Home জাতীয় দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় কেন শীর্ষে ঢাকা

দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় কেন শীর্ষে ঢাকা

53

ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্বে বায়ু দূষণের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশের মধ্যে বার বার শীর্ষে উঠে আসছে বাংলাদেশের নাম। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের মতে, ঢাকার বায়ুদূষণের পরিমাণ বছরে ১০ শতাংশ করে বেড়ে চলেছে।
গতকাল শুক্রবারও জনবহুল শহর ঢাকা আবারো বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে। সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ৩০৬ নিয়ে ঢাকার বাতাসের মান ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল। এ তালিকায় ভারতের দিল্লি ও কলকাতা শহর এবং পাকিস্তানের লাহোর যথাক্রমে ২৫৬, ২১২ ও ২০৩-এর একিউআই স্কোর নিয়ে তালিকার দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান দখল করেছে। একিউআই স্কোর ১০০ থেকে ২০০ পর্যন্ত ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়; বিশেষ করে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে স্বাস্থ্য সতর্কতাসহ তা জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, ৩০১ থেকে ৪০০ একিউআই স্কোরকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি ধরনকে ভিত্তি করে; যেমন-বস্তুকণা (পিএম ১০ ও পিএম২ দশমিক ৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন (ও৩)। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘হেলথ অ্যাফেক্টস ইনস্টিটিউট’ এবং ‘ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন’ বায়ুর মানের দিক থেকে এশিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত অঞ্চল বলে ঘোষণা দিয়েছে। আর বাংলাদেশকে তার শীর্ষে রেখেছে। এদিকে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় কেন বারবার শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা-এই প্রশ্নে প্রতিবছরই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হচ্ছে। প্রতিকারের জন্য সুপারিশমালাও প্রণয়ন করা হচ্ছে। তবে প্রতিকারের কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের গবেষণায় বলা হয়েছে, শীত মৌসুমে সাধারণত বায়ুদূষণ সূচক বাড়ে। কমে আসে জুন জুলাইয়ে। শুষ্ক ঋতু হওয়ায় শীতকালে ধুলাবালির পরিমাণও বেড়ে যায়। এর সঙ্গে সিমেন্ট কারখানার ধুলা বা ইটভাঁটার ধোঁয়ার মিশ্রণ হলে বায়ুদূষণের মাত্রাও আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। সঙ্গে শিল্প কারখানা,যানবাহনের কালো ধোঁয়া,কয়লা ও জৈব জ্বালানি পোড়ানোর ধোঁয়ার মিশ্রণ হলে আরও ভয়াবহ হয়। পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো: ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলাবালি।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বায়ুদূষণের জন্য ২০টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণগুলো হচ্ছে, ইটভাটা, রাস্তা নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ ও মেরামত, সেবা সংস্থাগুলোর নির্মাণকাজ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি,বড় উন্নয়ন প্রকল্প (এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল), সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, সড়ক বা মহাসড়কের পাশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বালু উত্তোলন ও সংগ্রহ, ট্রাক বা লরিতে বালু, মাটি, সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী উন্মুক্ত অবস্থায় পরিবহন, রাস্তায় গৃহস্থালি ও পৌর বর্জ্য স্তূপাকারে রাখা ও বর্জ্য পোড়ানো, ড্রেন থেকে ময়লা তুলে রাস্তায় ফেলে রাখা, ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে গিয়ে ধুলাবালি ছড়ানো, বিভিন্ন সড়কের পাশে থাকা অনাবৃত স্থান, ফুটপাত ও রাস্তার আইল্যান্ডের মাঝের ভাঙা অংশের মাটি ও ধুলা, ফিটনেসবিহীন পরিবহন থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকর ধোঁয়া, বিভিন্ন যানবাহনের চাকায় লেগে থাকা কাদামাটি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কলোনির ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো, বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল ও বাণিজ্যিক ভবনের আবর্জনা ও ধুলাবালি রাস্তায় ফেলে দেওয়া, ঢাকা শহরের দূষণপ্রবণ এলাকার ধুলা, হাসপাতালের বর্জ্য রাস্তায় ফেলা,অধিক সালফারযুক্ত ডিজেল ব্যবহার এবং জনসচেতনতার অভাব।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারকে পরামর্শ দিতে কমিটি:বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কমিটি গঠন করেছে সরকার। এ কমিটি বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে পরামর্শ দেবে। এছাড়া বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় করবে এ কমিটি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গঠন’ করে সম্প্রতি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ২৭ সদস্যের কমিটিতে সভাপতি হিসেবে রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। কমিটিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও দপ্তর-সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা সদস্য হিসেবে রয়েছেন।পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (দূষণ নিয়ন্ত্রণ/পরিবেশ) কমিটিতে সদস্য-সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।এ কমিটি বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে পরামর্শ দেবে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে।
ইত্তেফাক