয়ায় ২৩টির মধ্যে ১০টি ও লৌহজং উপজেলায় ১৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ছয়টিতে কোনো শহিদ মিনার নেই। রাজবাড়ি জেলায় ১৪৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৫টি, ৪৩টি কলেজের মধ্যে ৩০টি, ৭৪টি মাদ্রাসার মধ্যে ৭৩টিতে নেই শহিদ মিনার।

শিক্ষকরা বলছেন, দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। এটি ঢাকায় অবস্থিত। আর এই অধিদপ্তরের কাছের ঢাকা জেলার স্কুলগুলোর এই চিত্র। তাহলে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা কী হবে তা সহজেই অনুমেয়।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার না থাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। অনেক স্কুলে কলাগাছ, বাঁশ, কাঠ দিয়ে অস্থায়ী শহিদ মিনার গড়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তারা।

শহিদ মিনার নিয়ে শিক্ষা বিভাগের কোনো দপ্তরের কাছেই সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। দেশের মাধ্যমিক স্কুলগুলোর শহিদ মিনারের তথ্য জানতে মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক বেলাল হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তিনি বলেন, একবার শহিদ মিনার না থাকা স্কুলগুলোর তথ্য চাওয়া হয়েছিল। পাওয়া গেছে কি না, আমি জানি না। এ বিষয়ে তিনি উপ-পরিচালক আব্দুল আজিজের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। কিন্তু আব্দুল আজিজকে গত দুদিন ধরে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।

অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং ও ইভালুয়েশান) আমির হোসেন মোল্লা বলেন, এ বিষয়ে এ শাখায় তথ্য নেই।

ব্যানবেইজে যোগাযোগ করেও তথ্য পাওয়া যায়নি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ২২ হাজার ৬২৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার আছে। আর বাকি ৪২ হাজার ৯৪৩ বিদ্যালয়ে তা নেই।
ইত্তেফাক