Home সারাদেশ টিপু হত্যার এক বছর: এখনো অধরা মূল পরিকল্পনাকারী

টিপু হত্যার এক বছর: এখনো অধরা মূল পরিকল্পনাকারী

24

মুসাসহ ২৯ জন গ্রেফতার, টিপুর স্ত্রীর আতঙ্ক কাটছে না

ডেস্ক রিপোর্ট: ঠিক এক বছর আগের কথা। ২৪ মার্চ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলগেটের আগে ফ্লাইওভারে ওঠার মুখে যানজটে আটকে থাকা মাইক্রোবাস লক্ষ্য করে হেলমেট-পরিহিত এক যুবক অতর্কিত গুলি চালায়। এ সময় মাইক্রোবাসের চালকের পাশের আসনে বসা মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু গুলিবিদ্ধ হয়ে সিটেই লুটিয়ে পড়েন। দুর্বৃত্তের এলোপাথাড়ি গুলিতে পাশে রিকশায় থাকা বদরুন্নেছা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া জামাল প্রীতি গুলিবিদ্ধ হন। পরে গুরুতর অবস্থায় তাদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
সেই হত্যার জের ধরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাব ২৭ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বেশ কয়েক জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে কিলার গ্রুপের সদস্যরা ধরা পড়লেও মূল পরিকল্পনাকারী দুবাইয়ে আত্মগোপনকারী শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ মন্টি ওরফে জিসান এখনো ধরা পড়েনি।
হত্যার ঘটনায় টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে শাজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে স্থানান্তর করা হয়।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তকাজ প্রায় শেষ হয়েছে। মূলত আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মুসাকে ওমান থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কাছ থেকেই হত্যাকাণ্ডের অনেক বিষয় সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি।
হত্যাকাণ্ডের পর একটি মোবাইল ফোন নম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর সূত্র ধরে তদন্তে উঠে আসে শুটার মাসুমের নাম। ডিবি গ্রেফতার করে মাসুম ওরফে আকাশকে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আবৃত্তিকার আহকাম উল্লাহর ছোট ভাই যুবলীগ নেতা এরফান উল্লাহ দামালকে গ্রেফতার করে ডিবি। খুনের এক সপ্তাহ পর র‌্যাব এ ঘটনায় মতিঝিলের ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ, নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির এবং মোরশেদুল আলম ওরফে কাইলা পলাশকে গ্রেফতার করে।

এ ব্যাপারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এ হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী মুসা। এ হত্যায় প্রধান মদতদাতাও শনাক্ত করা গেছে মুসার গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে। কারণ মতিঝিলে এই হত্যাটি সংঘটিত হয়েছে একাধিক কারণে। এখানে আন্ডারওয়ার্ল্ড ও আন্ডারগ্রাউন্ড দুই স্তরের একাধিক ঘটনা জড়িত।

হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয় মুসাকে : পরিকল্পনা অনুযায়ী দুবাইয়ে জিসানের ডেরায় বসে টিপু হত্যার ছক আঁকা হয়। ঢাকায় হত্যার মূল দায়িত্ব দেওয়া হয় সুমন সিকদার ওরফে মুসাকে। টিপু হত্যাকাণ্ডের সব পরিকল্পনার রেকি করার পর ঐ বছরের ১২ মার্চ দুবাই চলে যায় মুসা। হত্যাকাণ্ডের পর তদন্তে মুসার নাম এলে দুবাই থেকে পালিয়ে ওমান চলে যায় সে। পরে রয়েল পুলিশ অব ওমানের হাতে মুসা গ্রেফতার হয়। ৯ জুন তাকে ওমান থেকে দেশ ফিরিয়ে আনা হয়। মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় বিদেশে অবস্থানরত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের। মুসা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সহযোগী বলে পরিচিত। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে টিপু ও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে বিরোধ ছিল। ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিলকী হত্যা মামলায় টিপু গ্রেফতার হওয়ার পর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ হারান তিনি। পরে অবশ্য ঐ মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেও দলীয় পদ আর ফিরে পাননি। তবে টিপু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মতিঝিল এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ঘর গোছানোর কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। মতিঝিলে আধিপত্য, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক মাঠ দখলের জন্য টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
টিপুর স্ত্রীকে হুমকি অব্যাহত: জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি বলেন, এখন পর্যন্ত গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে সন্তুষ্ট। বিভিন্ন মোবাইল নম্বর থেকে প্রতিনিয়ত ফোন দিয়ে চার্জশিট থেকে সাগর, সোহেল শাহরিয়ার, মুনসুর ও আশরাফের নাম বাদ দেওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আমার পরিবার শঙ্কা নিয়েই দিন পার করছি। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তারা যেন কোনোভাবেই ছাড় না পায়। দ্রুত যেন চার্জশিট দেওয়া হয়।
ইত্তেফাক