Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস জাবিতে ভিক্ষুক বেড়েছে কয়েকগুণ

জাবিতে ভিক্ষুক বেড়েছে কয়েকগুণ

106

জাবি প্রতিনিধি: দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে বেড়েছে ভিক্ষুকদের আনাগোনা। ক্যাম্পাসে ভিক্ষুকদের এমন অবাধ বিচরণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। ভিক্ষুকমুক্ত ক্যাম্পাস চায় তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণ আবাসিক হওয়ায় এখানের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন হলে থেকে। পড়াশোনার ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিবার থেকে পাঠানো নির্দিষ্ট টাকা নয়তো টুকটাক টিউশনির উপর নির্ভর করতে হয়। প্রতিটি টাকায় খরচ করতে হয় হিসেব করে। ক্যাম্পাস উন্মুক্ত হওয়ায় ভিক্ষুক, পাগল, ছিন্নমূল মানুষের অবাধ চলাফেরা বেড়েছে, এতে একদিকে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় বিব্রতকর অবস্থায়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক চলাফেরা বিঘ্নিত হচ্ছে। ভিক্ষুকের আড়ালে লুকিয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে অপরাধী চক্রের। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে কতৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

সংস্কৃতির রাজধানীর খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ভিক্ষুকরা অবস্থান নেয়। শহীদ মিনার, ডেইরি গেইট, নতুন কলা ভবন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী, বটতলাসহ যেসব জায়গায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াত বেশি, সেসব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অবস্থান নেয় তারা। ক্লাস থেকে বের হতেই ‘বাবা আমারে দুইডা টাকা দেন’, ‘স্যার কয়ডা টাকা দেন ভাত খামু’- এরকম আকুতি শুনতে হয় প্রায় সব শিক্ষার্থীকে। এছাড়াও কিছুদিন থেকে ২-৩ জন পাগলকেও ছোটাছুটি করতে দেখা যাচ্ছে।

শহীদ মিনারে বারবার হাত পেতে টাকা চাইছিল একজন বৃদ্ধা। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিক্ষা করেন তিনি। সেন্ট্রাল ফিল্ডে আনুমানিক ৫ বছরের এক শিশু ভিক্ষা করা অবস্থায় বললো, ‘মোরে কিছু টেহা দেও, মুই ভাত খামু, মোর মা বেমার (অসুস্থ), মোর বাপ মরা গেছে।’ থাকে কোথায় জিজ্ঞেস করা হলে সে বলে, ‘মুই মোর মায়ের লগে থাহি। মা আজ বেমার তাই মুই বের হইছি। মোর খালার লগে এখানে আইছি। খালা বইয়া আছে ওইদিকে, টাকা উঠান শ্যাষ হইলে লইয়া যাবো সাথে কইরা।’

সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৯তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মোঃ সিফাতুল্লাহ বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সবসময় ভিক্ষুক ছিল, শিক্ষার্থীরা মানবিক দিক বিবেচনা করে সাহায্য করে। তারা রাস্তার পাশে থেকে ভিক্ষা করতে পারে কিন্তু অনেকে ক্লাস চলাকালীন অবস্থায় ঢুকে পড়েন। এটা একই সাথে বিরক্তির কারণ আবার উদ্বেগেরও বিষয়। কোন ফর্ড যাতে ভিক্ষার নামে এসে অপকর্ম করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৫১তম আবর্তনের আরেক শিক্ষার্থী অমি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের চাহিদার চেয়ে অর্থ কম, তার উপর এতো এতো ভিক্ষুককে অনুগ্রহ দেখানো আমাদের পক্ষে অসম্ভব। তাই এটা একটা সমস্যায় পরিণত হয়েছে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে ক্যাম্পাসের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে তো বহিরাগত নিষিদ্ধ নয়, নিষিদ্ধ হলে আমরা ব্যাবস্থা নিতে পারতাম। আর ভিক্ষুকের আড়ালে কে অপরাধী সেটা বোঝা কষ্টকর। গত পরশু দিন আমরা পরিসংখ্যান এর সামনে থেকে একজনকে ধরে নিয়ে আসলাম। আসলে তাদের উদ্দেশ্য হলো কেউ না থাকলে ভিতরে যা কিছু পাবে তাই নিয়ে যাবে। ডিপার্টমেন্টের ভিতরে এবং বাইরে গার্ড থাকে, তাদের এবিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।’