Home জাতীয় অসহায় মনোয়ারার খোঁজ-খবর নিলেন ঝিনাইগাতী প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ ও শেরপুরের সময়ের সম্পাদক

অসহায় মনোয়ারার খোঁজ-খবর নিলেন ঝিনাইগাতী প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ ও শেরপুরের সময়ের সম্পাদক

42

আনিছ আহমেদ (শেরপুর)প্রতিনিধিঃ শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বালিয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মোছাঃ মনোয়ারা বেগম ওরফে বানেছা বেগম। অর্থাভাবে নিজের জরাজীর্ণ বসতঘরটি মেরামত করতে না পারায় রোদ-বৃষ্টিতে কষ্টে কাটছে তার দিন-রাত। ওই অবস্থায় সরকারের কাছে একটি ঘর ভিক্ষা চান তিনি। এমন খবর পেয়েই ঝিনাইগাতী প্রেসক্লাবের সদস্য ও সিনিয়র সাংবাদিক হারুন অর রশিদ দুদু ও শেরপুরের সময়ের সম্পাদকসহ একটি টিম গত ৪ জুন ২০২২ শনিবার চলে যায় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে মনোয়ারার বসত বাড়ীতে। মনোয়ারা বেগমের বসত বাড়ী গিয়ে জানা যায়, মোছাঃ মনোয়ারা বেগম ১৯৬৬ সালে মৃত হাফিজ উদ্দিন ওরফে বাসু মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের আট বছর পরেই কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মনোয়ারার স্বামী হাফিজ মারা যায়। স্বামীর মৃত্যুর পরে এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়নি মনোয়ারা। অভাবের সংসার চালাতে গিয়ে কখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করেছেন, আবার কখনো বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন পণ্য (সাবান, তেল, বিস্কুট, চানাচুর) বিক্রি করেছেন।পরে মেয়ে বড় হওয়ায় দিয়েছেন বিয়ে ও ছেলেকে করিয়েছেন বিয়ে। সন্তানের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল না থাকায় জীবিকার তাগিদে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পান। টাকা-পয়সা না থাকায় চিকিৎসার অভাবে পুঙ্গাত্ব বরণ করেন তিনি। সংসারে একের পর এক পরিবারের সদস্য বেড়ে যায়। পরিবারের চাহিদা ও বাসস্থান পর্যাপ্ত না হওয়ায় তার স্বামীর বসতভিটা বিক্রি করে দেন ছেলে মহির উদ্দিন। মনোয়ারা বর্তমানে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের সীমানা ঘেঁষা ধানশাইল ইউনিয়নের দাড়িয়ারপাড় এলাকার কাহিলাকুড়া বিলের এক কোনায় গড়ে তুলেছেন বসত ভিটা। ওই ভিটায় দুই রুম বিশিষ্ট একটি দুচালা টিনের ঘরের এক রুমে ছেলে ও ছেলের স্ত্রী, অপর এক রুমে থাকেন মনোয়ারার নাতি। আর মনোয়ারা বসবাস করতেন ছনের একটি ঘরে। তার মাথা গোঁজার একমাত্র বসত ঘরটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি আসলেই পানি পড়ে ঘরের মধ্যে। তখন নাতিনের ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয় মনোয়ারাকে। মনোয়ারা জানান, দিন মজুর ছেলে খুব কষ্ট করে সংসার চালান। প্রায় সময় মানুষের সহযোগিতা নিয়ে চলতে হয় তাকে। বয়স্ক, বিধবা বা প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ডও নেই তার। এর মধ্যে আবার বসতঘরটিও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। টাকার জন্য ঘরটি ঠিকও করতে পারছেন না। বৃষ্টি হলে নাতির ঘরে আশ্রয় নিতে হয় তাকে। সরকারের কাছে নতুন করে একটি ঘরের দাবি জানিয়ে মনোয়ারা বলেন, একটি ঘর পেলে আমার থাকার কষ্ট দূর হবে। আমি একটি ঘর ভিক্ষা চাই। থাকার কষ্ট দূর হবে। আমি একটি ঘর ভিক্ষা চাই। মনোয়ারার ছেলে মহির উদ্দিন বলেন, আমার মায়ের পা ভেঙে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছে। সবসময় পায়খানা-প্রসাব করে, তাই ভাঙা-চোরা ঘরেই থাকেন। হাতে টাকা-পয়সা নাই; তাই ঘর মেরামত করতে পারছি না। তবে বৃষ্টি হলে আমার ছেলের ঘরে রাত্রি যাপন করেন মা। আমার যে অবস্থা, তাতে খুব কষ্ট করে সংসার চালাতে হয়। সরকারের সহযোগিতায় একটি বসত ঘর পেলে অনেক উপকার হবে। আমার মায়ের জন্য সরকারের কাছে একটি বসত ঘর চাই।পরে ঝিনাইগাতী প্রেসক্লাব ও শেরপুরের সময় অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক মোঃ আমিনুল ইসলাম রাজু ও ঝিনাইগাতী প্রেসক্লাবের সদস্য ও সিনিয়র সাংবাদিক হরুন অর রশিদ দুদু’র পক্ষ থেকে মনোয়ারা বেগমকে খাদ্য সহযোগিতা প্রদান করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, শেরপুরের সময়ের সহকারী সম্পাদক মোঃ বেলাল হোসাইন, ঝিনাইগাতী প্রেসক্লাবের সদস্য মুহাম্মদ আবু হেলাল প্রমুখ। স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু রাইহানের সাথে সাক্ষাৎকালে জানা যায়, মনোয়ারা বেগম দীর্ঘদিন ঢাকায় অবস্থান করতেন, আর তাই তাদের স্থানীয় জাতীয় পরিচয়পত্র হয়নি। আগে জাতীয় পরিচয় পত্র ঠিক করতে যা যা লাগে সেবিষয়ে সকল প্রকার সাহায্য করবো আমার ব্যাক্তিগত পক্ষ থেকে। আর জাতীয় পরিচয় পত্র পেলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমরা মহিলাকে প্রতিবন্ধি ভাতা, বয়স্কভাতা কিংবা বিধুবা ভাতার একটা ব্যবস্থা করা হয়ে চেয়ারম্যানের সাহায্যে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ ফারুক আল মাসুদ বলেন, সরকার এমন অসহায় লোকই খুঁজছে। তার বিষয়ে আমাদের জানা ছিল না। এমন অবস্থার কথা জানতে পারলে, অনেক আগেই খোঁজ নিয়ে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হত। দ্রুত সময়ের মধ্যে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।