Home খেলা জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেই চলছে ফরচুন বরিশাল

জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেই চলছে ফরচুন বরিশাল

30

ডেস্ক রিপোর্ট: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেই চলছে সাকিবের ফরচুন বরিশাল। প্রথম দল হিসেবে ইতোমধ্যে প্লে-অফ নিশ্চিত করা বরিশাল আজ ১২ রানে হারিয়েছে সিলেট সানরাইজার্সকে।
এই হারে প্লে-অফে খেলার আশা শেষ হয়ে গেল সিলেটের। ৮ ম্যাচ শেষে ৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে সিলেট। আর ৯ ম্যাচ শেষে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে এককভাবে টেবিলের শীর্ষে বরিশাল।
টুর্নামেন্টের ২৪তম ও দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ব্যাটারদের দৃঢ়তায় ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৯৯ রানের বড় স্কোর পায় বরিশাল। দুই ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার ৫১ ও ক্রিস গেইল অপরাজিত ৫১ রান করেন। শেষ দিকে ১৩ বলে ঝড়ো অনবদ্য ৩৪ রান করেন ডোয়াইন ব্রাভো।
জবাবে কলিন ইনগ্রামের বিধ্বংসী ৯০ রানের পরও ৬ উইকেটে ১৮৭ রানের বেশি করতে পারেনি সিলেট।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বরিশালের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ে নামে সিলেট সানরাইজার্স।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইলকে নিয়ে বরিশালকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন মুনিম শাহরিয়ার। পাওয়া প্লেতে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন শাহরিয়ার। তাতে ৬ ওভার শেষে ৬৭ রান পায় বরিশাল। এ সময় শাহরিয়ার ২৫ বলে ৪৭ এবং ১১ বলে ১৪ রান আসে গেইলের ব্যাটে।
আগের ম্যাচে ৫ রানের জন্য হাফ-সেঞ্চুরি না পাওয়া শাহরিয়ার এবার আর ভুল করেননি। সপ্তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি দিয়ে হাফ-সেঞ্চুরিতে পা রাখেন শাহরিয়ার। ২৬ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ডান-হাতি ব্যাটার শাহরিয়ার।
তবে এক বল পরই সিলেটের স্পিনার সোহাগ গাজীর শিকার হন শাহরিয়ার। ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৮ বলে ৫১ রান করেন শাহরিয়ার। গেইলের সাথে ৪০ বলে ৭২ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন শাহরিয়ার।
শাহরিয়ারের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। আগের ম্যাচে বল করার সুযোগ না পাওয়া নাজমুল ইসলাম আজ আক্রমনে এসেই ২ রানে সোহানকে থামান ।
নতুন ব্যাটার হিসেবে উইকেটে এসে প্রথম ৭ বলে ৪ রান করেন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এরপর হাত খুলেন তিনি। সাকিবের কল্যাণে সোহাগের করা ১১তম ওভারে ১৯ রান আসে। সাকিব ২টি ছয় ও ১টি চার মারেন।
পরের ওভারে মোসাদ্দেককে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন সাকিব। ১৩তম ওভারে আলাউদ্দিনকে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারার পরের ডেলিভারিতে বিদায় নেন সাকিব। ১৯ বল খেলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩৮ রান করেন সাকিব। গেইল-সাকিবের জুটিতে ৩১ বলে ৪৫ রান যোগ হয়।
১৩তম ওভারে সাকিব ফিরলেও রান তোলায় ভাটা পড়েনি বরিশালের। ওভারে গেইল ২টি ছয় ও ১টি চার এবং তৌহিদ হদয় ১টি বাউন্ডারি মারেন।
১৭তম ওভারে ১০ রান করে আউট হন হৃদয়। হৃদয় আউট হওয়ার সময় ইনিংসের ২১ বল বাকী ছিলো। বাকী সময়ে চার-ছক্কা বন্যা ছিলো ডোয়াইন ব্রাভোর ব্যাটে। ১টি চার ও ৪টি ছক্কা মারেন তিনি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের পেসার সিরাজ আহমেদের শেষ ওভারের শেষ তিন বলে ১৬ রান নেন ব্রাভো। এতে ২০ ওভারে ৪ উইকেটে এবারের আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯৯ রানের বড় সংগ্রহ পায় বরিশাল। শেষ ২১ বলে ৪২ রান পায় বরিশাল।
৪৩ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৮৮তম হাফ-সেঞ্চুরি পান গেইল। ২৮ ইনিংস পর টি-টোয়েন্টিতে হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া গেইল শেষ পর্যন্ত ৪৫ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন। ১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১৩ বলে ৩৪ রানের অপরাজিত থাকেন আরেক ক্যারিবিয়ান ব্রাভো। সিলেটের সোহাগ-স্বাধীন-আলাউদ্দিন ও নাজমুল ১টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ২০০ রানের বিশাল টার্গেটের কারনে দক্ষিণ আফ্রিকার কলিন ইনগ্রামকে শুরুতেই ব্যাটিংয়ে পাঠায় সিলেট। বরিশালের আফগানিস্তানী স্পিনার মুজিব উর রহমানের প্রথম ওভারে তিনটি বাউন্ডারি মারেন ইনগ্রাম। সাকিবের করা দ্বিতীয় ও মুজিবের করা তৃতীয় ওভার থেকে আসে আরও দু’টি করে চার। তাতে ৩ ওভারেই ৩২ রান পায় সিলেট। চতুর্থ ওভারে ১১ বলে ৭ রান করা এনামুল শিকার করেন সাকিব। ওভার থেকে মাত্র ২ রানে উঠে।
এনামুলকে হারালেও, ব্যাট হাতে চড়া মেজাজে ছিলেন ইনগ্রাম। ব্রাভোর পঞ্চম ওভারের প্রথম তিন বলে তিনটি বাউন্ডারি মারেন ইনগ্রাম। এতে পাওয়ার প্লেতে ৫৭ রান পেয়ে যায় সিলেট। মারমুখী ব্যাটিং চালিয়ে ২৪তম বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৪৫তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান ইনগ্রাম।
হাফ-সেঞ্চুরির পর আরও মারমুখী হয়ে উঠেন ইনগ্রাম। বরিশালের বাঁ-হাতি পেসার মেহেদি হাসান রানার দশম ওভার থেকে ৪ বাউন্ডারিতে ২২ রান তুলেন ইনগ্রাম। এতে ১০ ওভার শেষে ১০৭ রান পেয়ে দারুনভাবে লড়াইয়ে ছিলো সিলেট।
১টি করে চার-ছক্কায় ইনিংস শুরুর পরও ১১তম ওভারে থামতে হয় মোহাম্মদ মিঠুনকে। ১৪ বলে ১৯ রান করেন তিনি।
মিঠুনের আউটে ক্রিজে গিয়ে ৯ রানের বেশি করতে পারেননি অধিনায়ক ইংল্যান্ডের রবি বোপারা। মিঠুন-বোপারা আউট হলেও সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন ইনগ্রাম।
১৪ ওভার পর্যন্ত ছয় বোলার ব্যবহার করেও ইনগ্রামকে যখন থামানো যাচ্ছিলো না, তখন ১৫তম ওভারে অকেশনাল অফ-স্পিনার শান্তকে আক্রমনে আনেন অধিনায়ক সাকিব। প্রথম চার বলে ২ রান দেয়ার পর, শেষ দুই বলে বাজিমাত করেন শান্ত।
পঞ্চম ডেলিভারিতে ভয়ংকর ইনগ্রামকে শিকার করেন শান্ত। লং-অফে ব্রাভোকে ক্যাচ দিয়ে নাভার্স-নাইন্টিতে থামেন ইনগ্রাম। আউট হওয়ার আগে ৪৯ বলে ১৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯০ রান করেন ইনগ্রাম। ওভারের শেষ বলে মিজানুরকে শিকার করেন শান্ত।
পরপর দু’বলে দুই উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে সিলেট। শেষ ৩০ বলে ৬৯ রানের প্রয়োজন পড়ে তাদের।
১৬তম ওভারে ১৫ ও ১৮তম ওভারে ১৩ রান তুলে সিলেটের আশা ধরে রেখেছিলেন মোসাদ্দেক-আলাউদ্দিন। শেষ ২ ওভারে জয়ের সমীকরন দাঁড়ায় ৩৫।
জিয়ান করা ১৯তম ওভার থেকে ১১ রান আসে। শেষ ওভারে ২৪ রানের দরকারে ১১ রান পায় সিলেট। ব্রাভোর ঐ ওভারে আউট হন মোসাদ্দেক। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ২১ বলে ৩৪ রান করেন মোসাদ্দেক। ১২ বলে ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ২২ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন আলাউদ্দিন। সিলেটের স্কোর দঁড়ায় ৬ উইকেটে ১৮৭ রান।
বরিশালের সাকিব ২৩, ব্রাভো ৪২ ও শান্ত ২ রানে ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাকিব। টানা চার ম্যাচে সেরা হলেন সাকিব।