Home জাতীয় ইসিতে জায়গা পেতে নজিরবিহীন তদবির

ইসিতে জায়গা পেতে নজিরবিহীন তদবির

33

ডেস্ক রিপোর্ট: নতুন নির্বাচন কমিশনে স্থান পেতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে নজিরবিহীন দেনদরবার ও তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীতে কখনো এমন ধরনের ঘটনা চোখে পড়েনি।

গতকাল পর্যন্ত অন্তত দুই শতাধিক ব্যক্তি স্বীয় উদ্যোগে ইসিতে জায়গা পেতে অনলাইন কিংবা সশরীরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে উপস্থিত হয়ে অনুসন্ধান কমিটির উদ্দেশ্যে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। কেউ প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবার অনেকে নির্বাচন কমিশনার হতে আগ্রহ প্রকাশ করে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিচ্ছেন। আবেদনকারীদের মধ্যে সাবেক সামরিক বেসামরিক আমলা, বিচারকও রয়েছেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্র বলছে, অনুসন্ধান কমিটি যেন শেষ পর্যন্ত স্বীয় নাম বহাল রাখে সে বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন-নিবেদন করতেও দেখা গেছে। ইতিপূর্বে প্রশাসনের পাশাপাশি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজনকে জীবনবৃত্তান্ত হাতে হাতে জমা দেওয়ার সময় বলতে শোনা গেল—‘দেখ নামটা যেন থাকে, আমার সম্পর্কে তুমি তো জান’। জবাবে ‘জ্বি স্যার’ বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তা বললেন, ‘কী যে বলেন স্যার, আপনার যদি না হয় তবে আর কাকে নিয়ে হবে’। অনুরূপভাবে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক জীবনবৃত্তান্ত হাতে দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে আকুতির সুরে বলেন, ‘ নতুন করে আর কী বলব তুমি তো আমাকে চেন। খেয়াল রেখ।’ নিরুপায় কর্মকর্তার স্বহাস্য জবাব ‘তাত বটেই’।

প্রসঙ্গত ইতিপূর্বে দুই বার অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হলেও স্বীয় উদ্যোগে এভাবে নাম দেওয়া কিংবা ইসিতে জায়গা পেতে তদবির-তাগাদা করতে দেখা যায়নি, যাকে নজিরবিহীন বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংগঠনের প্রস্তাবে সংবিধানের আলোকে সরকার ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ প্রণয়ন করে। ১৯৭২ সালের পর সংবিধানে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী প্রথম বারের মতো এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়। অবশ্য নির্বাচন কমিশন গঠন উপলক্ষে ২০ ডিসেম্বর থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ২৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন। বিএনপি ঐ সংলাপে অংশ নেয়নি। সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের অনুরোধ জানানো হয়। আইন অনুযায়ী ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি (অনুসন্ধান কমিটি) গঠন করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ১৫ কর্মদিবসে সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য দুটি এবং চার জন কমিশনারের জন্য মোট আট জনের নাম সুপারিশ করে রাষ্ট্রপতির নিকট উপস্থাপন করবে।

প্রথম বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজনৈতিক দল ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সার্চ কমিটি সংলাপ করবে শনিবার। সুশলীসমাজের অন্তত ৬০ জনের সঙ্গে কথা বলবে সার্চ কমিটি। ইতিমধ্যে গতকাল থেকে আমন্ত্রণ জানানো শুরু হয়েছে। এদিন সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাদের একাংশের সঙ্গে এবং দুপুর পৌনে ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বাকিদের সঙ্গে বৈঠক হবে। এরপর ১০ সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে বসবে কমিটি।

সার্চ কমিটির প্রধান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। কমিটির বাকি পাঁচ সদস্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুই সদস্য সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক।-ইত্তেফাক