Home সারাদেশ ডেঙ্গুতে সাংবাদিকের স্ত্রীর মৃত্যু মাকে খুঁজছে শিশু সাজিদ, রাই’র চোখে কান্নার সাঁতার…

ডেঙ্গুতে সাংবাদিকের স্ত্রীর মৃত্যু মাকে খুঁজছে শিশু সাজিদ, রাই’র চোখে কান্নার সাঁতার…

34

রাহাদ সুমন,বিশেষ প্রতিনিধি॥ ডেঙ্গু জ্বরে প্রিয়তমা স্ত্রীকে হারিয়ে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে সাংবাদিক এসএম গোলাম মাহমুদ রিপন দিশেহারা। দু’চোখে তার কান্নার সাঁতার,আর অমানিশার অন্ধকার। বিশেষ করে দুগ্ধপোষ্য ছেলের লালণ-পালন নিয়ে চিন্তিত তিনি। বানারীপাড়া বন্দর মডেল সরকারি ্প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী মাইশা জান্নাত রাই। ক্লাসে তার রোল নম্বর এক। প্রতিদিন মা সোনিয়া তাকে স্কুলে ও প্রাইভেট কোচিংয়ে নিয়ে যেতেন। বাসায় নিজে পরম যত্নে পড়াতেন, মুখে তুলে খাইয়ে দিতেন। সম্প্রতি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় রাই বরিশাল জেলায় প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। লেখাপড়া,খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার সমান পারদর্শিতা। তার এ সব সাফল্যে মায়ের ভূমিকা ও অনুপ্রেরণা অপরিসীম। সবকিছুতে মা ছায়ার মতো পাশে থাকতেন। মাকে হারিয়ে রাই পাগল প্রায়। আর কখনও পাবে না সে মায়ের মমতা মাখানো আদর। দুচোখে তার কান্নার সাঁতার। রাইসহ গোটা পরিবার জ্বরাক্রান্ত। ১৯ নভেম্বর তার স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু। এতে অংশ নেওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার। এদিকে অবুঝ সাজিদ মাকে খুঁজে ফিরছে। যাকে দেখছে তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছে, কাঁদছে। সবার মাঝে মাকে খুঁজছে। কারও কোলে বেশীক্ষণ থাকতে চাচ্ছেনা সে।
বাবা সাংবাদিক রিপন ছেলেকে ফিডারে দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু খাবারে আগ্রহ নেই তার। সেই রাতের পরে আর মায়ের দুধ পান করা হয়নি সাজিদের। সবার আফসোস, দুঃশ্চিন্তা, এ শিশু দুটিকে নিয়ে। ওদের বর্তমান ও ভবিষ্যত জীবন নিয়ে।
প্রসঙ্গত , ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বরিশালের বানারীপাড়া প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য ও দৈনিক যুগান্তরের উপজেলা প্রতিনিধি এসএম গোলাম মাহমুদ রিপনের স্ত্রী সোনিয়া খানম (৩২) রোববার (১২ নভেম্বর) দিবাগত রাত পৌণে ৩টার দিকে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ( বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা.রোমান বিন আহাদ রিফাত জানান,গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড জ্বর ও কাশিতে ভূগছিলেন সোনিয়া খানম। এছাড়া হার্টেও সমস্যা ছিলো তার। শুরু থেকেই তিনি তার চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। কিছুটা সুস্থবোধ করলে তাকে বাসায় পাঠানো হয়। রোববার রাত ২টার দিকে খিচুনি উঠে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়লে পুনরায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ সব ধরণের চেষ্টা করেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। প্রথম দিকের পরীক্ষায় ধরা না পরলেও মৃত্যুর পরপরই তার শরীরে ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা যায়।
সোনিয়া খানম মৃত্যুকালে বৃদ্ধ বাবা-মা,স্বামী,মেয়ে মাইশা জান্নাত রাই ও ছেলে রাইসান মাহমুদ সাজিদসহ বহু আত্মীয় স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। হাসপাতালের জরুরী বিভাগে সোনিয়া খানম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার মূূহুর্তে ও পরে অবুঝ শিশূ পুত্রের মায়ের শেষ দুগ্ধপানের দৃশ্যের কথা মনে করে সাংবাদিক রিপন ও স্বজনদের চোখে কান্নার সাঁতার। ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সোনিয়া মারা যাওয়ার পরেও শিশু পুত্রের দুগ্ধপান করার কথা স্মরণ করে জানাজার পূর্বে তার ভাসুর উপজেলার বাইশারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফকরুল আলমের কান্নাজড়িত বক্তব্য উপস্থিত সবাইকে কাঁদিয়েছে। সোমবার (১৩ নভেম্বর) বাদ জোহর উপজেলার রাজ্জাকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে বিদ্যালয় সংলগ্ন বাবার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে চির নিন্দ্রায় শায়িত করা হয়।