Home জাতীয় জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম থাকে না ফিশিং বোটে

জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম থাকে না ফিশিং বোটে

41

ডেস্ক রিপোর্ট: জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম ছাড়াই জেলেরা ফিশিং বোট নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যান। তারপর সাগরে দুর্যোগে পড়লে জীবন বাঁচানোর ন্যুনতম সুযোগও তাদের থাকে না। দুর্যোগে কেউ কেউ ভাগ্যের জোরে তীরে ফেরত আসতে পারেন। আবার অনেকেই প্রাণ হারান। এভাবে গত তিন দশকে সাগরে ডুবে প্রায় দেড় হাজার জেলে মারা গেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমুদ্রগামী কয়েক জন জেলে জানান, ‘জীবন-জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাজনদের ফিশিং বোটে সাগরে মাছ ধরতে যাই। বোটে খাবারসামগ্রী দেওয়া হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসে জীবন রক্ষাকারী লাইফ জ্যাকেট ও লাইফ বয়া দেওয়া হয় না। ফলে সাগরে বোট ডুবে গেলে আমাদের বেঁচে থাকার কোনো অবলম্বন থাকে না।’ গত তিন দশকে সাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে প্রায় দেড় হাজার জেলে মারা গেছেন। এর মধ্যে ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসে দুবলারচরে প্রায় ৫০০, ২০০৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সাগরে আকস্মিক ঝড়ে তিন শতাধিক, ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরে সুন্দরবনে প্রায় ৩৫০ জেলে প্রাণ হারিয়েছেন বলে ভুক্তভোগী জেলেদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়। এছাড়া প্রতি বছর বঙ্গোপসাগরে আকস্মিক ঝড়ে অনেক নৌকা, ট্রলার ডুবে জেলে মারা যান। সর্বশেষ গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে বঙ্গোপসাগরে আকস্মিক ঝড়ে প্রায় ২৫টি বোট ডুবে ১২ জেলে নিখোঁজ হন। এর মধ্যে সাত জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সহসভাপতি আলহাজ সাইফুল ইসলাম খোকন বলেন, সমুদ্রগামী ফিশিং বোটে জেলেদের জীবন রক্ষায় নামকাওয়াস্তে দু-একটি লাইফ বয়া রাখলেও বোট মালিকদের উদাসীনতায় লাইফজ্যাকেট আদৌ রাখা হয় না। তিনি এ বিষয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপ দাবি করেন। দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুবলারচরের কয়েক হাজার শুঁটকি জেলে জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম ছাড়াই সাগরে মাছ ধরে আসছেন। আগামী বছর থেকে লাইফ জ্যাকেট ও লাইফ বয়া ছাড়া দুবলারচরের কোনো জেলে সাগরে যেতে পারবেন না বলে নিশ্চয়তা দেন দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি।

জেলেপল্লি দুবলা ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রহ্লাদ চন্দ্র রায় জানান, দুবলাসহ সমুদ্রগামী কোনো ফিশিং বোটে জেলেদের লাইফ জ্যাকেট ও লাইফ বয়া দেখা যায় না। বোটে লাইফ জ্যাকেট রাখা হলে জেলেদের প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। বাগেরহাট জেলা মৎস্য অফিসার এ এস এম রাসেল বলেন, সমুদ্রগামী ফিশিং বোটে জেলেদের জীবন রক্ষায় লাইফ জ্যাকেট ও লাইফ বয়া রাখা বাধ্যতামূলক। এটা তদারকির দায়িত্ব সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের। কোস্ট গার্ডও ফিশিং বোটগুলো দেখভাল করতে পারে। বাগেরহাট জেলায় সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর না থাকায় একটি দপ্তর করার জন্য শরণখোলায় জায়গা খোঁজা হচ্ছে। আগামী এক বছরের মধ্যে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের অফিস চালু করা হবে। তখন ফিশিং বোটগুলোতে নজরদারি করা যাবে বলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করেন।-ইত্তেফাক