Home সারাদেশ ঠাকুরগাঁওয়ে বুড়ির বাঁধে চলছে মাছ ধরা উৎসব।

ঠাকুরগাঁওয়ে বুড়ির বাঁধে চলছে মাছ ধরা উৎসব।

148

মোঃ মহশীন আলী, রংপুর অফিস: প্রতিবছরের মতো এবারেও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ও আকচা ইউনিয়নের শুক নদীর তীর বুড়ির বাঁধে চলছে মাছ ধরার উৎসব। মঙ্গলবার ভোরের দিকে বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় এই এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন আশে পাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।

বুড়ির বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষ মাছ ধরতে ব্যস্ত। এদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশুও রয়েছে। বাদ যাননি বৃদ্ধরাও। কারও হাতে পলো, কারও হাতে চাবিজাল, খেয়াজাল, টানাজাল বা ছেঁকাজাল। যাদের মাছ ধরার সরঞ্জাম নেই তারাও বসে নেই। খালি হাত দিয়েই কাঁদার মধ্যে মাছ খুঁজছে। আর নদীর পাড়ে হাজারো মানুষ ভিড় জমিয়েছে মাছ ধরা দেখতে। অনেকে মাছ না ধরলেও বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনদের উৎসাহ দিচ্ছেন।

জানা যায়, ১৯৮০ সালের দিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য সদর উপজেলার আকচা ও চিলারং ইউনিয়নের মাঝামাঝি এলাকায় শুক নদীর উপর একটি জলকপাট (সুইসগেইট) নির্মাণ করা হয়। জলকপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে প্রতিবছর মৎস্য অধিদফতরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়। আর শীতের শুরুতেই বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়ার পর মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এভাবেই প্রতিবছর চলে বুড়ির বাঁধে মাছ ধরার উৎসব।

মাছ শিকারীরা ফিকা জাল, লাফি জাল, কারেন্ট জাল, চটকা জালসহ বিভিন্ন মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে আসে মাছ শিকার করার জন্য আসেন বুড়ির বাঁধে।

জেলার দূরের হরিপুর উপজেলা থেকে আসা ইসলাম বলেন, প্রতিবছর বুড়ির বাঁধে মাছ ধরার জন্য আমরা এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করি। আজ এত মানুষ একসাথে মাছ ধরতে আসা দেখে খুব ভালো লাগছে।

সদরের রুহিয়া ইউনিয়ন থেকে মাছ ধরতে আসা কাবুল বলেন, মাছ ধরার জন্য আমরা কয়েকজন একসাথে ভোরবেলা এসেছি। মাছ ধরতে এসে মনে হচ্ছে এ যেন এক মিলনমেলা, যেদিকে তাকাই শুধু মানুষ আর মানুষ। সারাদিন মাছ ধরবো। এখন পর্যন্ত ছোট-বড় মিলে ৩/৪ কেজি মাছ ধরেছি।

স্থানীয় আবুল কাশেম নামে একজন মাছ বিক্রিরত অবস্থায় জানান, তারা সাতজন মিলে একটি দল করেছেন। পাঁচজন মাছ ধরতে আছে। বাকি দুইজন তারা মাছ বিক্রি করতেছে।

এখানে বিভিন্ন জাতের চাষ করা মাছের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির দেশী মাছও পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণত বাজারের তুলনায় অনেক কম দামে উৎসবের আমেজে আজকে মাছ ক্রয় যাচ্ছে বলে এক মাছ ক্রেতা জানান।

ঠাকুরগাঁও জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক সুনীল মন্ডল জানান, ৫০ একর এলাকাজুড়ে সুক নদীর ওপর নির্মিত বুড়ির বাঁধ মৎস্য অভয়াশ্রম। প্রতিবারই বুড়ির বাঁধ এলাকায় পোনা ছাড়া হয়। এটি আমরা জুলাই মাসের দিকে দিয়ে থাকি এবং শীতের শুরুতেই আবার বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়ার পর মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এভাবেই প্রতিবছর চলে বুড়ির বাঁধে মাছ ধরার উৎসব যা এরকম কয়েকদিন ধরে চলবে।