Home জাতীয় জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতির শিকার গর্ভবতী মায়েরা

জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতির শিকার গর্ভবতী মায়েরা

42

ডেস্ক রিপোর্টঃ রাজধানীর রামপুরার একটি বাসায় থাকেন ব্যাংক কর্মকর্তা সানজিদা খাতুন (ছদ্মনাম)। ২০১৯ সালে গর্ভে সন্তান ধারণ করেন তিনি। কিন্তু সন্তান ধারণের দুই মাস পর ডাক্তার জানান, গর্ভের ভ্রূণ নষ্ট হয়ে গেছে। কারণ হিসেবে ডাক্তার জানিয়েছেন, ঢাকার রাস্তার বিষাক্ত ধুলোবালুর কারণে এই ভ্রূণের ওপর চাপ পড়েছে। সারা দিনের অফিস শেষে রিকশায় করে বাসায় যাওয়ার পথে নিঃশ্বাসের সঙ্গে দূষিত বায়ু ঢুকে ভ্রূণকে সংক্রমণ করে, যার কারণে গর্ভের ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন, শেষ পর্যন্ত মানসিক ডাক্তারের কাছে যেতে হয় সানজিদাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের এমন মারাত্মক কারণগুলো আঘাত করছে নারীকে। শুধু দূষিত বায়ু নয়, মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা, মাটির গুণমানের পরিবর্তন, জমিনে কীটনাশক প্রয়োগ প্রভৃতির কারণেও গর্ভের ভ্রূণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গবেষকেরা বলছেন, বায়ুদূষণ ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে জলবায়ুবিষয়ক তীব্রতা অনেকটাই বেড়েছে। আর এই তীব্রতা প্রসূতি, ভ্রূণ ও নবজাতকের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ২০২০ সালে আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এক পর্যালোচনার পর জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বায়ুদূষণ ও উষ্ণায়ন প্রসূতি, ভ্রূণ ও নবজাতকের স্বাস্থ্যঝুঁকি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়িয়ে দিয়েছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা ও কার্বন নিঃসারণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জনস্বাস্থে্য জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। মোটরগাড়ির ধোঁয়া, জীবাশ্ম জ্বালানি, কাঠ পোড়ানো ও দাবানলের ধোঁয়া বায়ুর গুণমান হ্রাস করছে। এর ফলে জনসংখ্যা যেমন—গর্ভবতী নারী ও গর্ভস্থ ভ্রূণ সবচেয়ে বেশি হৃদরোগ, শ্বাসযন্ত্রের রোগ ও মানসিক চাপের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে। ক্যালিফোর্নিয়া পরিবেশ সুরক্ষা বিভাগের বায়ু ও জলবায়ু মহামারি বিভাগের প্রধান ও জামা স্টাডির অন্যতম গবেষক রুপা বসু বলেন, বায়ুদূষণের সঙ্গে জড়িত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কণা মায়ের ফুসফুসে পৌঁছাতে সক্ষম, যা তাদের ফুসফুসের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে। এসব কণা প্লাসেন্টায় পৌঁছে প্রদাহ তৈরি করে, যা গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস ও প্রি-অ্যাকলেমসিয়ার জন্য দায়ী। অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া গর্ভবতীর মানসিক চাপ বাড়িয়ে ঝিমুনি থেকে শুরু করে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের জন্যও দায়ী হতে পারে।

সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় দেখা যায়, এখানকার পুরুষদের অধিকাংশই লবণের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। শুকনো মৌসুমে তারা লবণ সংগ্রহ ও বিক্রি করে থাকেন। প্রতি মণ অপরিশোধিত লবণ বিক্রি হয় ৫০০-৬০০ টাকার মধ্যে। যারা লবণের ব্যবসা করেন না, তাঁরা শহরে গিয়ে অন্য কিছু করেন। লবণের প্রভাব বিষয়ে আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানী ড. মানজুর হানিফি জানান, সাধারণত একজন সুস্থ মানুষ দিনে ৫ গ্রাম লবণ খেলেও সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার মানুষ খায় ১৬ গ্রাম। সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা থেকে যারা ২০ কিলোমিটার দূরে থাকেন, তাদের চেয়ে এখানে গর্ভের বাচ্চা মারা যাওয়ার হার দেড় গুণ বেশি, যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল তথা খুলনা, সুন্দরবনেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সম্প্রতি গ্লাসগোতে এক জলবায়ু সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কার্বন নিঃসারণকারী গুরুত্বপূর্ণ উন্নত দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুত তহবিল ছাড় না করায় ঝুঁকিপূর্ণ দরিদ্র দেশগুলোকে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে নারীদের দুর্বলতাগুলো মোকাবিলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের জন্য জায়গা তৈরি করাটা জরুরি। বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে একেবারে তৃণমূল থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করেছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত নীতি ও কৌশলে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করতে জাতীয় জলবায়ু পরিবর্তন ও জেন্ডার অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করার কথাও জানান তিনি।-ইত্তেফাক