Home জাতীয় ডিএসকে পঁয়ত্রিশ বছর উদযাপন অনুষ্ঠান

ডিএসকে পঁয়ত্রিশ বছর উদযাপন অনুষ্ঠান

10

সরকার ও বেসরকারি সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে বৈষম্যহীন দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে: আসাদুজ্জামান খান এমপি

স্টাফ রিপােটার: একটি গৌরবান্বিত মুক্তিসংগ্রামের ভেতর দিয়ে দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক মূল্যবোধ, সম্মান, সমৃদ্ধ ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সরকার ও বেসরকারি সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে কাজ করতে হবে। শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা যেখানে অসমতা থাকবে না, কুসংস্কার থাকবে না, সমাজের কোনো জনগোষ্ঠী ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গভেদে বৈষম্যের শিকার হবে না, থাকবে না ক্ষুধা।

আজ ২৯ এপ্রিল সকাল ১০টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে ডিএসকে সভাপতি ডঃ নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে ৩৫ বছর উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।

প্রথম অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিএসকের নির্বাহী পরিচালক ডা. দিবালোক সিংহ, স্বাগত ভাষণে তিনি বলেন, বিগত কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যস্ত হচ্ছে। পরিবেশ সংরক্ষন ও সুরক্ষায় বাংলাদেশকে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ বিপর্যয়ে উন্নয়নে কৌশলে যত ধরণের নেতিবাচক প্রবনতা আছে সেগুলো বন্ধ করতে (থামাতে) হবে। বাংলাদশে প্রকৃতি ভিত্তিক, পদ্ধতি অনুসরণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করার চেষ্টা করতে হবে। ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তে বাংলাদেশের নদ-নদী, খাল, বিল, হাওর, বাওর সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রকৃতি ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পিকেএসএফ চেয়ারম্যান, ড. এম খায়রুল হোসেন; সাবেক রাষ্ট্রদূত, অর্থনীতিবিদ, সম্মানীয় ফেলো, সিপিডি, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য; এমআরএ নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন, অবসাইট, সিআইবি ও আইসিটি), মুহাম্মদ মাজেদুল হক; Unicef Bangladesh, OIC, Chief of WASH, Mr. Raphael Nwozor; ওয়াটারএইড বাংলাদেশ দেশীয় পরিচালক, হাসিন জাহান; ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক, আসিফ সালেহ্; আবু আবদুল্লাহ মোঃ ওয়ালী উল্লাহ উপপরিচালক (শিশু সুরক্ষা শাখা) সমাজসেবা অধিদপ্তর; ডিএসকে’র ঋণ কার্যক্রমের সদস্য, মোসা: রেজিয়া বেগম।

পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, দেশে দারিদ্র নিরসনে তৃণমূল সংগঠন ও সমিতি গড়ে তোলে স্বাস্থ্য শিক্ষা জরুরি ত্রাণ ও পুনর্বাসন, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র অর্থায়ন কার্যক্রম অত্যন্ত সফলতার সাথে বাস্তবায়ন করছে।

ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ডিএসকে’র মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম গোলাম মরতুজা বলেন, ডিএসকে শক্তিশালী সমাজভিত্তিক সংগঠন (সিবিও), এর মাধ্যমে যারা নিজেরাই নিজেদের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা প্রণয়ন, অগ্রাধিকার চিহ্নিত করার ও বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে। এক্ষেত্রে পরিবার ও কমিউনিটি, সরকারি সংস্থা, দাতা সংস্থা ও সকলের অংশগ্রহণ জরুরী। দিনব্যাপী উদযাপন অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনেই পূর্বে কবুতর ও বেলুন উড়ানোর মধ্য দিয়ে উৎসাহ, উদ্দীপনার সাথে বর্ণিল পরিবেশে উদ্বোধন হয়।

ডিএসকে’র দীর্ঘদিনের সমর্থক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা ব্র্যাক, ওয়াটারএইড, ওয়াটার ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল, ইউনিসেফ, ঢাকা ওয়াসা ও পিকেএসএফ’কে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

এছাড়া ডিএসকে’র বিভিন্ন স্তরে কর্মরত ৫ জন কর্মীকে তারকা কর্মী হিসেবে সম্মাননা প্রদান করা হয়। তারা হলেন- সোহাগ মিয়া, শাখা ব্যবস্থাপক, ঋণ কার্যক্রম; চন্দনা দেবনাথ, সহকারী শাখা ব্যবস্থাপক, ঋণ কার্যক্রম; ইয়াসমিন নাহার, মাঠ কর্মকর্তা, ঋণ কার্যক্রম; মোঃ নাজিম উদ্দিন, কমিউনিটি মবিলাইজার, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প; মোসাঃ সাথী বেগম, সহকারী সেবিকা, স্বাস্থ্য কার্যক্রম। উক্ত কর্মীদেরকে ক্রেস্ট, সনদপত্র, নগদ চেক প্রদান করা হয়।

দ্বিতীয় অধিবেশন বীর মুক্তিযোদ্ধা, পাট বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এ বি এম আব্দুল্লাহ’র সভাপতিত্বে সারাদিন ব্যাপী উদযাপন অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন – গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষা

প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার, এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংলাপ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন – ওয়াটারএইড দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক পরিচালক ডা. খায়রুল ইসলাম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেগম শামসুন নাহার বলেন, আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে, ভাবলেই প্রথমত দেখতে চাই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। একটা দেশ এবং জাতি গঠনে শিক্ষার ভূমিকা অনস্বীকার্য দেশকে উন্নতির চরম শিখরে পৌছাতে সাহায্য করতে পারে সেই দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। পৃথিবীর প্রতিটি দেশ আজ নতুন কিছু উদ্ভাবনের মাধ্যমে তার দেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। আধুনিক সমাজে শিক্ষার গুরুত্ব দেশের প্রতিটা শ্রেনীর মানুষ উপলব্ধি করতে পারছে। শুধু পুথিগত শিক্ষা

নয় বরং কল্যাণমুখী এবং বাস্তবধর্মী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠবে। ফলে শিক্ষার প্রকৃত মান উন্নয়ন হবে। তাই আমরা শুধু শিক্ষিত নয় বরং সুশিক্ষিত প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে তুলবো।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সংসদ সদস্য ও নারী নেত্রী, আরমা দত্ত; বিআইডিএস’র মহাপরিচালক, ড. বিনায়ক সেন; সাবেক মহাপরিচালক-বারডেম ও ডিএসকের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার; নারী নেত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মাহফুজা খানম; অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক এম এম আকাশ; অর্থনীতিবিদ, সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো, অধ্যাপক ডঃ মোস্তাফিজুর রহমান; ঢাকা ওয়াসার বানিজ্যিক ব্যবস্থাপক, প্রকৌশলী উত্তম কুমার রায়; সাবেক ব্যাংকার ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক, মামুন রশীদ; বাংলাদেশ আদীবাসী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি, রাখী ম্রং; নগর দরিদ্র বস্তিবাসীর উন্নয়ন সংস্থার (এনডিবাস) সাধারন সম্পাদক, ফাতেমা আক্তার।

কেমন বাংলাদেশ চাই, শীর্ষক উম্মক্ত সংলাপে ধারনা পত্র উত্থাপন করেন ডা. দিবালোক সিংহ। বাংলাদেশ ক্রমাগত বিগত দশকে গড়ে সাত শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে, নব্বইর দশকে যেখানে বাংলাদেশের মাথাপিছু গড় আয় ছিল ৩৩০ ডলার যেখানে ২০২৩ সালে তা এসে দাড়িয়েছে ২,৭৬৫ ডলারে। যেখানে নব্বইয়ের দশকে ৫৮ শতাংশ মানুষ দরিদ্র (সীমার নীচে বসবাস করত সেখানে ২০২৩ সালে এসে সে সংখ্যা নেমে গেছে আঠার শতাংশে। যেখানে নব্বইর দশকে স্কুলে থাকার সময়সীমা গড়ে ছিল পাঁচ বছর তা এখন এসে দাড়িয়েছে এগার বছরে। নব্বইর দশকে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ছিল ২.৮ তা এখন এসে দাড়িয়েছে প্রতি লাখ ১৫৬। পাঁচ বছরের কম শিশু মৃত্যু হার এখন এসে দাড়িয়েছে প্রতি হাজারে ২৮ বাংলাদেশ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ নির্ধারিত উন্নয়নশীল দেশের স্তরে উত্তরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পাবে।

শিক্ষাবিদ, ব্যাংকার, আদিবাসী, নগর দরিদ্র বস্তিবাসি, সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ বলেন, শহর ও গ্রাম অঞ্চলের মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের অধিকার, পিছিয়ে পড়া আদিবাসীদের ভূমি সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। দরিদ্র মানুষের জীবনমান, উন্নয়নে সুযোগের অগ্রাধিকার দিতে হবে বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। তাদের জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠান থেকে যাতে করে দরিদ্র মানুষেরা বঞ্চিত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বক্তব্যে আরো বলেন, বাংলাদেশের সমাজে ক্রমাগতভাবে সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি জায়গা করে নিয়েছে। গণত্রন্ত্র এখনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি, অন্য দিকে ধোনি দরিদ্রদের বৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে সামাজিক সংহতি বিনষ্ট হচ্ছে। সামাজিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পরমত সহিষ্ণতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাজনৈতিক অঙ্গীকার সময়ের দাবি। বক্তারা কেমন বাংলাদেশ চাই সংলাপে অগ্রসর মান বাংলাদেশের স্বপ্নের কথা বলেন। দেশ প্রেমের টানে তৃণমূল জনগোষ্ঠীর সক্রিয় অংশগ্রহণে সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে উঠবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

অধিবেশনের সভাপতি বিশিষ্ট পাট বিজ্ঞানী, ডিএসকে’র সাবেক সভাপতি ড. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, গত পঁয়ত্রিশ বছর ধরে ডিএসকে প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে থেকে তাদের জীবনমান উন্নয়ন এবং একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাম্যের সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করছে। এক্ষেত্রে পরিবার, তৃণমূল জনগোষ্ঠী, সরকারি সংস্থা, দাতা সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট নাগরিক সমাজের মধ্যে সমন্বয় সাবল করে ডিএসকে অগ্রসর হচ্ছে।

উদ্বোধনী পর্বে জাতীয় ও দেশাত্মকবোধক সংগীত পরিবেশনায়, ভিডিও চিত্র প্রদর্শন, আদিবাসী নারী সাংস্কৃতিক দল এম মাইনর, আদিবাদী শিল্পীদের নৃত্য এবং পাঁচশত’র অধিক বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান শেষ হয়।