Home জাতীয় ঢাকার আদালতে নিরাপত্তা বেড়েছে, ফটকে পুলিশ

ঢাকার আদালতে নিরাপত্তা বেড়েছে, ফটকে পুলিশ

22

ডেস্ক রিপোর্ট: ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর থেকে ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলার আদালত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

আজ সোমবার সকাল থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের প্রবেশপথের ফটকে অবস্থান নিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। অন্যান্য দিন এসব প্রবেশপথের ফটক খোলা থাকে। তবে আজ প্রবেশপথের মূল ফটকে তালা মেরে কেবল পকেটে গেট খোলা রাখা হয়েছে।

পালিয়ে যাওয়া দুজন নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সদস্য। তাঁরা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এই জঙ্গি সংগঠনের নেতা মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হক। যাঁর পরিকল্পনায় ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত একাধিক লেখক, প্রকাশক, ব্লগার ও সমকামী অধিকারকর্মীকে হত্যা করা হয়।
আদালতের আইনজীবীরা বলছেন, দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার পর হয়তো পুলিশ আদালত এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা বাড়িয়েছে। দুই দিন যেতে না যেতেই আবার সবকিছু আগের মতো হয়ে যাবে।

আইনজীবী মৃণাল কান্তি বাড়ৈ বলেন, ঢাকার আদালতে প্রতিদিন অনেক বড় সন্ত্রাসী, জঙ্গিদের আদালতে আনা হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকে না বললেই চলে। এসব সন্ত্রাসীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন তাঁদের সহযোগীরা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের (প্রসিকিউশন) উপকমিশনার জসিম উদ্দিন বলেন, গতকাল রোববার আদালত চত্বর থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে দুই জঙ্গি আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার পর আজ সকাল থেকে আদালতে কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। আদালতে আগের তুলনায় বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সরেজমিনে আদালত চত্বরে দেখা গেছে, অন্যান্য দিন ঢাকার আদালত চত্বরে ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকানসহ অন্যান্য দোকান বসলেও সেটি আজ দেখা যায়নি। ঢাকা আইনজীবী সমিতির ভবনের উল্টো দিক দিয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে ঢোকার পথে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ছোট পকেট গেট দিয়ে আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী জনগণ ঢুকছেন।

সকাল ১০টা ২০ মিনিটে আদালতে ঢুকেছেন বিচারপ্রার্থী ইউসুফ আলী। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য দিনের তুলনায় আদালতের প্রবেশপথে আজ বেশি পুলিশ দেখতে পেয়েছি।’

আদালতে নিরাপত্তাব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের পরিদর্শক হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আদালতে অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি পুলিশ মোতায়েন করেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। আমরাও অনেক বেশি সতর্ক রয়েছি।’
গতকাল ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল থেকে আট জঙ্গিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাচ্ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। তাঁরা যখন (সিজেএম) আদালতের প্রধান ফটকের সামনে আসেন, তখন হাতকড়া পরা দুই জঙ্গি তাঁদের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশের এক সদস্যকে মারধর শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যে আশপাশে থাকা জঙ্গিদের সহযোগীরাও পুলিশের ওপর হামলায় যোগ দেন। পুলিশের ওই সদস্যকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। তাঁদের ওপর হামলা এবং স্প্রে ছিটিয়ে সিজেএম আদালতের প্রধান ফটকের উল্টো দিকের গলি দিয়ে মোটরসাইকেলে করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে ছিনিয়ে নেন সহযোগীরা।

এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় ১০ আসামির ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তাঁরা এখন পুলিশি হেফাজতে আছেন।

দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পর বেনাপোল স্থলবন্দরসহ দেশজুড়ে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। তাঁদের ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
প্রথম আলো