Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস জাবিতে পূর্ব নির্ধারিত প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে তড়িঘড়ি নিয়োগ বোর্ড

জাবিতে পূর্ব নির্ধারিত প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে তড়িঘড়ি নিয়োগ বোর্ড

74

জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক পদে উপাচার্যের আত্মীয়কে নিয়োগ দিতে তোড়জোড় চলছে। পছন্দের ঐ প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে উপাচার্যের পক্ষ থেকে চাপ দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ শওকত হোসেন। বিভাগের একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গত ২২ জুন ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন ডিন অফিসে এক আলাপচারিতায় বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ শওকত হোসেন পছন্দের ঐ প্রার্থীর নাম উল্লেখ করে বলেন, এবারের নিয়োগে তাকেই নিয়োগ দিতে হবে। কারণ তিনি উপাচার্যের ভাগ্নী। এসময় ডিন অফিসে বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

উপাচার্যের পছন্দের ঐ প্রার্থীর নাম আয়েশা সিদ্দিকা আরশি। তিনি ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। সম্পর্কে আরশি উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের ভাগ্নি।

বিভাগের চেয়ারম্যানের এহেন মন্তব্যে বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতির আভাস পেয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষকেরা। তাদের ভাষ্যমতে, সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। আবেদন গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচিং শাখা আবেদন গুলো সর্টিং করে ক্যান্ডিডেটদের একটি তালিকা প্রস্তুত করেন। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাধারণত এক থেকে দেড় সপ্তাহ সময় লাগে। এরপর টিচিং শাখা সেই তালিকাটি বিভাগে প্রেরণ করলে বিভাগ থেকে পুনরায় সর্টিং এর মাধ্যমে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হয় এবং পরবর্তীতে নিয়োগ বোর্ড আহ্বান করা হয়।

নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্তের আগেই যদি এরকম একজনকে বাছাই করে ফেলা হয়, তাহলে নিয়োগটি স্বচ্ছ থাকে না। তারা আরো বলেন, এখানে রেজাল্ট ভালো, ভাইবা বোর্ড এ যে ভালো করবেন তিনিই নিয়োগ পাবেন এই ক্রাইটেরিয়াতেই নিয়োগ হওয়ার কথা। কিন্তু স্বজনপ্রীতি করে একজনকে এগিয়ে দেয়া হবে আবার অন্যজনকে পেছানো হবে, এভাবে তো হতে পারে না।

পাশাপাশি একজন চেয়ারম্যানের শেষ কার্যদিবসেই কেন তড়িঘড়ি করে নিয়োগ বোর্ড বসানো হবে এই নিয়েও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎকন্ঠার শেষ নেই।

জানা যায়, বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের আবেদনপত্র গ্রহণের সময়সীমা ছিলো ১ জুন থেকে ১৮ জুন। এরপর ২৫ জুন নিয়োগ বোর্ডের সার্কুলার ঘোষণা করা হয়। চলতি মাসের (জুলাই) ৫ তারিখে নিয়োগ বোর্ড বসবে বলে জানা যায়।

আরো জানা যায়, আগামী ৬ জুলাই সভাপতি হিসেবে মোহাম্মদ শওকত হোসেনের শেষ কার্যদিবস। গত ২০ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চুক্তিভিত্তিক) রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে জানানে হয়, আগামী ৮ জুলাই থেকে বিভাগের সভাপতি দায়িত্ব পালন করবেন সহযোগী অধ্যাপক মো. ইউসুফ হারুন। সভাপতি হিসেবে মোহাম্মদ শওকত হোসেনের মেয়াদ শেষের মাত্র একদিন পূর্বে নিয়োগ বোর্ড বসানোকেও ত্রুটিপূর্ণ মনে করছেন অনেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, মোহাম্মদ শওকত হোসেন সম্প্রতি প্রফেসরশিপের জন্য আবেদন করেছেন। তার প্রোফেসরশিপের বিনিময়ে উপাচার্যের আত্মীয়কে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার গোপন চুক্তি হয়েছে।

শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে বিভাগের শিক্ষক মো. ইউসুফ হারুন বলেন, একটা নিয়োগ বোর্ডের কাজ এত দ্রুত কিভাবে সম্পন্ন হয় এ নিয়ে আমি সন্দিহান। বিভাগের চেয়ারম্যান এর লাস্ট ওয়ার্কিং ডে তে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ বোর্ড বসা নিয়ে আমি বিস্মিত ও কিছুটা অপমানিত বোধ করছি। যেখানে দুই দিন পর আমি বিভাগের চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব নিব, সেখানে এর আগেই কেন নিয়োগ দিচ্ছে এবং কেন এতো তাড়াহুড়ো তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আয়েশা সিদ্দিকা আরশি জাবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মেহের নিগার কবিতার ভাতিজি। মেহের নিগার উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের নিকটাত্মীয় এবং সম্পর্কে বোন। তিনি আয়েশা সিদ্দিকা আরশির আপন চাচী। অধ্যাপক মেহের নিগার ছাত্রাবস্থায় ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন। পরবর্তীতে তিনি বিএনপির শিক্ষক রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তার স্বামী মনোয়ার হোসেন ১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান হল ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন এবং শাখা ছাত্রদলের সংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আরশির পিতা প্রয়াত আরজু মিয়া মিরপুরের স্থায়ী বাসিন্দা এবং বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

এবিষয়ে জানতে বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শওকত হোসেন ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমের সাথে সাংবাদিকরা যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তাদেরকে মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও কেউই সাড়া দেননি।