ডেস্ক রিপোর্ট: ভারতের জোড়া লাগা যমজ ভাই সোহনা ও মোহনা সরকারি চাকরি পেলেন। পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী অমৃতসরে পাঞ্জাব স্টেট পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেডের (পিএসপিসিএল) একটি সাবস্টেশনে গত বুধবার যোগদান করেন তাঁরা। তাঁরা প্রথমে মাসে ২০ হাজার রুপি বেতন পাবেন। ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোহনা ও মোহনা ভারতের আইটিআই থেকে ডিপ্লোমা করেন। তাঁদের বয়স এখন ১৯ বছর। এখন তাঁরা থাকেন অমৃতসরে। তাঁদের প্রথম থেকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের মাধ্যমেই সেই ইচ্ছা পূরণ হলো। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যে সফলতার পথে বাধা হতে পারে না, সোহনা ও মোহনা সেটাই প্রমাণ করলেন।

পিএসপিসিএলের কর্মকর্তারা বলেছেন, যমজ ভাই সোহনা ও মোহনা সাপ্লাই কন্ট্রোল রুমে কাজ করবেন।

পিএসপিসিএলের প্রধান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সিএমডি) বেনু প্রাসাদ বলেছেন, ‘আমরা জানতে পারি, তাঁরা বিরলের চেয়ে বিরল শারীরিক প্রতিবন্ধী। সেই অবস্থাতেই আইটিআই থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন তাঁরা এবং ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে পেশাজীবন শুরু করতে চেয়েছিলেন। আমরা তাঁদের কাছে যাই এবং তাঁরা যে বেশ সক্রিয়, তা প্রত্যক্ষ করি। যমজ ভাইয়ের ভালো কারিগরি জ্ঞান রয়েছে। সুতরাং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিবন্ধী কোটায় আমরা আমাদের বিভাগে তাঁদের নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। যমজ ভাই প্রাথমিকভাবে মাসে ২০ হাজার রুপি বেতন পাবেন।’

সোহনা ও মোহনা বলেছেন, চাকরি দেওয়ায় তাঁরা পাঞ্জাবের রাজ্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। সোহনা বলেন, ‘সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও উৎসাহ নিয়ে আমরা কঠোর পরিশ্রম করে যাব।’

অল ইন্ডিয়া পিঙ্গলওয়াড়া চ্যারিটেবল সোসাইটি নামের একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় বেড়ে ওঠেন সোহনা ও মোহনা। মোহনা বলেন, ‘আমরা পিঙ্গলওয়াড়া প্রতিষ্ঠানের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। কারণ, প্রতিষ্ঠানটি আমাদের বড় করেছে, শিক্ষিত করেছে এবং আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে।’

অল ইন্ডিয়া পিঙ্গলওয়াড়া চ্যারিটেবল সোসাইটির চেয়ারপারসন ইন্দ্রজিৎ কাউর বলেছেন, ‘সোহনা ও মোহনার সরকারি চাকরিতে যোগদানের বিষয়টি আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়।’

সোহনা ও মোহনা ২০০৩ সালের ১৪ জুন নয়াদিল্লির একটি হাসপাতালে জোড়া লাগা অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেদের শারীরিক এই অবস্থা দেখে মা-বাবা তাঁদের ফেলে রেখে যান। পরে তাঁদের আলাদা করার জন্য দিল্লির এআইআইএমএসে ভর্তি করা হয়। অস্ত্রোপচারে একজনের জীবনের ঝুঁকি থাকায় তাঁদের আলাদা না করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। সেই থেকে তাঁরা একসঙ্গে জীবন যাপন করছেন। তাঁদের দুটি হৃদ্‌যন্ত্র, দুই জোড়া হাত, দুটি মাথা, দুটি কিডনি ও দুটি স্পাইনাল কর্ডস রয়েছে। তবে লিভার ও গলব্লাডার একটি; পা দুটি।-আমাদের সময়.কম